উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিল দীপ। হঠাত্ই শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়। বাড়ি ফিরে ভার হয়ে আসে শরীর, ফুলে যায় পা। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ল কিডনির সমস্যায় ভুগছে দীপ। অবস্থা এমনই যে, কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই।
দিল্লি প্রবাসী, ২৮ বছরের ফুলশ্রীর সমস্যাও একই। ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, কিডনির সমস্যা প্রায় প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছিল। দু’জনেরই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে কলকাতায়।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কম বয়সীদের মধ্যে কিডনির সমস্যা কী ভাবে বাড়ছে, তা সামনে আসে। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ফর্টিস হাসপাতালের তরফে ইউরোলজিস্ট শিবাজী বসুর বক্তব্য, বর্তমান ‘লাইফস্টাইল’ই কিডনির সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। নেফ্রোলজিস্ট অরূপরতন দত্ত জানান, কিডনির রোগের মূল সমস্যাই হল, তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তখন প্রতিস্থাপন ছাড়া গতি থাকে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করালে সমস্যা কিছুটা হলেও এড়ানো সম্ভব।
এক বিমা সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, এ দেশে ২৫-৪৫ বছর বয়সীদের এই রোগ বেশি হচ্ছে। কয়েক বছর আগে মহিলাদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বেশি ছিল। এখন অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির সমস্যার শেষ সুরাহা হতে পারে প্রতিস্থাপনই। কিন্তু তা নিয়ে ভুল ধারণার অভাব নেই। এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় দাতা পাওয়া। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপহীন একই গ্রুপের রক্তের কিডনিদাতা পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তেই হয়। এমনটা আকছারই ঘটে যে, কিডনিদাতার অভাবে ডায়ালিসিস চলতে থাকে রোগীর। দাতার অপেক্ষায় থেকে রোগীর মৃত্যু ঘটেছে, এমনটাও দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, কিডনি দান নিয়ে মানুষের মনে নানা ভয়ও আছে।
শিবাজীবাবুর কথায়, ‘‘অনেকের অন্ধ বিশ্বাস, একটা অঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকলে পরবর্তী জীবনে সমস্যা হতে পারে। আবার অনেক মহিলার ধারণা, কিডনি দান করলে সন্তানধারণে সমস্যা হবে। কোনওটাই ঠিক নয়। দাতার দু’টি কিডনির মধ্যে যদি একটা বেশি ভাল ও একটা কম ভাল হয়, আমরা কম ভালটাই প্রতিস্থাপনের জন্য নিই।’’
জন্মের সময়ে যে শিশুদের ওজন কম থাকে, তাদের কিডনি একটু কমজোর হয়। আবার মোটা হওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধিও কিডনির সমস্যার অন্যতম কারণ। একটাই কিডনি নিয়ে জন্মেছেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এখন অনেকেই সারাক্ষণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে কাজে অভ্যস্ত। তাই কম তেষ্টা পায়। জলও কম খাওয়া হয়। এটাও বহু ক্ষেত্রে সমস্যার উৎস। এ দিন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উঠে আসে সচেতনতা বৃদ্ধির নানা উপায়। উদ্যোক্তাদের তরফে মাধব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিয়মিত রক্তপরীক্ষা, তেষ্টা পেলেই জল খাওয়া, জাঙ্কফুড ত্যাগ— এটাই সুস্থ থাকার মূল কথা।’’
আরও পড়ুন: ওজন বাড়ছে? নিয়মিত খান গরম জল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy