ছবি: সংগৃহীত।
ডেঙ্গি নাকি ফিভার উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, প্রেসক্রিপশনে কী লেখা উচিত তাই নিয়ে মতভেদ থাকলেও এডিস ইজিপ্টার দংশনে আর্বোভাইরাসেরা আমজনতা থেকে চিকিৎসক, মায় রাজনীতিবিদ— সবাইকেই নাকাল করে ছাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, (তথ্য- মেডস্কেপ) শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন ট্রপিক্যাল কান্ট্রিতে প্রতি বছর প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন (৩৯ কোটি) মানুষ ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ৯৬ মিলিয়নের অসুখ গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছয়। দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে ওঠে। ডেঙ্গি ভাইরাস (DENV)-এর চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। এদের মধ্যে DEN-2, DEN-4 ভাইরাসের সংক্রমণ সিভিয়ার, অর্থাৎ মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনে। প্রবল জ্বর, বমি, পেটে ব্যথা, সঙ্গে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট ও ঝিমিয়ে পড়া— এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করানো দরকার।
নির্দিষ্ট ওষুধ নেই
কোনও অ্যান্টিভাইরাল দিয়ে ডেঙ্গির ভাইরাসদের দমিয়ে রাখা যায় না। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করে রোগীর কষ্ট কমানো হয়। তীব্র জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনও ওষুধ না দেওয়াই ভাল। আর জ্বর হলে ডায়েরিয়ার মতোই শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। তাই বারে বারে অল্প অল্প করে জল না দিলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। জ্বরের সঙ্গে মাথা ও গা হাত পা ব্যথার তীব্রতা থাকলেও ব্যথার ওষুধ মানা। গলা ব্যথা বা সর্দি কাশি হলে গরম জলে গার্গল করা ছাড়া গতি নেই। প্রয়োজনে সেকেন্ডারি ইনফেকশন প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলে কষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুন: কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন ডেঙ্গি হতে পারে?
নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে ভুলবেন না
বাচ্চাদের ইদানীং নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয়। তাই ডেঙ্গি জ্বরই হোক বা ভাইরাল ফিভার, ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু মাঝবয়সী ও প্রবীণদের সিওপিডি বা অ্যাজমা বা অন্য কোনও ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ থাকলে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। ডেঙ্গি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে দুর্বল ফুসফুস আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বিশেষত, বেশি বয়সে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ডেঙ্গি ভাইরাসের সঙ্গে নিউমোনিয়ার জীবাণুর সংক্রমণ হলে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। ডেঙ্গি জ্বরে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে শুরু করায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে সিভিয়ার ডেঙ্গি হলে ক্যাপিলারি (রক্তজালিকা) লিকেজ হয়ে ফুসফুসে জল জমতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বিশেষ করে যাদের ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ রয়েছে তাদের এই অসুবিধার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি জ্বরে অ্যাসপিরিন খেলে বিপদ বাড়বে
শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কী করবেন
শুরুতেই সাবধান হলে অনেক জটিল পরিস্থিতি এড়ানো যায়। হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সাবধান হতে হবে। পর্যাপ্ত জলপানের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় টেস্ট করানো দরকার। সর্দি-কাশি, কাশির দমকে বুকে ব্যথা, কফ ওঠা এবং শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। অনেক সময় সিভিয়ার ডেঙ্গি হলে বুকে জল জমে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। এই সময়ে রেসপিরেটরি ফেলিওর অর্থাৎ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ক্ষীণ হয়ে যায়। এই অবস্থায় রোগীকে সাময়িক ভাবে ভেন্টিলেটরে রেখে স্থিতিশীল না করলে বিপদের আশঙ্কা প্রতি পদে। সময়মতো ভেন্টিলেটরে দিলে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। অনেক সময় হেমারেজিক শক সিনড্রোম হলে চিকিৎসকদের টিম হাজার চেষ্টা করেও রোগীকে সুস্থ করতে ব্যর্থ হন। তবে ডেঙ্গির ক্ষেত্রে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’, এই আপ্তবাক্য শতকরা একশো ভাগ সত্যি। বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেবেন না। মশার হাত থেকে বাঁচতে শরীর ঢাকা পোশাক পরুন, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy