দিন শেষে লড়াইয়ে ফেরা।
দিনে দুঃখ। বিকেলে স্বস্তি। রাতে উৎসব।
জন্মদিনের বিরাট কোহলিকে বর্ণনা করতে হলে, উপরের এই তিন অভিব্যক্তিই পাওয়া যাবে। সকালে মাত্র চার বলে জন্মদিনের আমেজ কাটিয়ে ক্রিজে তাঁর হতাশবিদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা। বিকেলে দক্ষিণ আফ্রিকার দু’টো ফেলে দিয়ে পরিচিত ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ ভঙ্গিমায় গর্জন। আবার রাতে শিশুসুলভ আচরণ, জন্মদিনের কেক কেটে সতীর্থদের খাইয়ে দেওয়া। সঙ্গে পুরো টিমের শপথ— টেস্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে দীপাবলির ছুটিটা বাড়িয়ে নিতে হবে!
রাতে ভারতীয় সংসার থেকে শোনা গেল, কোহলির জন্মদিনের পার্টি বিরাট হয়নি। ঘণ্টা দেড়েক চলেছে। কোহলি কেক কেটে রবীন্দ্র জাডেজা থেকে অনেককেই খাইয়েছেন। গানের সঙ্গে নেচেছেন কিছুক্ষণ। কিন্তু সে সব নয়। কোহলির জন্মদিনের পার্টির প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বললেন, আসল প্রাপ্তি হল চেনা বিরাটকে ফিরে পাওয়া। যিনি নাকি উৎসবের মধ্যেও ক্রিকেট নিয়ে টুকটাক কথা চালিয়ে গিয়েছেন। শুক্রবার প্রথম সেশনটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আলোচনা করেছেন। আবার টিমে নাকি বলাবলিও চলেছে যে, দেখতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দীপাবলির আগে বাড়ি ঢুকে যাওয়া যায়। সাড়ে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে শেষ করে দিতে হবে টেস্ট। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ধরলে, বিরাটকে পার্টিতে নাকি অসম্ভব স্পিরিটেড দেখিয়েছে। যা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধের আগে প্রবল দরকার ছিল।
অথচ একটা সময় পর্যন্ত এমন রঙিন পার্টি, শপথ-টপথের কথা ভাবাই যাচ্ছিল না। দ্বিপ্রহরের বিরাট মানে তো ছিলেন এক বিবর্ণ সম্রাট, যিনি চার বলের মধ্যে জন্মদিনের ইনিংসটা শেষ করে চলে গেলেন। ডিন এলগারের হাতে ফ্লিকটা চলে যাওয়া যাঁর বিশ্বাস হয়নি, বজ্রাহত হয়ে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন আউট হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। টিভি ক্যামেরার ক্লোজ শটে যে হাহাকারের ছবি দেখা গেল। গুরগাঁওয়ে বিরাটের বাড়িতে ফোন করে যে হাহাকার শোনা গেল।
বিরাটের দাদা বিকাশ নাকি ভাইকে আউট হতে দেখে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধবাক হয়ে গিয়েছিলেন। জন্মদিনের আদরের ‘চিকু’ ভাল কিছু করবে, আশাবাদে টিভি খুলেছিলেন। ভেবেছিলেন, নিজের জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উৎসবটা বিরাট করবেন দেশকে একটা দুর্ধর্ষ ইনিংস উপহার দিয়ে। ‘‘মা-ও ছিলেন আমাদের সঙ্গে। কিন্তু সবাই মিলে বসতে না বসতেই বিরাট কিনা আউট! বাস্তবটা বুঝতেই কিছুক্ষণ লেগে গেল,’’ ফোনে বলছিলেন বিকাশ কোহলি। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘কী আর করা যাবে। একজন ক্রিকেটার তো আর প্রতি ম্যাচে ভাল খেলতে পারে না। যদি কেউ তার বিশেষ দিনে ভাল খেলার আশা নিয়ে মাঠে নামে, সে যে ভাল খেলবেই, এমন কথা নেই। সেটাই হল। এমন অনেক বারই হয়েছে। ভেঙে পড়ছি না, শুধু আফসোস থেকে গেল।’’
বিরাট-পর্ব
টস জিতে হাসিখুশি।
আউট হয়ে বিপন্ন।
আর রাজকুমার শর্মা? কোহলির ছোটবেলার কোচ? লড়াকু ছাত্রের বাস্তববাদী গুরু বাস্তবের দৃষ্টিভঙ্গিতেই ব্যাপারটাকে দেখতে চাইলেন। বললেন, ‘‘ক্রিকেটে এমন আচমকা অনেক কিছুই হতে পারে। বলটা লো হয়ে গিয়েছিল বলেই বিপত্তিটা হল। এমন বলে ব্যাটসম্যানের এ রকম হাল হতেই পারে। গত রবিবার যখন বিরাট আমার কাছে প্র্যাকটিস করতে এসেছিল, তখন বলেছিল মোহালিতে ভাল একটা ইনিংস খেলা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। হয়তো সে জন্যই প্রতিক্রিয়াটা একটু বেশিই হয়েছে।’’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা গেল, ক্যাপ্টেন্সির চাপ কোনওভাবে বিরাটকে কাবু করছে কি না? শুনে মানলেন না রাজকুমার। বললেন, ‘‘না, না, তা কেন হবে? ছেলেটা ২২ বছর বয়স থেকে সিনিয়র লেভেলে ক্যাপ্টেনসি করে আসছে। ও বরং এই ভূমিকাটা উপভোগ করে। এর সঙ্গে ওর আউট হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ ভারতীয় শিবির থেকে পরে বলা হল যে, আউট হয়ে ফিরে ড্রেসিংরুমে কোনও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বিরাটের থেকে। যা ছিল, মাঠেই রেখে এসেছেন। বিশেষ দিন বলে আলাদা চাপ নেননি বিরাট। কিন্তু সব শুনেও মনে হবে, কোহলিকে নিয়ে তাঁর পারিপার্শ্বিকের কথাবার্তায় কোথাও গিয়ে একটা অদৃশ্য দুঃখ মিশে থাকল। প্রাপ্তির বিচারে মোহালি টেস্টের ফার্স্ট ডে গ্যালারির মতোই যেন ব্যাটসম্যান বিরাটকে নিয়ে থেকে গেল অপার শূন্যতা।
ভারত ধন্যবাদ দিতে পারে অশ্বিন-জা়ডেজা স্পিন জুটিকে। দিনের খেলার শেষ প্রহরে টিম বিরাটকে তাঁরা ম্যাচে ফিরিয়েছেন। বার্থডে বয়কে ফিরিয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। অনুষ্কা শর্মা যে শ্যুটিং সেরে এ দিনই দেশে ফেরায় মোহালি এসে তাঁকে ‘উইশ’ করতে পারলেন না, কে জানে সেই আক্ষেপেও হয়তো কিছুটা প্রলেপ দিল অশ্বিনদের স্পিন। একটা ব্যাপারই এখন দ্রষ্টব্য— দুরন্ত ঘূর্ণিতে আসল ‘পার্টিটা’ আজ থেকে চলে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy