বিশ্বসেরা আগেই হয়েছিলেন। এ বার ইউরোপ সেরা হয়ে উয়েফা প্রেসিডেন্ট প্লাতিনির কাছ থেকে পুরস্কার নিলেন রোনাল্ডো। বৃহস্পতিবার মোনাকোয়। ছবি: রয়টার্স
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখন বিশ্বাস করেন, ব্যাপারটা নির্বিবাদে মেনে নেওয়াই ভাল। লিওনেল মেসি না তিনি— শ্রেষ্ঠত্বের যে তুলনা গত সাত-আট বছর ধরে অবিরাম চলে আসছে, সেটা তিনি বন্ধ করতে পারবেন না। মিডিয়া লিখবে। লোকে বলবে। সিআর সেভেন ধরে নিয়েছেন, ওটা তাঁর জীবনেরই অংশ। চেষ্টা করেও আর পাল্টানো যাবে না। ফর্মুলা ওয়ানে মার্সিডিজ না ফেরারি— আলোচনা যেমন আজও থামেনি।
লোকে যখন আজ তাঁকে এলএম টেনের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে দেয়, একটা এল ক্লাসিকো ম্যাচ মানে যখন সেটা অবধারিত দাঁড়ায় পর্তুগিজ বনাম আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার লড়াই, তুলনার তর্কযুদ্ধে না ঢুকে রোনাল্ডো বরং একটা বিশ্বাস মগজে ঢুকিয়ে ফেলেছেন। ভাবতে চেষ্টা করেন, মেসি ক্লাবের জন্য সেরাটা দেয় দেশের জন্য দেয়। তেমন আমিও দিই। ওটা যেমন ওর কাজ, তেমন আমারও। ও যেমন সেরা হতে চায়, আমিও তেমন চাই। কিন্তু আমার পেশায় আমিই সেরা। আমিই শ্রেষ্ঠ। আয়্যাম দ্য বেস্ট!
“আমার আর মেসির মধ্যে কোনও লড়াই নেই। পুরোটাই মিডিয়ার তৈরি,” এক স্প্যানিশ দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার নিজেদের মহাযুদ্ধ নিয়ে বলে ফেলেছেন রোনাল্ডো। এত দিন যে ব্যাপারে যতটুকু যা পাওয়া গিয়েছে তাঁর থেকে, সবই ঠারেঠোরে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। কখনও লিও মেসিকে উদ্দেশ্যে করে কটাক্ষ করেছেন। কখনও বা আবার বিচারের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাঠকে। কিন্তু লিও-র সঙ্গে নিজের যুদ্ধ নিয়ে এত কথা কোনও দিন বলতে শোনা যায়নি রোনাল্ডোকে। সে দিক থেকে বৃস্পতিবার ফুটবলবিশ্বে নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী দিন।
“পেশাদারি জগতে মেসির সঙ্গে আমার দেখা হয়। আর পাঁচ জন ফুটবলারের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক থাকে, ওর সঙ্গেও আমার তাই,” রোনাল্ডো অকপট। কিন্তু সেই সম্পর্ক কেমন? নব্বই মিনিটের বাইরের বৃত্তেও কি সম্পর্কটা থেকে যায়? মাঠের বাইরেও ফুটবলারে ফুটবলারে বন্ধুত্ব হয়, আপনাদেরও কি তেমন? “না, মাঠের বাইরে নেই। কিন্তু সেটাও বা ক’জন ফুটবলারের সঙ্গে থাকে? বলতে পারেন, ফুটবলের দুনিয়ায় ও আমার সহকর্মী। কাজের জায়গায় ও আমার বন্ধু। আমরা কাজ নিয়ে কথা বলি। ও দেশের জন্য, ক্লাবের জন্য সেরাটা দিতে চায়। আমিও তাই চাই। লড়াইটা তাই শুধু মাঠের,” বলে দিয়েছেন সিআর সেভেন। যে ব্যাখ্যার শেষে তাঁর শিরানোমিত সংযোজন, “মার্সিডিজ না ফেরারি, কে বেশি ভাল তা নিয়ে আলোচনা থেমেছে? আমাদেরও তেমনই। থামবে না। ও-ও নিজের প্রোফেশনে সেরা হতে চায়। আমিও চাই। আর আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রোফেশনে, আমার কাজের জায়গায় আমিই সেরা। আমি তার জন্য খাটাখাটনিও করি। মাথার মধ্যে সব সময় ঘোরে যে, আমার চেয়ে ভাল আর কেউ নেই।”
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র হওয়ার পরে যে দল যে গ্রুপে.... সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।
ফুটবল-পৃথিবী তো তা বিশ্বাস করে না। সেখানে বর্তমান ফুটবল-দেবতার সিংহাসন এখনও ভাগাভাগি হয়ে আছে। প্রচুর লোক আছেন যাঁরা ভাবেন, রোনাল্ডো নন, মেসি-ই শ্রেষ্ঠ। ব্যালন ডি’অরের সংখ্যায় শুধু নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সিআর সেভেনের চেয়ে তো এগিয়ে এলএম টেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে টিমকে ফাইনালে তুলেছেন মেসি। রোনাল্ডো পুর্তগালকে প্রথম রাউন্ডের প্রাচীরও টপকে দিতে পারেননি। প্রশ্নে বোধহয় রোনাল্ডো ক্ষুব্ধ সামান্য। “আমি চোট নিয়েও আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। ক্লাবের হয়ে, দেশের হয়ে। বিশ্বকাপে ব্যাপারটা আরও খারাপের দিকে গেল। আসলে সব সময় আপনার জীবনে ভাল সময় চলতে পারে না। আমি জানি চোট আমাকে কতটা ভুগিয়েছে। কিন্তু সে সব নিয়ে ভাবি না। রিয়াল আমার উপর ভরসা রাখে। এত দাম দিয়ে রেখেছে। আমার দেশ, পর্তুগালের হয়ে খেলার অধিকার আমার আছে। আর কী চাই?”
রোনাল্ডো বরং বিশ্বাস করেন, ২০১৪ তাঁর ফুটবল-জীবনের আজ পর্যন্ত সেরা মরসুম। নিজে ভাল খেলেছেন, ক্লাবকে ট্রফি দিয়েছেন। বিশ্বকাপটা বাদ দিলে তো বছরটা স্বপ্নেরই গিয়েছে। “লোকের কথা ভেবে তো আমি ফুটবল খেলি না। সবাইকে আমি খুশি করতেও পারব না। কে কী বলল, না বলল, ভেবে আমি কী করব?”
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো শুধু চান, তিনি যেমন পজিটিভ স্পিরিটে যুদ্ধটাকে দেখে এসেছেন, মেসিও যেন তা-ই করেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্বপ্ন দেখেন, ফুটবল-জীবনের শেষ দিনেও লিও মেসি-র সঙ্গে মাঠের বন্ধুত্বটা তাঁর থাকবে।
চিরাচরিত যুদ্ধের শেষ বিতর্কে নয়, দু’জনে করবেন হাসতে-হাসতে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy