Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
৩২তম সন্তোষ জয় বাংলার

দলগত সাফল্যেই ভারতসেরা বাংলা

আমি যখন কোচ ছিলাম, সে বারও ধরে নেওয়া হয়েছিল বাংলা পারবে না। কেউ ভাবতেই পারেনি মণিপুর, রেলওয়েজের মতো দলকে আমরা হারাতে পারব। কিন্তু শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা।

চ্যাম্পিয়ন: পাঁচ বছর পরে আবার ভারতসেরা বাংলা। জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসলেন মনবীর, মুমতাজরা। গোয়ার মাঠে রবিবার এই ছবি হয়ে থাকল ঐতিহাসিক। পিটিআই

চ্যাম্পিয়ন: পাঁচ বছর পরে আবার ভারতসেরা বাংলা। জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসলেন মনবীর, মুমতাজরা। গোয়ার মাঠে রবিবার এই ছবি হয়ে থাকল ঐতিহাসিক। পিটিআই

সাব্বির আলি
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩৬
Share: Save:

সন্তোষ ট্রফি ফাইনাল

বাংলা ১ : ০ গোয়া

আমি যখন কোচ ছিলাম, সে বারও ধরে নেওয়া হয়েছিল বাংলা পারবে না। কেউ ভাবতেই পারেনি মণিপুর, রেলওয়েজের মতো দলকে আমরা হারাতে পারব। কিন্তু শেষমেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা।

সেটা ২০১১ সালের কথা। এ বারও ঠিক সেই জিনিসটাই দেখলাম। ম্যাচের আগে যাদের সঙ্গে সন্তোষ ফাইনাল নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, সবাই বলেছিল বাংলার কোনও সুযোগই নেই জেতার। গোয়ার দল অনেক বেশি শক্তিশালী। আই লিগে খেলা ফুটবলার আছে। হতে পারে গোয়া এগিয়ে ছিল। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল, বাংলা ভাল লড়াই করবে। রবিবার একশো কুড়ি মিনিট শেষে বলতে পারি একটুও ভুল ভাবিনি।

ফুটবলে ফিনিশিংই তো শেষ কথা। কোনও দল নব্বই শতাংশ বল পজেশন রাখতে পারে। ম্যাচে পনেরোটা সুযোগ তৈরি করতে পারে। দিনের শেষে ফিনিশ না করতে পারলে পরিসংখ্যান কোনও কাজে আসে না। গোয়াও রবিবার বল পজেশনে এগিয়ে ছিল। ছোট্ট ছোট্ট পাস দিয়ে মুভ তৈরির চেষ্টায় ছিল। কাজের কাজটা করল বাংলা। পরিসংখ্যানের ওপর নজর না দিয়ে ম্যাচটা জেতায় মন দিল।

ফাইনালে শুরুটা বেশ ভাল করেছিল গোয়া। কিন্তু প্রথম পনেরো মিনিটের পরে বাংলা খুব সুন্দর একটা দলগত পারফরম্যান্স উপহার দিল। যেখানে ডিফেন্স জমাট ছিল। মাঝমাঠ ক্রমাগত পাস বাড়াচ্ছিল। আবার ফরোয়ার্ড একের পর এক সুযোগ তৈরির চেষ্টায় ছিল।

আরও পড়ুন: ফয়সালার টেস্টে চোখ রাঙাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াই

রবিবার গোয়াকে হারিয়ে সন্তোষ ট্রফি তুললেন বাংলার ফুটবলাররা।

গোটা টুর্নামেন্টে নির্ধারিত সময়ে কোনও গোল খায়নি বাংলা। আমাকে আর আলাদা করে বলতে হবে না বাংলার ডিফেন্স ঠিক কতটা ভাল খেলেছে। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল না করতে পারলে কেউ মনে রাখে না আগের ফলগুলো। তাই বলব আসল পরীক্ষাতেও লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করল বাংলা ডিফেন্স। সেন্টার ব্যাকে রানা আর প্রভাত যেমন খুব নীচে নেমে খেলছিল। খুব বেশি প্রেস করেনি। গোয়াকে বল ধরতে দিচ্ছিল। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে মুভ তৈরি করতে দেয়নি। গোয়ার ফরোয়ার্ডরা পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে থাকলেই কড়া ট্যাকল করছিল দুই সেন্টার ব্যাক। আবার দুই প্রান্তে সন্তু সিংহ আর সামাদ গোয়ার উইং প্লে থামাচ্ছিল। কোনও ক্রস বাড়াতে দিচ্ছিল না।

মাঝমাঠও বেশ ভাল সাপোর্ট দিয়ে গেল। মুমতাজ আর ফৈয়াজ নেমে মাঝে মাঝে রক্ষণে আসায় গোয়ার ফরোয়ার্ডরা বেশি দূর এগোতে পারেনি। নিজেদের হাফেই গোয়াকে আটকে রেখেছিল বাংলা। দরকার পড়লে ডিফেন্সে লোক বাড়াচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের পর তো হাতেগোনা কয়েকটা সুযোগ তৈরি করেছে গোয়া। বাংলার গোলকিপার শঙ্কর রায়কে খুব একটা কিছু করতে হল না। নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে একটা বল বাঁচাল। ব্যস ওইটুকুই।

টাইব্রেকার অবধি ম্যাচটা যাবে না সেটা আমার মনে হয়েছিল। কিন্তু গোলটা একস্ট্রা টাইমের ১১৯ মিনিটে আসাতেই অবাক হলাম। বাংলা যা সুযোগ তৈরি করেছে আরও আগেই ম্যাচ শেষ করতে পারত। গোটা ম্যাচে মনবীর সিংহ কিন্তু খুব বেশি কিছু করেনি। তবে একস্ট্রা টাইমে মনবীরের গোলটা খুব ভাল ছিল। রোনাল্ডের পাসে একটা টাচ নিয়েই শটটা মারল মনবীর। শটে জোর ছিল। প্লেসমেন্টও ছিল সঠিক। বাংলা ডিফেন্স যতটা ভাল খেলেছে, ফরোয়ার্ডরা তত ভাল করতে পারেনি। আরও সুযোগ নেওয়া উচিত ছিল। বসন্ত সিংহ যেমন খুব ভাল খেলেছে। সুন্দর কয়েকটা শট মারল। ড্রিবল করে আক্রমণ তৈরি করার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু সোজা কয়েকটা গোলের সুযোগ নিতে পারল না।

দিনের শেষে দলগত খেলায় গোয়াকে টেক্কা দিল বাংলা। বাংলার ফুটবলের জন্য এটা দারুণ একটা জয়।

বাংলা: শঙ্কর রায়, সামাদ আলি মল্লিক, রানা ঘরামি, প্রভাত লাকড়া, সন্তু সিংহ, মুমতাজ আখতার, শেখ ফৈয়াজ, রোনাল্ড সিংহ, বিশাল প্রধান(দেবাশিস প্রধান, সান্নিক মুর্মু, মনোতোষ চাকলাদার), বসন্ত সিংহ, মনবীর সিংহ।

অন্য বিষয়গুলি:

Santosh Trophy West Bengal Final Win Champion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE