মাত্র ন’দিন আগে এশিয়া কাপ জয়ের পর এই শহরে এসেছিলেন এম এস ধোনিরা।
বুধবার ফের এলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হেরে।
সেই শহর। সেই দল। কিন্তু চেহারা পুরো আলাদা।
দু’দিন বাদেই ইডেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ, যে ম্যাচে সারা দেশের ক্রিকেট সমাজের মূলমন্ত্র হয়ে ওঠে, ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। বুধবার পাকিস্তান সহজে জেতার পর সেই ম্যাচ নিয়ে উত্তাপ যেন আরও বাড়ছে। আসলে ম্যাচটা যে হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বিশ্বকাপে বেঁচে থাকার ম্যাচ। যেখানে হারলে বিদায় প্রায় নিশ্চিত।
মহাম্যাচের দু’দিন আগে ভারতীয় শিবিরের মেজাজটা আবার অনেকটাই থমথমে। কলকাতায় আসার বিমানে বা বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে টিম বাসের মধ্যে সেই হইচই উধাও!
টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে ‘ফাজিল’ বলে কুখ্যাত যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহদের সেই ইয়ার্কি-ঠাট্টা কোথায়? তাও উধাও!
জানা গেল, টিম বাসে বসে বরং নিজের ট্যাবে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দেখায় মন দেন যুবি। নিজের সিট থেকে উঠে এসে যোগ দেন আশিস নেহরাও।
গোমড়া মুখে টিম বাসের সামনে সিঙ্গল সিটে বসে থাকতে দেখা গেল তাঁদের প্রেরণার উৎস রবি শাস্ত্রীকেও।
জানা গেল, ধোনি সেই যে নীল সানগ্লাস চোখে দিয়ে বিমানে বসলেন, তা আর খুললেনই না। বিমান সফরে নাকি কারও সঙ্গে কথাই বলেননি। টিম বাসে তিনি বরাবরের মতো একদম পিছনের সিটে। একেবারে চুপচাপ। বিমানে আবার সাধারণ যাত্রীরা সই-সেলফি নিতে গেলে নাকি বেশ বিরক্তই হচ্ছিলেন তাঁদের প্রিয় ক্রিকেট তারকারা। যা ছিল ন’দিন আগে ঢাকা ফেরত দলের ছবিটার ঠিক উল্টো।
মেগাম্যাচ খেলতে শহরে চলে এলেন কোহালি-যুবরাজরা। বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরে।-উৎপল সরকার
এই টিম বাসই এ দিন যখন ধোনিদের এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাচ্ছিল, তখন নিউটাউনের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে। পরে অবশ্য অন্য বাস পাঠানো হয়। ঘটনাটার কথা শুনে এক সিএবি শীর্ষকর্তার কুসংষ্কারাচ্ছন্ন আশঙ্কা, এই দুর্ঘটনা ভারতীয় দলের এই কলকাতা সফরের কোনও অশুভ ইঙ্গিত নয় তো?
ভারতীয় দলে বোধহয় তার চেয়ে বেশি আশঙ্কা ভক্তদের আব্দার-অনুরোধ নিয়ে। বিমানেই যাত্রীরা পাকিস্তান ম্যাচে জয়ের আব্দার নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন প্রিয় ক্রিকেটারদের কাছে ঘেঁষতে। কিন্তু সেই সুযোগই ক্রিকেটাররা দেননি।
বিমানে কয়েকজন সইশিকারির হাত থেকে পরিত্রান পেতে বিরাট কোহালিকে নাকি জানলার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওই দেখুন, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে সিটে বসে পড়ুন। পরে সই দেব।’’ এয়ার হোস্টেসদের দিয়ে ঘোষণা করানো হয়, ‘‘প্লিজ, ইন্ডিয়া টিমের কোনও ক্রিকেটারকে বিরক্ত করবেন না।’’
নাগপুরে বিমানে ওঠার আগেই নাকি যুবরাজরা জেনে গিয়েছিলেন পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুশো তুলে ফেলেছে। কলকাতায় নামার পর পেয়ে গেলেন আফ্রিদিদের জয়ের খবর। যা ভারতীয় শিবিরে চাপ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
তাই এখন যে করেই হোক, নাগপুরের হারের কথা ভুলতে চান ধোনির দলের ছেলেরা। অজিঙ্ক রাহানে-সুরেশ রায়নারা পরিচিত সিএবি কর্তার মুখে নাগপুরের কথা শুনেই বলে দিলেন, ‘‘ওসব কথা আর বলবেন না। ওই ম্যাচটা ভুলতে চাই, এখন আমাদের সামনে শুধু ইডেনে পাকিস্তানকে হারানো।’’
বুধবার বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়ে টিম বাসে সবাই ওঠার পর ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে নাকি খোঁজ নেওয়া হয়েছিল যে, বৃহস্পতিবার সকালের স্লটে ইডেনে অপশনাল প্র্যাকটিস রাখা যাবে কি না। কিন্তু যখন জানতে পারেন পাকিস্তান সকালে প্র্যাকটিস স্লট বুক করে ফেলেছে, তখন বেশ অবাকই হন তাঁরা। আগের দিন ম্যাচ খেলার পরের সকালেই আফ্রিদিরা প্র্যাকটিস করতে চান শুনে অবাক হওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক। সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ। তাই অগত্যা বেলা বারোটার পর হাল্কা ঐচ্ছিক প্র্যাকটিস হবে বলে ঠিক হয় ভারতীয় শিবিরে।
তেড়েফুঁড়ে পাকিস্তান-বধের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া যে সামনে আর কোনও রাস্তা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy