সিএবি-তে নিজের ঘরের সামনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর নিকটতম পদপ্রার্থী আর নেই। অমিত শাহ পুত্র ছিটকে গিয়েছেন। ক্রিকেট প্রশাসনে তিন বছর হয়ে গিয়েছে জয় শাহ-র। লোঢা সংস্কার মেনে এখন তাঁকে যেতে হবে কুলিং অফে। হিসেব মতো, এর পর বঙ্গসন্তানের কোনও অসুবিধে থাকার আর কথা নয়। প্রধান প্রতিপক্ষই তো রিংয়ের বাইরে চলে গেল!
অসুবিধের কথা নয়, কিন্তু হচ্ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতেই পারেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার লোঢার নয়া যে বিধান বার হয়েছে, তাতে তাঁর বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ দাঁড়াচ্ছে মোটে চার মাস!
পড়ার ভুল নয়। লোঢা কমিশনের নয়া বিধানে সৌরভ ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে পারবেন আগামী জুন পর্যন্ত। তার পর তাঁকে চলে যেতে হবে কুলিং অফে। তিন বছরের জন্য। তাই মার্চে বোর্ড নির্বাচনে সৌরভ প্রেসিডেন্ট হলে, তাঁর মেয়াদ হবে মার্চ থেকে জুন।
অর্থাৎ, চার মাস।
শুধু সৌরভ আক্রান্ত নন, বৃহস্পতিবার বার হওয়া লোঢা বিধানে গোটা দেশের ক্রিকেটমহলেই অদ্ভুত এক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। যেখানে ক্রিকেট প্রশাসন চালানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না। সিএবি যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়া একটা নাম হতে পারতেন। মুশকিল হল, তাঁর সিএবিতে দাঁড়ানো নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু বোর্ড পদাধিকারী হতে হলে দু’টো বার্ষিক সভায় উপস্থিত থাকতে হয়। অভিষেক সেখানে আটকে যাচ্ছেন। একমাত্র সৌরভ। কিন্তু চার মাসের বেশি নয়।
সেই বিধান
• বোর্ড বা রাজ্যে কারও তিন বছরের মেয়াদ শেষ না হলে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু থাকতে পারবেন তিন বছর পর্যন্তই।
মানে তিন বছর পূর্ণ হতে যে ক’মাস বাকি, সেই ক’মাস। তার পর চলে যেতে হবে কুলিং অফ পিরিয়ডে।
• বোর্ড বা রাজ্যে অথবা দু’টো মিলিয়ে সর্বোচ্চ থাকা যাবে ন’বছর। তার পর দেশের কোনও ক্রিকেট প্রশাসনের কোথাওই থাকা যাবে না।
• বাতিল কর্তারা বোর্ড বা রাজ্যে কোনও পদেই থাকতে পারবেন না। সংস্থার মনোনীত সদস্য, পেট্রন বা উপদেষ্টা হিসেবেও নয়।
• কোনও রাজ্য সংস্থার নিজস্ব গঠনতন্ত্রে সহ-সচিব, সহ-কোষাধ্যক্ষ, ডিরেক্টর পদ অফিস বিয়ারার হিসেবে
উল্লেখ করা থাকলে নতুন নিয়মে তাকে প্রশাসনিক মেয়াদের মধ্যেই ধরা হবে।
বোর্ডমহলে কেউ কেউ বলছেন, অসুবিধে কী? চার মাসের জন্যই দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া ভাল। তার পর না হয় মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা যাবে আদালতের কাছে। তা ছাড়া আগামী চার মাসে ভারতীয় ক্রিকেটে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারস্যাপার আছে। আইপিএল টেন্ডার আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রতিনিধিত্ব করা আছে। আইসিসিতে ভারতীয় বোর্ডের নমিনি ঠিক করাও আছে। আর একবার আইসিসিতে ভারতীয় বোর্ডের নমিনি যদি তিনি হয়ে যান, তখন কুলিং অফের ব্যাপারটাও আর খাটবে না। তা হলে খামোখা ছেড়ে দেবেন কেন সৌরভ? বরং আইপিএল টেন্ডারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারলে আদালতে আবেদন করা যেতেই পারে, মেয়াদ বাড়ানোর। বলা যেতেই পারে, ক্রিকেট প্রশাসনে আর লোকই পড়ে নেই। সৌরভকেও চলে যেতে হলে বোর্ড চালাবে কে?
এত দিন আদালত-বান্ধব গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলে আসছিলেন যে, সৌরভের বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনও অসুবিধে নেই। জিতলে, পূর্ণ তিন বছরের মেয়াদই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন। কিন্তু এ দিন লোঢা বিধানে সব পাল্টে যায়। শোনা গেল লোঢা নাকি বলে দিয়েছেন যে, সেক্ষেত্রে ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভের টানা সাড়ে পাঁচ বছর হয়ে যাবে। যা সম্ভব নয়। রাতে সিএবিতে সৌরভ বলছিলেন, ‘‘লোঢা আইন মানতেই হবে। সবাইকেই মানতে হচ্ছে, আমাকেও হবে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কী আছে, ছ’মাস থাকব। সিএবি ছেড়ে আর কোথায় যাব?’’ যা খবর, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সিএবি নির্বাচনে সৌরভ দাঁড়াচ্ছেন। তার পর সামনে থাকবে বোর্ড নির্বাচন।
এবং বোর্ড প্রশাসনের দুর্দশার ছবিটা সিএবিতেও প্রকট হচ্ছে। বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আরও বেশি শূন্যতা তৈরি হয়ে গেল। ক্রিকেট প্রশাসনে থাকার মতো কাউকে তো পাওয়াই যাচ্ছে না।’’ ঠিকই। এ দিনের পর বোর্ডে যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, সিএবিতেও যাচ্ছে না। এ দিন সিএবিতে সিনিয়রদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছিলেন সৌরভ। আর সেখানে যে সৌরভ-পরবর্তী কোনও নাম পূর্ণ মেয়াদের জন্য পাওয়া গিয়েছে, এমন খবর নেই!
খুব সহজে, চরম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি। দেশে। রাজ্যে। তবে এ দিনের লোঢা বিধান কিছু কিছু জিনিস সুনিশ্চিত করে দিয়ে গিয়েছে। যেমন, অপসারিত বোর্ড সচিব অজয় শিরকে। আজকের পর থেকে বোর্ড বৈঠকে তিনি মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। রাজীব শুক্লকেও আইপিএল চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হবে। এঁদের প্রত্যেকের ক্রিকেট প্রশাসনে ন’বছর হয়ে গিয়েছে। আজকের পর এঁদের প্রশাসনিক জীবন শেষ। আজকের পর আরও একটা জিনিস শেষ। একটা যুদ্ধ। বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে এত দিন যেটা দিনের পর দিন শিরোনাম দিয়ে গিয়েছে মিডিয়াকে।
প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বনাম কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। লোঢার নয়া বিধান যদি সৌরভের বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে বিধিনিষেধের কাঁটাতার সৃষ্টি করে থাকে, তা হলে আরও একটা জিনিস করল। নতুন লোঢা বিধান বলে দিল, রাজ্য সংস্থায় সহ-সচিবের পদকে ন’বছরের প্রশাসনিক মেয়াদে ধরা হবে। শিরকে-শুক্লর মতো বিশ্বরূপকেও ক্রিকেট প্রশাসন থেকে অতীত করে দিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy