Advertisement
E-Paper

দ্রোণাচার্যের তির অর্জুনের দিকে

মহাভারতে যা হয়নি তা এ বার ঘটতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলে। যেখানে দ্রোণাচার্যের তিরের মুখে অর্জুন! বুধবার বিকেলে যখন গোটা কলকাতা ভূমিকম্পের জেরে ত্রস্ত, তখনই ভারতীয় ফুটবলকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিলেন দেশের একমাত্র ‘দ্রোণাচার্য’ ফুটবল কোচ নইমুদ্দিন।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২১
Share
Save

মহাভারতে যা হয়নি তা এ বার ঘটতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলে। যেখানে দ্রোণাচার্যের তিরের মুখে অর্জুন!

বুধবার বিকেলে যখন গোটা কলকাতা ভূমিকম্পের জেরে ত্রস্ত, তখনই ভারতীয় ফুটবলকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিলেন দেশের একমাত্র ‘দ্রোণাচার্য’ ফুটবল কোচ নইমুদ্দিন। যার নেপথ্যে জড়িয়ে আবার পাঁচ বছর আগের এক ভূমিকম্প।

‘অর্জুন’ ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়ার দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েছেন ‘দ্রোণাচার্য’ নইমুদ্দিন। যেখানে তিনি রেয়াত করেননি এআইএফএফ কর্তাদেরও।

শুধু ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েই খান্ত নন নইম। চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল এবং দিল্লিতে মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনারের অফিসে। সেই চিঠির কপি এখন আনন্দবাজারের হাতে।

ময়দান জানে ভাইচুংয়ের খেলোয়াড়জীবন থেকেই কোচ নইমের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’। এই চিঠি প্রকাশের পর এ বার সেই সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে। সাউথ ক্লাবে বসে এ দিন সন্ধ্যেয় নইম বলে দিলেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলে স্বচ্ছতা আনতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। ৫ অগস্ট চিঠি পাঠিয়েছি। বলেছিলাম চিঠি পাওয়ার চার দিনের মধ্যে ফেডারেশন যেন উত্তর দেয়। আমি জানি ওরা কিন্তু চিঠি দশ তারিখের ভেতর পেয়েছে। তার পর প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলল এখনও জবাব দেওয়ার কোনও তাগিদ দেখায়নি।’’

চিঠিতে ঠিক কী জানতে চেয়েছেন নইম? তাঁর চিঠিতে বছর পাঁচেক আগে সিকিমে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তা উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে, সেই ভূমিকম্পে ভিটেমাটি হারানো মানুষদের ত্রাণ ও পুর্নবাসনের জন্য ভাইচুংয়ের বিদায়ী ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত অর্থ কাজে লাগানোর কথা ছিল। ২০১২-র ১০ জানুয়ারি ভারতীয় দল বনাম বায়ার্ন মিউনিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ভাইচুংয়ের সেই বিদায়ী ম্যাচ। যার যুগ্ম আয়োজক ছিল ফেডারেশন ও একটি বিদেশি গাড়ি সংস্থা। কিন্তু তার পর সেই ত্রাণ তহবিলের অর্থের কী হল?

ভাইচুং এ দিন বিষয়টি শুনে দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে কয়েক জন এই বিষয় নিয়ে আমাকে নিশানা বানিয়ে হইচই করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করেছি। দিল্লি হাইকোর্টে সেই মামলা চলছে। তাই এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’’

তবে নইমের চিঠি অনুযায়ী, ভাইচুং নাকি জানতেন যে, তাঁর বিদায়ী ম্যাচ থেকে সংগৃহীত অর্থ সিকিমের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত মানুষের ত্রাণ ও পুর্নবাসনের কাজে লাগানো হবে। চিঠিতে নইম আরও লিখেছেন, ‘তথ্য জানার (আরটিআই) আইনে জনৈক এক ব্যক্তি আবেদন করেছিলেন কিন্তু তার কোনও জবাব আসেনি। উল্টে ত্রাণ তহবিলে কত টাকা উঠেছে সে ব্যাপারে তারা নাকি কিছুই জানে না এ রকম ইঙ্গিত দেয় ফেডারেশন।’ চিঠিতে নইমের বোমা, ‘এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর যে, ফেডারেশন নিজে যখন এই ম্যাচের একজন আয়োজক, সেখানে এত বড় একটা মানবিক কাজের জন্য তৈরি হওয়া তহবিলের কী হল সেটা তারা জানেই না!’’

সাউথ ক্লাবে বসে এ দিন নইমের প্রশ্ন, ‘‘শুনেছি, সে দিন মাঠে ভাইচুং সম্মানিত হয়েছিল ওই গাড়ি সংস্থার থেকে। ও নিজে সিকিমের ছেলে। ওর ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও নিজে। তার পরেও সেই ত্রাণ-তহবিলের কী হল সে ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ না নিয়ে চুপ করে বসে রয়েছে কেন ভাইচুং? ফেডারেশনও কেন চুপ? তাই এআইএফএফর কাছেই গোটা বিষয়টা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি।’’

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

নইমকে প্রশ্ন করা হয়, ভাইচুং কাঠগড়ায় উঠছেন কী ভাবে? জবাবে গত মাসেই মোহনবাগানরত্ন সম্মান পাওয়া বর্যীয়ান কোচ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে কিছু বলিনি তো এখনও! স্রেফ জানতে চেয়েছি, ওই তহবিলের কী হল। ফেডারেশন জবাব দিক আগে। তার পর সব কাগজপত্র বার করব। তখন অনেক তথ্য সামনে আসবে। জানতে পারবেন অনেক কিছু।’’ সত্তরের ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমস থেকে দেশকে ফুটবলে ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া অধিনায়ক সঙ্গে এটাও বলে দেন, ‘‘দেশের হয়ে ফুটবলার জীবনে ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছি। কোচ হিসেবে দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান আর্থিক কারণে আদালতে অভিযুক্ত। এটা ভাবলে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে। ফেডারেশনকে স্বচ্ছ দেখতে চাই।’’

যাঁকে নিয়ে এই অভিযোগ সেই ভাইচুং অবশ্য ফেডারেশনে তাঁকে নিশানা বানিয়ে চিঠি দেওয়ার কথা শুনে তাঁর প্রাক্তন কোচের প্রশংসা করছেন! ফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নইমসাবকে ধন্যবাদ ইস্যুটা তোলার জন্য। সংশ্লিষ্ট গাড়ি সংস্থাকেও ওঁর চিঠি দেওয়া উচিত ছিল। কারণ ওরাই বলেছিল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মানুষের জন্য ওরা কিছু অর্থ দেবে। যা ওরা শেষ পর্যন্ত দিতে পারেনি। যদি নইমসাব ওই সংস্থার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারেন, তা হলে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তা দান করে দেবেন নিশ্চয়ই।’’

নইম বনাম ভাইচুং বিতর্কের মধ্যে ফেডারেশন যদিও নিশ্চুপ। সচিব কুশল দাস এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায়। ফলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অন্য কর্তারাও বিষয়টা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। নইমের চিঠি ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনিক কেন্দ্রে কতটা তুফান তোলে সেটাই এখন দেখার।

Naimuddin AIFF Baichung Bhutia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}