একজন ক্রিকেটারের মুখ থেকে একটা কথা শুনতে এতটা সময় প্রতীক্ষা করতে হয়নি কখনও বাংলাদেশ মিডিয়াকে। অ্যাকাডেমি ভবনের ভেতরে মুস্তাফিজুরের ফিটনেস টেস্ট নিচ্ছেন ফিজিও, প্রধান চিকিৎসক। বাইরের ছোট্ট করিডোরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই, সেখানেই মিডিয়ার ভিড়! আইপিএল হিরো হাসিমুখটা এক ঝলক দেখেছে মিডিয়া, এর পর মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের অ্যাকাডেমি ভবনে দেড় ঘণ্টারও বেশি ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে ! সেখান থেকে ফিজিও’র সঙ্গে বেরিয়ে এলেন আইপিএলের সেরা উদীয়মান। পথে দেখা হলো জাতীয় দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজন, দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমনের সঙ্গে। হলো হ্যাই হ্যালো। অধিনায়ক মাশরাফি তো দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরলেন মুস্তাফিজুরকে। কিন্তু যার মুখ থেকে একটি কথা শোনার জন্য এতো অধীর অপেক্ষা, সেই মুস্তাফিজুরের মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে মিডিয়ার কেউ কেউ কথা বের করতে পারলেও আইপিএলের অভিজ্ঞতা নিয়ে যে কোনও কথাই শুনতে পেল না মিডিয়া। শুধুমাত্র তার হাসি-খুশি চেহারা, আর অভিব্যক্তি দিয়েই বুঝে নিতে হয়েছে তার মানসিক অবস্থা। মেডিকেল রুমে মুস্তাফিজুর ঢোকার মুহুর্তে শুধু একটা কথাই বললেন, ‘ভাই, বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছি, আগে তো বাড়ি যেতে দেন। এখন শুধু ছুটি আর বিশ্রামে ক’দিন কাটাতে চাই।’ মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মুস্তাফিজুরের কাছাকাছি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু।
আরও খবর: মুস্তাফিজকে হাসিনার অভিনন্দন
মুস্তাফিজুরের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর, এত লম্বা সময় খেলতে খেলতে নাকি মুস্তাফিজুর ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, সে খবরই দিয়েছেন তিনি, ‘ওর শরীরের সব জায়গায়ই নাকি ব্যথা হচ্ছে। অন্তত এক সপ্তাহ বিশ্রামে কাটাতে চায় সে’। লম্বা সময় পরীক্ষা করে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলামও একই ধারণা পোষণ করছেন, ‘আগে ওর ব্যথাটা ছিল বাঁ সোলডার আর পাঁজরে, এখন দেখছি ওর ব্যথাটা হ্যামস্ট্রিং এবং পায়ের পেছনের পেশীতে। এ ধরনের কন্ডিশনে ক’দিন বিশ্রামে থাকাই ভাল।’ অ্যাপেলো হাসপাতালে মুস্তাফিজুরকে পাঠানোর কারণ নাকি তাই। মেডিকেল চেক আপ রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হতে চান মুস্তাফিজুরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পরিকে।
সোমবার রাতে ঢাকায় ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এব্ং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের শুভেচ্ছা। বিমানবন্দরে নেত্রকোনার নামকরা বালিশ মিস্টি মুস্তাফিজুরের মুখে তুলে দিয়েছেন উপমন্ত্রী। বাইরে তখন হাজারো মুস্তাফিজুর ভক্ত। দেশে পা রেখে এভাবে বিমানবন্দরে সম্বর্ধনা পেয়ে অভিভুত হওয়ারই কথা মুস্তাফিজুরের। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইপিএলে মুস্তাফিজুরের বোলিংয়ের উপর একটি ভিডিও চিত্র দেখে অভিভুত হয়েছেন। অথচ, যাঁকে নিয়ে দেশজুড়ে এতো মাতামাতি, মুস্তাফিজুর কিন্তু এ সব নিয়ে আত্মহারা নন। বিমানবন্দর থেকে মামা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে গাড়ীতে করে তার মিরপুরের বাড়িতে গিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত নাকি গল্প আড্ডায় কাটিয়েছেন। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মুস্তাফিজুরের সঙ্গে আসা থেকে মাসতুতো ভাই তানভীর সে তথ্যই দিয়েছেন ‘জানেন, এমনিতেই ও হালকা পাতলা, তার উপর ওখানে খেলে ওজন কমেছে ৪ কেজি। খাওয়া দাওয়া কম হয়েছে বলেই ওজন এত কমেছে।
ও নিজেই বলেছে এই ওজন কমে যাবার কথা। পেট পুরে ভাত খেয়েছে মুস্তাফিজুর। অইপিএল চলাকালে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাইরের থাবার নাকি খেতে পারেনি। এখন গল্প করেছে আমাদের সাথে।’ এই ভাইকে সঙ্গে নিয়েই মেডিকেল চেক আপের জন্য মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম থেকে রাজধানীর নামকরা অ্যাপেলো হাসপাতালে যেতে হয়েছে। সন্ধা ৬টায় নভো এয়ারের ফ্লাইটে যশোহর নেমে নিজের গাড়িতে আড়াই ঘণ্টার সড়ক পথ পেরিয়ে সাতক্ষীরায় নিজ বাড়িতে গন্তব্য। একটানা প্রায় দু’মাস বাবা মা, ভাই-বোনদের ছেড়ে কখনও থাকেননি মুস্তাফিজুর। মা’র হাতের রান্না খাবার খেতে তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন প্রায় সমবয়সী খালাতো ভাই রবীন। মার হাতের রান্না খিচুড়ি, ইলিশ ভাজা খেতে নাকি তর সইছে না মুস্তাফিজুরের।
এমনটাই জানিয়েছেন রবীন, ‘আইপিএলে খেলতে যে ক’দিন মুস্তাফিজুর ভারতে ছিল, একটি বারের মতোও নাকি খিচুরির সঙ্গে ইলিশ ভাজা খেতে পারেনি। এই মেনুই ওর ভীষণ পছন্দ। ঢাকায় নেমেই ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছে তা।’ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে নিজেদের বাড়িটা বেশ বড়, তিন বিঘার মতো জমিতে। সেখানে আছে রকমারি আম গাছ, গাছে ঝুলছে পাকা-আধপাকা হিমসাগর, ল্যাংড়া আর আম্রপালি, ভারতে বসেই পেয়েছেন সে খবর। নিজেদের গাছের আম খেতেও নাকি ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন মুস্তাফিজুর। শখ তার পায়রা পোষা। সেই পোষা পায়রাগুলো দেখতেও নাকি ব্যাকুল মুস্তাফিজুর। খালাতো ভাই রবীনই দিলেন এ তথ্য। বয়সটা মাত্র বিশ হলেও মানসিক বয়স নাকি শিশুদের মতোই, সেই ছেলেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিযেকের ১৪ মাসের মধ্যে দেশকে এতটা গর্বিত করেও নাকি গর্ববোধের লেশমাত্র অনুভুতি স্পর্শ করেনি তাকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy