স্টার্ককে নিয়ে স্মিথদের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার মেলবোর্নে। ছবি: এএফপি।
আজহার আলির ডাবল সেঞ্চুরি। তৃতীয় দিন লাঞ্চেরও পর পর্যন্ত পাকিস্তানের ব্যাট করে যাওয়া। বৃষ্টিতে ১৪১ ওভারের খেলা নষ্ট। কংক্রিটের মতো সারফেসে চার দিনে পনেরো উইকেট। এর পরও অবিশ্বাস্য ভাবে বক্সিং ডে টেস্টের ফয়সালা হয়েছে। মেলবোর্নে ইনিংস এবং ১৮ রানের জয়ে টেস্ট সিরিজও ২-০ জিতে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
উল্টো দিকে অন্য কোনও টিম থাকলে কী হত বলা যায় না। কিন্তু বিপক্ষের নাম যখন পাকিস্তান, তখন কোনও কিছুই বোধহয় অসম্ভব নয়। না হলে ৪৪৩-৯ স্কোরে প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে এই অবস্থা হয়!
স্টিভ স্মিথদের এই জয় যে আদৌ সম্ভব, পঞ্চম দিন শুরু পর্যন্ত বোধহয় বিশ্বাস করতে পারেননি কেউ। এই জয়ের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে ২০১০ সিডনি বা ২০০৬ অ্যাডিলেডের। ছ’বছর আগে সিডনিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১২৭ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত টেস্ট জিতেছিল ৩৬ রানে। আর অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৫৫৫ তুললেও ব্যাগি গ্রিন জিতেছিল ৬ উইকেটে।
৪৬৫-৬ স্কোরে এ দিন দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। স্মিথ (১৬৫ ন.আ.) ও মিচেল স্টার্ক (৮৪) দ্রুত রান তুলে মেলবোর্নে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরের রেকর্ড গড়েন। ৬২৪-৮ ডিক্লেয়ার করে লাঞ্চের আগে এবং পরে পাকিস্তানের একজোড়া উইকেট তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। নাথান লায়ন পরে এক স্পেলে ইউনিস খান (২৪), মিসবা উল হক (০) এবং আসাদ শফিককে (১৬) ফিরিয়ে দেন। পাক কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় অস্ট্রেলীয় পেস ত্রয়ী। জশ হ্যাজলউড (২-৩৯), জ্যাকসন বার্ড (১-৪৬) ও সর্বোপরি মিচেল স্টার্ক (৪-৩৬)।
বক্সিং ডে-র বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দেওয়া টেস্ট শেষে দু’টিমের অধিনায়ক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে। পরপর পাঁচটা টেস্ট হেরে স্মিথ নিয়ে যে ঝাঁঝালো সমালোচনা হচ্ছিল, তা এখন প্রায় বিস্মৃত অতীত। ওয়ান ডে-তে দুর্দান্ত ফর্মে ফেরা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক এই টেস্টেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ‘‘ক্রিকেট খুব মজার খেলা। এখানে যা কিছু হয়ে যেতে পারে,’’ সিরিজ জিতে বলেছেন স্মিথ। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘সকালে প্ল্যানটা ছিল চল্লিশ মিনিট উইকেট না হারিয়ে প্রচুর রান তোলা। তার পর ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। জানতাম বলটা রিভার্স করাতে পারলে, তিন-চারটে উইকেট নিতে পারলে ম্যাচ জমে যাবে।’’
আর মিসবা? তাঁর নেতৃত্বে লর্ডসে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে পাকিস্তান। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে। আবার তাঁর নেতৃত্বেই পরপর টেস্টে অবিশ্বাস্য ভাবে হেরেছে টিম। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এটা পাকিস্তানের টানা এগারো নম্বর হার। যার পরে মিসবা বলে দিয়েছেন, সিডনিতে শেষ টেস্ট খেলবেন কি না জানেন না। ‘‘টিমের জন্য কিছু করতে না পারলে খেলে লাভ নেই। অবসর নিয়ে ভাবব এ বার,’’ বলছেন ৪২ বছরের মিসবা। নাটকীয় হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘৪৪৩ তুলে শেষ দিন টেস্ট হারার জায়গায় থাকার কথাই নয়। তবে চাপের জন্য এ রকম হতে পারে। ব্যাটিংকেই এর দায় নিতে হবে।’’
সিরিজ ফসকে গেল ঠিকই। তবে সিডনিতে যদি এই টিমটাই দারুণ কিছু করে দেয়, অবাক হওয়ার থাকবে না। টিমের নামটা যে পাকিস্তান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy