সেমিফাইনালে উঠে সেরিনা-নাদাল। বুধবার।
অস্ট্রেলীয় ওপেন টেনিসের সবচেয়ে উত্তপ্ত মেজর। নতুন মরসুমে এত তাড়াতাড়ি হয় যে, প্লেয়াররা সবচেয়ে কম ম্যাচ প্র্যাকটিসে থাকেন। তার পরেও সিঙ্গলসের দু’বিভাগে আট সেমিফাইলিস্টের মধ্যে এ বার ছ’জন ‘ওটি’। ওভার থার্টি। যা প্রমাণ করছে স্ট্যামিনা আর স্কিল, দুয়েতেই তরুণ প্রজন্মের চেয়ে এগিয়ে সিনিয়ররা।
পুরুষদের শেষ চারের মধ্যে ফেডেরার তো পঁয়ত্রিশ অতিক্রান্ত। ওয়ারিঙ্কা আর নাদালও তিরিশের ওপারে। একমাত্র দিমিত্রভ পঁচিশ। তেমনই মেয়েদের বিভাগে ভিনাস ছত্রিশ, সেরিনা পঁয়ত্রিশের ঘরে। অপ্রত্যাশিত সেমিফাইনালিস্ট মিরজানা পঁয়ত্রিশে পা দেবেন মার্চে। কেবল ভ্যান্ডেওয়েগ পঁচিশের ঘরে। দু’হাজার চোদ্দোয় তাঁর নয় নম্বর ফরাসি ওপেন জেতার পর বুধবারই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে উঠলেন লাগাতার চোট কাটিয়ে ওঠা রাফায়েল নাদাল। তাঁর কাছে বিশ্বের তিন নম্বর মিলোস রাওনিচ ৪-৬, ৬-৭ (৭-৯), ৪-৬ হারায় এ বারের অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে প্রথম তিন বাছাইয়ের কেউই থাকলেন না। নতুন ব্রিটিশ টেনিস প্রতিভা জোনাথন কন্টাকে মাত্র সওয়া ঘণ্টায় ৬-২, ৬-৩ উড়িয়ে সেরিনা টানা দশম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে উঠলেন এ দিন।
সেমিফাইনাল যুদ্ধ
ফেডেরার-ওয়ারিঙ্কা
নাদাল-দিমিত্রভ
সেরিনা-মিরজানা
ভিনাস-ভ্যান্ডেওয়েগ
এত নজরকাড়া ব্যাপারের মধ্যে অবশ্য বুধবার মেলবোর্ন পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা দু’দশক পরে মিরজানা লুচিচ-বারোনির গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠা। আপনি শেষ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলেছেন উনিশশো নিরানব্বইয়ে, স্টেফি গ্রাফের বিরুদ্ধে! রড লেভার এরিনায় পঞ্চম বাছাই ক্যারোলিনা প্লিসকোভাকে ৬-৪, ৩-৬, ৬-৪ হারানোর পরে কোর্টেই টিভিভাষ্যকার মিরজানাকে মনে করিয়ে দিলে তাঁর পাল্টা বিস্মিত জবাব, ‘‘সত্যি, ভাবতেই কেমন যেন লাগছে!’’
সেরিনার অভিনব প্রতিপক্ষ
• নাম মিরজানা লুচিচ-বারোনি
• বয়স ৩৪ বছর ১০ মাস ১৬ দিন
• গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ১৮ বছর পর।
• অনন্য রেকর্ড টেনিসের ওপেন যুগে দীর্ঘতম ব্যবধানে পেশাদার ট্যুরে খেতাব জয়। ৩ মে ১৯৯৮-১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
• ডব্লিউটিএ ট্যুরের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম প্লেয়ার হিসেবে খেতাব অটুট রাখা। ১৫ ও ১৬ বছরে পরপর দু’বার ক্রোয়েশিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়ন।
• পেশাদার ট্যুরের বাইরে ৮ বছর। ২০০২-২০১০।
• কোচ ও ট্রেনিং ২০১০-এ বিয়ের পর স্বামী ড্যানিয়েল বারোনি কোচ। প্র্যাকটিস করেন ফ্লোরিডার পাবলিক কোর্টে। ভাড়া মিটিয়ে।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে টিনএজার ক্রোট মিরজানার প্রতিভাকে মার্টিনা হিঙ্গিস, ভিনাসের সঙ্গে তুলনা করত টেনিসমহল। চোদ্দো বছর বয়সে প্রথম মেয়ে খেলোয়াড় হিসেবে মিরজানার পরপর দু’টো আইটিএফ খেতাব জেতার রেকর্ড আজও অটুট। পনেরো বছরে হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটিতে তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জয়। ১৯৯৮ অস্ট্রেলীয় ওপেন ডাবলস। টিনএজে মিরজানার সাফল্যের সঙ্গে ভারতীয় যোগাযোগও আছে। আটানব্বইয়েই উইম্বলডন মিক্সড ডাবলস রানার্স হন তিনি, মহেশ ভূপতির সঙ্গে জুটিতে। তার পরের বছর সেই উইম্বলডন সিঙ্গলস সেমিফাইনাল ওঠা। মোনিকা সেলেসকে ছিটকে দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তিন সেটের লড়াইয়ে হেরেছিলেন স্টেফির কাছে। মিরজানা মজা করে বলেছেন, ‘‘দু’দশক আগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে আমাকে যে হারিয়েছিল শেষ পর্যন্ত সে বাইশটা মেজর জিতেছে। এ বার যার বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলব তারও বাইশ মেজর!’’ এ দিকে সেরিনা বলেন, ‘‘দু’দশক আগে মিরজানার সঙ্গে খেলেছি। আমি অবাক, গর্বিতও। ‘থার্টি’ সংখ্যাটা টেনিসে যেন ‘নিউ টিন’! সেমিফাইনালে যা-ই হোক, অস্ট্রেলীয় ওপেনে ফাইনাল খেলবে চৌত্রিশ বা তারও বেশি বয়সি মেয়ে।’’
মিরজানা তো আবেগে কোর্টেই কেঁদে ফেলেন। ‘‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে ওঠার তাৎপর্য আমার কাছে সীমাহীন। যা এই বয়সে আমার জীবনকে গড়ে তুলল। আমার জীবনে যা-যা খারাপ ঘটেছে সব কিছু ঠিক করে দিল,’’ বলেছেন মিরজানা। যাঁকে মা আর তিন ভাই-বোন নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার বাড়ি থেকে ফ্লোরিডা কার্যত পালাতে হয়েছিল। কিশোরী মিরজানার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ছিল, বাবা মারিনকোর হাতে তিনি দিনের পর দিন মানসিক ও দৈহিক নির্যাতিত হচ্ছিলেন! বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচলেও একটা সময় তিনি চার বছরে মাত্র ছ’টা টুর্নামেন্ট শেষ করতে পেরেছিলেন। বাকিগুলোয় অবসাদে মাঝপথে সরে দাঁড়ান!
ছবি: রয়টার্স ও এপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy