আমলা স্টাম্প আউট। বিরাটের উল্লাস। ছবি রয়টার্স।
প্রথম দিন লাঞ্চের আগেই ভারতের ৬৫-৩ হয়ে যাওয়া যদি হয় ট্রেলার, তা হলে ম্যাটিনি শো অবশ্যই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং ব্যাটসম্যান ডিন এলগারের চার উইকেট নিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ধস নামানো।
শেষ বেলায় রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজার পরপর ভ্যান জিল ও ফাফ দু’প্লেসির উইকেট পাওয়াকে তা হলে কী বলবেন?
ইভনিং শো, না শুক্রবার মর্নিং শোয়ের ট্রেলার?
সত্যিই যদি অশ্বিনরা বৃহস্পতিবার বিকেলে ট্রেলারই দেখিয়ে থাকেন, তা হলে শুক্রবার ‘নিউ রিলিজ’-এর দিনে বোধহয় একটা সুপার-ডুপার ব্লক-বাস্টার দেখতে চলেছে মোহালি। যা কুশীলবদের চেয়ে লোকেশনের জন্যই বেশি হিট।
মোহালির বাইশ গজ। যেখানে নাটকীয় প্রথম দিনের পর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ঘিরে বারুদের গন্ধ বেরনো শুরু হয়ে গেল।
ভারত ২০১-এ অল আউট হয়ে যাওয়ার পর দিনের শেষে বিপক্ষের দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ছুরিতে শান দিচ্ছে। রবিবারের মধ্যে টেস্ট শেষ করে দিয়ে আগাম দিওয়ালি মানাতে যাওয়ার পরিকল্পনাও নাকি ভারতীয় শিবিরে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে বলে শোনা গেল। রবিবার কেন, শনিবারেই না শেষ হয়ে যায় প্রথম টেস্ট। অশ্বিন-জাডেজার ট্রেলার দেখে তো তেমনই মনে হচ্ছে।
শুক্রবার উইকেটে বল নাকি আরও ঘুরবে। অনিল কুম্বলে স্বয়ং টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন এ দিন, ‘‘এই উইকেটে কাল আমাদের স্পিনাররা শাসন না করলে অবাক হব।’’ সত্যিই যদি তা হয়, তা হলে দ্বিতীয় দিনেই চালকের আসনে বসে পড়তে চলেছে ভারত। ব্লক-বাস্টারও হিট করে যাবে।
ভারতের স্পিনারত্রয়ী শুক্রবার আমলাদের পুরো ছবিটাই দেখিয়ে ছাড়বেন কি না, তা তো অবশ্যই দেখার। কিন্তু এর মাঝেই প্রশ্ন উঠছে, শাস্ত্রী-কোহলিরা এই উইকেট নিয়ে আগে থেকে কেন এত ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন। প্রথম দিনের উইকেট দেখে তো পরিষ্কার, ভারতের পছন্দের মতো ডিজাইনার উইকেটই বানানো হয়েছে।
দু’বছর আগে অস্ট্রেলিয়াকে এনে টার্নিং ট্র্যাকে ফেলে যে ভাবে ৪-০ নাস্তানাবুদ করা হয়েছিল, এ যেন সেই একই চিত্রনাট্য। সে বার কোনও টেস্টই সাড়ে চার দিনের বেশি গড়ায়নি। দিল্লিতে শেষ টেস্ট তো তিন দিনে শেষ হয়ে যায়। মোহালিতেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এ বারও সিরিজ সম্ভবত একই চিত্রনাট্য মেনে চলছে। এর নামই তো হোম অ্যাডভান্টেজ।
সঞ্জয় বাঙ্গারকে সামনে পেয়ে উইকেট সংক্রান্ত প্রশ্নটা ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। উইকেটটা কেমন? উত্তরটা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বাঙ্গার। ‘‘ভাল, না খারাপ উইকেট, সে সবে আমি যেতে চাই না। তবে এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং উইকেট। বল কতটা স্পিন করবে বা সুইং করবে, তা আগে থেকে আন্দাজ করা খুব কঠিন। তাই এই ধরণের উইকেটে ব্যাটসম্যান ও বোলার কারও কাজই সোজা নয়’’, ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন কোহলিদের ব্যাটিং কোচ।
আর ভারতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই যিনি হিরো হয়ে গেলেন, সেই ডিন এলগার এমন সাফল্য পেয়েও রীতিমতো তোপ দেগে বসলেন, ‘‘সত্যি বলব? আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি চান, তা হলে বলব, ক্রিকেটের পক্ষে এটা খুব খারাপ উইকেট। এসপার-ওসপার হওয়ার মতোই উইকেট। তবে এ রকমই উইকেটের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। তাই চমকে যাইনি।’’
বাঙ্গারের কথায় যা ‘চ্যালেঞ্জিং উইকেট’, সেখানে মুরলী বিজয়ের ৭৫, রবীন্দ্র জাডেজার ৩৮, পূজারার ৩১ ও অশ্বিনের ২০-ই অনেক বড় দেখাচ্ছে। তাঁদের তৈরি ভিতের উপর গড়া ২০১ রানের ইনিংসটাও আসলের চেয়ে অনেক নাকি বড় বলে মনে হচ্ছে ভারতীয় শিবিরের। বাঙ্গার তেমনই বলছেন।
এবং এই রানটা টপকাতে যে শুক্রবার তাঁদের দম বেরিয়ে যেতে পারে, তা দিনের শেষে কার্যত স্বীকারই করে নিলেন প্রোটিয়া শিবিরে দিনের সেরা বাজি এলগার। অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ২৯ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার শুধু যে চার-চারটে উইকেটই নিলেন, তা নয়, কোহলির দুর্ধর্ষ ক্যাচটিও নেন। ভারতীয় স্পিনাররা বিপক্ষের ব্যাটিংয়ে থরহরি কম্পন ধরাতে শুরু করে দিলেও দিনের শেষে তিনি ক্রিজে আছেন। সঙ্গে আমলা। ড্রেসিংরুমে ডে’ভিলিয়ার্স। এই হার্ডলগুলো শুক্রবার দ্রুত পেরোতে পারলেই কেল্লাফতে করার মঞ্চ অর্ধেকের বেশিই তৈরি হয়ে যাবে।
ভারত যেমন তিন স্পিনারে নেমেছে এই টেস্টে, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকাও তিন স্পিনার নিয়েই যে খেলছে, তা এ দিন প্রমাণ করে দিলেন এলগার। আমলাদের সুবিধা হল, তিনি আবার ওপেনিং ব্যাটসম্যানও। এলগার ও সাইমন হারমার তাঁদের পছন্দের উইকেট পেয়ে এমন সার্ভিস দিলেন যে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইমরান তাহিরকে ৪৪ ওভার পর্যন্ত লুকিয়েই রেখে দিলেন আমলা। তাহির শেষ দিকে দশ ওভার হাত ঘুরিয়ে দুটো উইকেট পেলেন। সারা দিনে যে বারোটা উইকেট পড়ল, তার মধ্যে ন’টিই স্পিনারদের নেওয়া। মোহালিতে যেমন হয়েছিল গত বারেও।
কিন্তু শুক্রবারের ব্লকবাস্টার দেখতে দর্শক হবে মোহালির গ্যালারিতে? নাকি এ দিন যেমন মেরেকেটে হাজার দু’য়েক লোক এসেছিল, তেমনই থাকবে? ক্রিকেট দুনিয়া এই ম্যাচে স্পটলাইট ফেলে রাখলেও মুখ ফিরিয়ে রইল আয়োজক শহরই। জমজমাট টেস্ট ক্রিকেটের দিনে এই একটা কাঁটাই খচখচ করছে।
মোহালি টেস্টের স্কোর
ভারত
(প্রথম ইনিংস)
বিজয় এল বি ডব্লিউ হার্মার ৭৫
ধবন ক আমলা বো ফিলান্ডার ০
পুজারা এল বি ডব্লিউ এলগার ৩১
বিরাট ক এলগার বো রাবাদা ১
রাহানে ক আমলা বো এলগার ১৫
ঋদ্ধিমান ক আমলা বো এলগার ০
জাডেজা এল বি ডব্লিউ ফিলান্ডার ৩৮
অমিত ক স্টেইন বো এলগার ৬
অশ্বিন নঃআঃ ২০
উমেশ বো ইমরান ৫
অ্যারন বো ইমরান ০।
অতিরিক্ত ১০।
মোট ২০১ অল আউট।
পতন: ০, ৬৩, ৬৫, ১০২, ১০২, ১৪০, ১৫৪, ১৯৬, ২০১, ২০১।
বোলিং: স্টেইন ১১-৩-৩০-০, ফিলান্ডার ১৫-৫-৩৮-২,
হার্মার ১৪-১-৫১-১, রাবাদা ১০-০-৩০-১,
এলগার ৮-১-২২-৪, ইমরান ১০-৩-২৩-২।
দক্ষিণ আফ্রিকা
(প্রথম ইনিংস)
এলগার ব্যাটিং ১৩
ফান জিল এল বি ডব্লিউ অশ্বিন ৫
দু’প্লেসি বো জাডেজা ০
আমলা ব্যাটিং ৯।
অতিরিক্ত ১।
মোট ২৮-২।
পতন: ৯, ৯।
বোলিং: অশ্বিন ৭-৩-৪-১, উমেশ ৩-১-৫-০,
অ্যারন ৩-১-৪-০, জাডেজা ৫-০-৭-১, অমিত ২-০-৭-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy