Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

লিয়েন্ডারই ভারতীয় টেনিসের রক্ষাকবচ

লিয়েন্ডার পেজকে গতকাল রাত বারোটাতেও টিম হোটেলে জড়িয়ে ধরে প্রতি দশজনের মধ্যে নয় জনই বলছিল, ভারতীয় টেনিসের সুপারম্যান। আজ সকালে দেখা হতে আমি ওকে বললাম, ‘আর তো ওয়ান্ডার বয় বলা যায় না। একচল্লিশ হল। তুমি এখন ওয়ান্ডার ম্যান। বিস্ময় পুরুষ!’ বললাম বটে, একচল্লিশ। কিন্তু লিয়েন্ডারকে এখনও কোর্টে একুশের ছোকরা লাগে আমার! ছিয়ানব্বইয়ে লিয়েন্ডার যখন আটলান্টা অলিম্পিকে সিঙ্গলসে পদক জিতল, আমি ছিলাম সেখানে।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

লিয়েন্ডার পেজকে গতকাল রাত বারোটাতেও টিম হোটেলে জড়িয়ে ধরে প্রতি দশজনের মধ্যে নয় জনই বলছিল, ভারতীয় টেনিসের সুপারম্যান। আজ সকালে দেখা হতে আমি ওকে বললাম, ‘আর তো ওয়ান্ডার বয় বলা যায় না। একচল্লিশ হল। তুমি এখন ওয়ান্ডার ম্যান। বিস্ময় পুরুষ!’

বললাম বটে, একচল্লিশ। কিন্তু লিয়েন্ডারকে এখনও কোর্টে একুশের ছোকরা লাগে আমার! ছিয়ানব্বইয়ে লিয়েন্ডার যখন আটলান্টা অলিম্পিকে সিঙ্গলসে পদক জিতল, আমি ছিলাম সেখানে। ভারতীয় টেনিস দলের কোচ হিসেবে। তখন যেমন ফিটনেস, রিফ্লেক্স, অ্যাথলেটিসিজম, খেলাটার প্রতি অদম্য উৎসাহ, জেতার খিদে দেখেছি, আঠারো বছর পরেও বেঙ্গালুরুতে লিয়েন্ডারের খেলায় ঠিক তেমনই পেলাম।

আমার মতে লিয়েন্ডার ভারতীয় টেনিসের রক্ষাকবচ। গত চব্বিশ বছরে কত বার যে ডেভিস কাপে দেশকে বাঁচিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। লিয়েন্ডার থাকা মানে ভারত যেন গাড়ি চাপা পড়তে পড়তেও রক্ষা পাবে! এখানে যেমন ডাবলসে পেয়েছিল। টিম লিয়েন্ডার না জিতলে তো টাইটা শনিবারই খতম হয়ে যায়! লিয়েন্ডারের ফিটনেস আমার বিচারে ভারতের যে কোনও খেলায় যে কোনও প্লেয়ারের মধ্যে সর্বোত্তম। একচল্লিশেও লিয়েন্ডার এ দেশের সবচেয়ে ফিট স্পোর্টসম্যান।

কেউ কেউ বলতে পারেন, ও ডাবলস প্লেয়ার। সে জন্যই এত বছর ধরে খেলে যাচ্ছে। আমি মানি না। প্রথমত, লিয়েন্ডার ডেভিস কাপে বহু বছর সিঙ্গলসও খেলেছে এবং বেশ কিছু স্মরণীয় জয় পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, টেনিসে ডাবলস এখন ‘স্পেশ্যালিস্ট জব’। বিশ্ব জুড়ে ডাবলসে বিশেষজ্ঞ প্লেয়ার রয়েছে। টেনিসটা গোটা বিশ্ব খেলে। ফলে এখানে লড়াইটা আরও ক্ষুরধার, উন্নত। সেখানে একটা প্লেয়ার সেই নব্বই সাল থেকে আজও টানা খেলে চলেছে শুধু নয়, বিগ ম্যাচ জিতছে, আন্তর্জাতিক খেতাব পাচ্ছে অবিশ্বাস্য! তা ছাড়া আমি মনে করি, একটা সময়ের পর লিয়েন্ডারের শুধু ডাবলসটাই খেলার পিছনে কারণ, টেনিসজীবনকে আরও দীর্ঘায়িত করা। সিঙ্গলস খেললে ওর কেরিয়ার হয়তো তিরিশ-বত্রিশেই শেষ হয়ে যেত।

অন্য একটা ব্যাপারও গতকাল ওর খেলার মধ্যে যেন দেখলাম। কঠিন পারিবারিক সমস্যাও যে টেনিসের প্রতি লিয়েন্ডারের একাগ্রতায় বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারেনি, পারবে না, সেটা ভারতীয় টেনিসকে বুঝিয়ে দিতেই যেন নেমেছিল। এবং একশোভাগ বুঝিয়েও দিয়েছে।

দু’বছর পর রিও অলিম্পিকে ওর খেলা নিয়ে আমার আর এর পর কোনও সন্দেহ থাকল না। আমার মতে ২০১৬ অলিম্পিকে লিয়েন্ডারের পার্টনার হোক রোহন বোপান্না। শনিবারের ফর্মে খেললে লিয়েন্ডার-রোহন অলিম্পিক পদকও আনতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE