Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

শহরটা তো বদলে গিয়েছে অনেক, বললেন আফ্রিদি

রাতের কলকাতাকে চিনতেই পারছিলেন না শাহিদ আফ্রিদি! নতুন সিম কার্ড দেখে আঁতকে উঠছেন মহম্মদ আমের! প্রসঙ্গ পাল্টে ঝটিতি চলে যাচ্ছেন নিজের বাড়ির মোষের গল্পে

জট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত টি-২০ বিশ্বকাপে। শহরে হাজির পাক ক্রিকেট দল। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

জট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত টি-২০ বিশ্বকাপে। শহরে হাজির পাক ক্রিকেট দল। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত ও দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

রাতের কলকাতাকে চিনতেই পারছিলেন না শাহিদ আফ্রিদি!

নতুন সিম কার্ড দেখে আঁতকে উঠছেন মহম্মদ আমের! প্রসঙ্গ পাল্টে ঝটিতি চলে যাচ্ছেন নিজের বাড়ির মোষের গল্পে!

পাক ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমের কৌতূহল, শহরে গুলাম আলির কনসার্ট নিয়ে হয়েছিলটা কী?

শনিবার রাতে শহরে পা দেওয়ার পর পাকিস্তান অন্দরমহলের কোলাজে রইল এ রকমই টুকরো টুকরো ছবি। যেখানে নেই ক্রিকেট। নেই টেনশনের ছিটেফোঁটা। দেখে কে বলবে, চব্বিশ ঘণ্টা আগেও এই টিমটার বিশ্বকাপ ভাগ্যই ছিল ঘোরতর অনিশ্চিত।

দীর্ঘ নাটকের পর পাকিস্তানের আবির্ভাবে সিএবি-র শীর্ষ কর্তারা কেন অনুপস্থিত? প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টেক্সট মেসেজের কোনও উত্তর দেননি। সিএবি-র আর এক কর্তা বললেন, আইসিসি-র টুর্নামেন্ট খেলতে আসা টিমকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর রেওয়াজ নেই। দুই স্থানীয় ম্যানেজার মইন বিন মকসুদ ও দানিশ শেঠ ছাড়া তাই সিএবি-র কোনও প্রতিনিধিত্ব এই রাতে ছিল না।

আফ্রিদিদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্য পুরোদমেই দেখা গেল দমদম বিমানবন্দর এবং টিম হোটেলে। অভিবাসন কাউন্টার থেকে টিম বাস— এই রাস্তাটা আসতেই আফ্রিদিদের পেরোতে হয় নিরাপত্তার চার-চারটি স্তর। সিআইএসএফ, বিধাননগর পুলিশ স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ, কলকাতা পুলিশের কমান্ডো ও র‌্যাফ মিলিয়ে প্রায় দেড়শো জনের নিরাপত্তা বাহিনী। ছিল স্নিফার ডগও। বিমানবন্দর থেকে আলিপুরের হোটেলে পাক দলকে নিয়ে আসার সময় গোটা রাস্তা টিম বাসের সামনে ছিল সেই কমান্ডো বাহিনী। এমনকী একটা ডামি বাসও!

আবু ধাবি থেকে এসে রাত পৌনে ৮টা নাগাদ শহরে পা দেওয়া, সাড়ে ৯টায় আলিপুরের টিম হোটেলে ঢোকা— প্রায় দু’ঘণ্টার যাত্রাপথ ছিল অবশ্য একেবারেই ঝ়ঞ্ঝাটহীন। বিমানবন্দরে শ’দুয়েক ক্রিকেট পাগল পাক তারকাদের দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন বিকেল থেকেই। টার্মিনাল থেকে বেরোতে না বেরোতেই তাঁদের চিৎকারে প্রথমে কিছুটা হতভম্ব দেখাল পাক অধিনায়ককে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে জমায়েতের উদ্দেশে হাত নেড়ে বাসের দিকে হাঁটা দিলেন আফ্রিদি। তাঁর একটু পরেই দীর্ঘকায় পেসার মহম্মদ ইরফান। শহরের ক্রিকেটভক্তদের প্রথমটায় এক বার ভাল করে মেপে নিয়ে তার পর তাঁদের দিকে চোখ টিপে উঠে পড়লেন বাসে। এই দু’জনের ফাঁকে, কেউ ভাল ভাবে নজর করার আগেই বেরিয়ে এসেছেন মহম্মদ আমের। ভিড়টা কিন্তু তার পরেও খুঁজে গেল পাক পেসারকে!

আফ্রিদিরা যে কতটা ফুরফুরে মেজাজে, বোঝা গেল বাস ছাড়ার পর। স্থানীয় ম্যানেজারের কাছে পাক ম্যানেজার ইন্তিখাব আলম জানতে চান গুলাম আলির কলকাতা-কনসার্টের ব্যাপারে। নিউটাউনের রাস্তায় ঢুকতে না ঢুকতেই নাকি আফ্রিদি বলে ওঠেন, ‘‘আরে! তোমাদের শহরটাকে তো রাতে চেনাই যাচ্ছে না। চারদিকে এত আলো! সত্যি কলকাতা অনেক পাল্টে গিয়েছে।’’ রাস্তার দু’ধারের বহুতলগুলো দেখতে দেখতে আবার আমেরের রসিকতা, ‘‘জানেন, আমিও কিন্তু ধনী পরিবারের ছেলে। বাড়িতে ১১১টা মোষ আছে। যার প্রত্যেকটা তিরিশ কেজি দুধ দেয়!’’ যা নিয়ে বাসের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ইরফানদের হাসাহাসি। কেউ কেউ পাক পেসারকে টিপ্পনী কাটাও শুরু করে দেন।

যার রেশ চলল হোটেল পর্যন্ত। যেখানে কলকাতা পুলিশের এক বড়কর্তাকে দেখে আমেরের রসিকতা, ‘‘ইনি কি সিংহম? তা হলে সিংহম রিটার্নস কোথায়?’’ একটা ব্যাপারে অবশ্য প্রচণ্ড সিরিয়াস নির্বাসন কাটিয়ে টিমে ফেরা পাক পেসার। গোটা টিম যখন স্থানীয় সিম কার্ড নিতে ব্যস্ত, শুধু তিনি তা একেবারেই নিতে চাইলেন না। বরং স্থানীয় ম্যানেজারকে বলে দিলেন, ‘‘ও সব থেকেই যত ঝামেলা! আমার দরকার নেই। আপনার মোবাইল থেকেই না হয় বাড়িতে ফোন করে দেব।’’

টিম ডিনারে আবার দেখা গেল পাক সৌজন্য। দুই স্থানীয় ম্যানেজারের জন্য টিম জার্সি নিয়ে

নামেন আফ্রিদি। তাঁদের ডেকে নেন টিমের ‘নো কার্বোহাইড্রেট, নো ডেজার্ট’ নৈশভোজে। বদলে পাক টিমের মেনুতে ছিল চাইনিজ আর ১৯ মার্চের মহাযুদ্ধ নিয়ে টুকটাক আলোচনা। আর ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া— ঠাট্টা-ইয়ার্কি থাকবে। থাকবে সৌজন্যও। কিন্তু এগুলো সব মাঠের বাইরে।

এক বার মাঠে নেমে পড়লে আর গুলাম আলি নয়, চলবে গোলাগুলি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy