কথাটা বলেছিলেন অনিরুদ্ধ স্যর। ‘তোমাকে খেলতেই হবে!’ ব্যস, ওই এক নির্দেশেই মাঠে নেমে গিয়েছিলেন বছর একুশের যুবক। ছয় উইকেট নিয়েছিলেন সে বার। হরিয়ানা দলও অবনমন বাঁচিয়েছিল। এত দিন পর্যন্ত ২০১১-র সেই দিনটাই ছিল তাঁর জীবনের সেরা দিন। কিন্তু, জীবন তো আর থেমে থাকে না! তাই পাঁচ বছর পরে জীবনের অন্য এক মোড়ে দাঁড়িয়ে যখন জাতীয় দলের তালিকায় তাঁর নাম উঠল, প্রথমে তাই বিশ্বাস করতে পারেননি হরিয়ানার জয়ন্ত যাদব। চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করেছিল, স্বপ্ন নয়তো!
এত দিন শুধু স্বপ্নই দেখে এসেছেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন। স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে এক মাঠ শেয়ার করার স্বপ্ন। তাঁকে কাছ থেকে দেখার স্বপ্ন। তাঁর কাছ থেকে টিপস্ নেওয়ার স্বপ্ন। তাঁর সংস্পর্শে আসার স্বপ্ন। এক ড্রেসিং রুমে ভাগ করে নেওয়ার স্বপ্ন। সে কারণেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছিলেন জয়ন্ত। কিন্তু স্বপ্ন এত তাড়াতাড়ি বাস্তব হবে, ভাবেননি তিনি। স্বপ্নের সেই মানুষটি কে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যাঁর নেতৃত্বে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে এবং টি২০ সিরিজের সদ্য ঘোষিত দলে রয়েছে হরিয়ানার জয়ন্ত যাদবের নাম।
তার পরেই আত্মবিশ্বাসটা যেন এক ধাক্কায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে! জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হাত ভাঁজ না করে দুসরা করার স্বপ্নে আপাতত তাই মশগুল জয়ন্ত। চোখে-মুখে-কথায়-বার্তায় উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছে। এক গাল হাসি-সহ বললেন, ‘‘জানেন, আমি কখনও আমার এত দিনের ক্রিকেট কেরিয়ারে দুসরা করিনি। কিন্তু, আমার বিশ্বাস কনুই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভাঁজ না করেও সেটা করা যায়। তবে অফ স্পিনটাই আমার মূল শক্তি। ক্যারাম করাও অনুশীলন করেছি। তবে, এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছইনি যাতে আইপিএল বা জাতীয় দলের মতো বড় পর্যায়ে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যায়।’’
জয়ন্ত এখনও ছাব্বিশ পেরোননি। ইতিমধ্যেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪০টি ম্যাচে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ১১০টি উইকেট। রাজ্য দলে জায়গা পেতে একটা সময় প্রচুর লড়াই করতে হয়েছে। সামনে ছিলেন অমিত মিশ্র, ইউজভেন্দ্র চাহালের মতো সব খেলোয়াড়। চাহালও রয়েছেন এই দলে। জয়ন্তের মতে, এটাই তাঁকে অনেক বেশি মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা লহলে খেলতাম। যে গ্রাউন্ডকে বলা হত সিমার ফ্রেন্ডলি উইকেট। তখন মিশ্রভাই ছিলেন আমার সামনে। প্রথম পছন্দ হিসেবে দলে সব সময়ই তাঁরই জায়গা হত। দ্বিতীয় স্পিনারের কথা উঠলে ইউজি আর আমার মধ্যে লড়াই হত।’’
তাঁর উত্থানের পিছনে ছিলেন অনিরুদ্ধ চৌধুরী। বিসিসিআই-এর ওই ট্রেজারারই তাঁকে উত্সাহ দিতেন প্রতি মুহূর্তে। তিনিই জেদটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, হরিয়ানা দলে জয়ন্তকে জায়গা করে নিতেই হবে। সেই দিনটার কথা আজও মনে আছে জয়ন্তর। তাঁর কথায়, ‘‘সেটা আমার রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকের বছর। ২০১১ সাল। গুজরাতের বিরুদ্ধে সুরাতে ম্যাচ ছিল। আমরা অবনমন বাঁচানোর লড়াই করছিলাম। মিশিভাই আর চাহালই খেলবে ঠিক ছিল। অনিরুদ্ধ স্যর হঠাত্ বললেন, তোমাকে খেলতেই হবে। ওটাই ছিল আমার জীবনের সেরা দিন। ছয় উইকেট নিয়েছিলাম। অবনমনও বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম।’’
এর পর জীবনে আর এক মোড় এল। ‘ইন্ডিয়া এ’ দলের হয়ে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হল। জয়ন্ত বলছেন, ‘‘প্রথম দু’দিন জানেন একদম ঘোরে ছিলাম। কোনও কথাই বলতে পারিনি। ভাবছিলাম, সত্যিই দ্রাবিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি? যখন কথা বলতে শুরু করলাম, তখন বুঝলাম হোম ওয়ার্ক কাকে বলে সেটা এই মানুষটার কাছ থেকেই শিখতে হয়!’’
জয়ন্তের পছন্দের অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও গ্রেম স্মিথ। হরিয়ানার হয়ে সমস্ত বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টেই খেলেছেন তিনি। এর পর রাজ্য এবং ইন্ডিয়া-এ দলে। দক্ষিণ দিল্লির বসন্ত বিহারে এয়ার ইন্ডিয়ার কোয়ার্টারে এখনও বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন এই ক্রিকেটার। ডিপিএস-এর পর হিন্দু কলেজ। তবে এখন লক্ষ্যটা অন্য। কী? জয়ন্তের কথায়, ‘‘মাহি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করা। ওঁর সঙ্গে তো আমার আলাপই নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy