জীবন মানে ছিল লুকিয়ে লুকিয়ে টেনিস বলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা। সোমবার পৃথিবীটাই পাল্টে গেল।
লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁকে আর খেলতে হবে না। বরং তাঁর প্রতিটা ডেলিভারির সাক্ষী থাকতে পারে গোটা ভারত। বন্ধুদের জায়গায় ব্যাট হাতে থাকবে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানরা।
সোমবার আইপিএল নিলাম যখন চলছিল, টিভির সামনে চোখ রেখে বসে ছিলেন বছর পঁচিশের এক বোলার। কয়েক মিনিটে তিনি দশ লক্ষ থেকে হয়ে উঠলেন তিন কোটির ক্রিকেটার। তিনি— টি. নটরাজন। আইপিএল গ্রহে গলি থেকে রাজপথের নতুন কাহিনী। দশম আইপিএলের নিলামে সেরা চমক।
নিলামের শেষে ফোনে তাঁকে যখন ধরা হল তখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। ‘‘আমি এখনও ভাবতেই পারছি না। আমার মাকে বলা মাত্র তো উনি কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন। বন্ধুরাও বলল, আজ ভাল কিছু খাওয়াতে হবে।’’ দ্রুত বাস্তবে ফিরছেন নটরাজন, ‘‘এত দাম দেওয়ায় এখন প্রত্যাশাও অনেক থাকবে। সেই চাপটা আমায় নিতে হবে।’’ বাঁ হাতি মিডিয়াম পেসার তিনি। ইয়র্কার দিতে ওস্তাদ। কিন্তু ক্রিকেটের এই উঠতি তারকা এক সময় ভেবেছিলেন বাবার মতোই তাঁকেও হয়তো কুলির কাজ করেই জীবন কাটাতে হবে। ‘‘ক্রিকেটই আমাকে নতুন করে পথ দেখালো। আমি খুব গরীব ঘরের ছেলে। বাবা কুলি। মায়ের মুরগির মাংসের দোকান। আইপিএল তো দূরের কথা, রঞ্জি খেলতে পারব সেটাই এক সময় ভাবতে পারিনি,’’ বলছেন নটরাজন।
ছোটবেলায় মা-বাবা পড়াশুনোর চাপ দিলেও সালেমের পাড়ায় লুকিয়ে লুকিয়ে টেনিস বলের টুর্নামেন্ট খেলতে চলে যেতেন নটরাজন। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই হাসতে শুরু করেন। ‘‘ছ’বছর বয়স থেকেই টেনিস বল দিয়ে খেলতাম। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে টেনিস বলের টুর্নামেন্টে খেলতে যেতাম,’’ বলছেন প্রীতি জিন্টাদের কিংগস ইলেভেনের নতুন বোলার।
তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ভাল পারফর্ম করার পর এবার আইপিএল-এর চোখধাঁধানো মঞ্চকে পাখির চোখ করছেন নটরাজন।
তামিলনাড়ুর সালেমে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর প্রতিবেশী জয়প্রকাশের আবদারে চেন্নাইয়ে যান ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেখানে স্থানীয় এক ক্লাবের হয়ে খেলার পর টিএনপিএল (তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের) স্কাউটদের নজরে আসেন। ‘‘টিএনপিএল আমার জন্য খুব বড় একটা মঞ্চ ছিল। সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। নিজের ডেলিভারি আরও কী করে ভয়ঙ্কর করা যায়। ইয়র্কার আরও ভাল কী করে করা যায় সব কিছুই টিএনপিএলে শিখেছি। আইপিএলের ডেথ ওভারে আরও বেশি করে ইয়র্কার দিতে চাই,’’ বলছেন নটরাজন।
আরও পড়ুন-
অটোচালকের সংসারে আলো আনল ক্রিকেট
তবে নটরাজনও বহু অন্ধকার দিন দেখেছেন। সালেমের স্থানীয় কিছু ক্লাবের হয়ে খেলার পর ২০১৪-১৫ মরসুমে রঞ্জিতে ডাক পান। বাংলার বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু তারপরই বাদ পড়েন দল থেকে। ‘‘খুব খারাপ সময় গিয়েছিল। প্রত্যেক দিন কাঁদতাম। ভাবতাম খেলতে পারব তো। টিএনপিএলে ভাল খেলার পর এ বার রঞ্জি খেললাম। নিশ্চয়ই ভাল খেলেছি বলেই আইপিএলে সুযোগ পেলাম,’’ বলছেন নটরাজন। সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রচুর পরিশ্রম করে সেই অ্যাকশন শুধরে নেন নটরাজন।
মিচেল জনসনের ভক্তের ফিনিক্সের মতো উত্থানের পিছনে নাম উঠে আসছে তাঁর প্রতিবেশী জয়প্রকাশের। ‘‘জয়প্রকাশ স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। এ বার আইপিএলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে আরও শিখতে পারব,’’ বলছেন নটরাজন। তাঁর সেরা অস্ত্র কাটার। যে কারণে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ইতিমধ্যেই তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আইপিএল উড়ানে চড়ে কতদূর উড়তে পারবেন নটরাজন? এপ্রিল-মে মাসেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy