সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে দেখতেই মনে হয়েছিল কলকাতায় গিয়ে ক্রিকেট খেলতে হবে। যে কারণে দিল্লি ছেড়ে কলকাতার বেলগাছিয়া ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের হয়ে ব্যাট হাতে নেমে পরা। মাত্র দু’টি ম্যাচই খেলেছিলেন সেই সময়। কিন্তু কলকাতা ও ইডেন গার্ডেন্সের প্রতি প্রেমটা কাটাতে পারেননি কিছুতেই। অনেকটাই তো প্রিয় দাদাকে ঘিরে। বাকিটা মামা বাড়ির টান। আর সেই প্রথম সিংহর সামনে এখন প্রথম আইপিএল।
আরও খবর: চাকদহ থেকে কেকেআর, সায়নের চোখে এখন স্বপ্ন
সৌরভকে একবার কাছ থেকে দেখার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন পাঁচ বছর পর। কিন্তু দেখা হয়নি। গত বছরই সই করেছিলেন কুমারটুলি ক্লাবে। এ বারও দুটোর বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি। তেমন ভাবে রানও পাননি। কিন্তু আবারও ফিরে আসতে চান এই কলকাতায়। যত বার সম্ভব। আরও খেলতে চান কলকাতার ক্লাবের হয়ে। দাদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল? প্রশ্নটা শুনতেই একরাশ হতাশা নেমে এল প্রথম সিংহের গলায়, ‘‘না হয়নি। চেষ্টা করেছিলাম এক বার। তখন দাদা ইডেনে ছিল। পাঁচ বছর আগে যখন প্রথম বার এসেছিলাম বেলগাছিয়া ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে। কিন্তু ইডেনের গেট থেকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বলেছিল পরে আসতে। তার পর আর যাওয়া হয়নি।’’ আইপিএল-এ নাম লিখিয়ে আবার দাদার স্বপ্নে মশগুল প্রথম। যদি ইডেনে খেলতে এসে দেখা হয়ে যায়। তার আগে দলে জায়গা করে নিতে হবে। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এখন থেকেই।
রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে ব্যাট হাতে প্রথম।
ব্যাট হাতে দলের হয়ে ওপেন করতেই বেশি ভালবাসেন। নিজেকে ভারতীয় দলের ওপেনার হিসেবেই দেখতে চান। এখন নিয়মিত খেলেন রেলওয়েজে। সঙ্গে প্রথম বার ডাক এসে গিয়েছে আইপিএল-এ। গুজরাতে আগেই ট্রায়াল দিয়ে এসেছিলেন। কিন্ত ডাক পাবেন ভাবেননি। অদ্ভুত একটো দোলাচলের মধ্যে ছিলেন। নিলামের সময় ব্যস্ত ছিলেন অনুশীলন ম্যাচ খেলতে। আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে ফিরেই খবরটা এল কানে, ‘‘প্রথম সিংহ সোল্ড আউট’’। বলছিলেন, ‘‘শুনে বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। তার পর মোবাইলে দেখলাম নিজের নাম।’’ এ বার সামনে অনেক বড় লড়াই। আইপিএল-এর মতো টুর্নামেন্ট। যদিও তার আগে মাথায় ঘুরছে বিজয় হাজারে ট্রফি। সেখানে রেলের হয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে প্রথম দলে জায়গা করে নিতে চান তিনি। কলকাতায় আসার পিছনে অবশ্য অন্য একটা যুক্তিও রয়েছে প্রথমের। প্রথমটা যদি হয় সৌরভ, তা হলে দ্বিতীয়টা অবশ্য স্পিন বল খেলা— ‘‘শুনেছিলাম কলকাতায় অনেক ভাল ভাল স্পিনার রয়েছে। কলকাতা খুব পেশাদার। আমি যেহেতু ওপেন করি খুব বেশি স্পিন বল খেলার সুযোগ হয় না। কলকাতায় খেলে স্পিনারদের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা বাড়াতে চেয়েছিলাম। যে কারণে এ বার কুমারটুলির হয়ে কমফোর্ট জোনের বাইরে বেরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছিলাম শুধু স্পিন খেলব বলে।’’
বিজয় হাজারে ট্রফি শেষে যে ক’দিন সময় পাবেন, কোকাবুরা বলে অনুশীলন করার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। সঙ্গে নেবেন সেই সব ক্রিকেটার বন্ধুদের যাঁরা ইতিমধ্যেই আইপিএল খেলে ফেলেছেন। এ ভাবেই প্রস্তুতি নিতে চান দিল্লির বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কলকাতার সঙ্গে সম্পর্কটা শুধু ক্রিকেটের জন্য নয়। প্রথম সিংহর মা পুরোপুরি কলকাতার। এখানেই বেড়ে ওঠা, বাগবাজারের মামা বাড়িটাও যে খুব পছন্দের। বাংলা পুরো বুঝতে পারেন, অল্প অল্প বলতেও পারেন। কলকাতা প্রেমটা তাই সৌরভের সঙ্গে মামা বাড়ির জন্যও। স্বপ্ন দেখেছিলেন, এখানে এসে দারুণ ভাল খেলবেন আর তা দেখে সৌরভ স্বয়ং তাঁকে ডেকে দেখা করবেন। কিন্তু তেমনটা হয়নি। এ বার সামনে আইপিএল। সেখানে নিজেকে প্রমাণ করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নজর কাড়তে চান তিনি। যদি, ইডেনের মাঠে দাদা পিঠ চাপড়ে বলে ওঠেন, ‘ওয়েল প্লেড প্রথম’। স্বপ্নটা এখনও একই ভাবে দেখেন দিল্লির ছেলেটা। কলকাতা আজও টানে, সে যতই আইপিএল-এর দল গুজরাত হোক না কেন।
ম্যাকালাম, রায়নাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করে নেওয়ার স্বপ্নটাও দানা বাঁধতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। সুরেশ রায়নার ব্যাটিং এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানকে সব সময়ই টানে। তার সঙ্গে খেলে নিজের খেলার উন্নতি করতে চান। টিপস নিতে চান ম্যাকালামের থেকেও। কিন্তু সেই স্পিন বোলিং। আজও তাঁকে ভাবায়। আর যদি সামনে পড়ে যান রবিচন্দ্রন অশ্বিন? তাঁকেই সব থেকে বেশি ভয়। অশ্বিনের স্পিন খেলতে যে ভয় পায় গোটা বিশ্ব। তিনিও তো ব্যাতিক্রম নন। কিন্তু যে স্পিন বোলিং খেলতে কলকাতায় আসা সেটাই এ বার কাজে লাগাতে চান প্রথম। আর প্রথম বার মুখোমুখি হতে চান তাঁর আইডল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy