Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডিজাইনার পিচেও স্বস্তি নেই বিরাটদের

তিন মাস পরেই প্রেমের উৎসব। একটু দূরের সমুদ্রসৈকতে উদ্দাম ভালবাসায় মাতবে যুবক-যুবতীরা। আর তাই নিয়েই নাকি উৎসবে মেতে উঠবে গোটা বিশাখাপত্তনম। এই নিয়ে প্রায় রোজই শহরের কোথাও না কোথাও চলছে প্রতিবাদ, মিছিল, ধর্না।

কুম্বলের নজরদারিতে দুই স্পিনার, অমিত ও অশ্বিন।

কুম্বলের নজরদারিতে দুই স্পিনার, অমিত ও অশ্বিন।

রাজীব ঘোষ
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৫
Share: Save:

তিন মাস পরেই প্রেমের উৎসব। একটু দূরের সমুদ্রসৈকতে উদ্দাম ভালবাসায় মাতবে যুবক-যুবতীরা। আর তাই নিয়েই নাকি উৎসবে মেতে উঠবে গোটা বিশাখাপত্তনম। এই নিয়ে প্রায় রোজই শহরের কোথাও না কোথাও চলছে প্রতিবাদ, মিছিল, ধর্না।

এমনিতেই সৈকতনগরীর রাস্তাঘাটে, বিচে প্রেম-ভালবাসার মুক্তমনস্কতার প্রচুর ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তার উপর আবার প্রেমের উৎসব! বিশাখাপত্তনমকে গোয়া বানানোর পরিকল্পনা কিছুতেই মেনে নেবেন না এখানকার রক্ষণশীলরা। তাতে রাজনীতির রঙও মিশছে রোজ কিছু না কিছু। ফলে প্রায়ই অশান্তির কালো ধোঁয়া পাক দিয়ে উঠছে এই শহরের নির্মল আকাশে।

আজ টিভিতে

ভারত বনাম ইংল্যান্ড

দ্বিতীয় টেস্ট (স্টার স্পোর্টস ১, সকাল ৯-৩০)

একেই নোট নিয়ে ঘোঁট পাকায় সারা দেশের মতো এ শহরের মানুষও বিভ্রান্ত। শহরে পা দেওয়ার পর থেকে দু’দিনে সাকুল্যে দু-একটা খোলা এটিএম ও তার সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলোতেও হইচই। এর উপর যদি ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামেও অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে, তা হলে তো কথাই নেই। গোদের উপর বিষফোঁড়া।

কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে শহরের অদূরে টেস্ট ক্রিকেটের আসরে অশান্তির আগুন জ্বলার আশঙ্কা কেন?

কাঠখোট্টা রাজকোটের শক্তপোক্ত উইকেটে হাজার খানেক রান ওঠার পর যে এ বার মনোরম উপকূলে স্পিনারদের স্বর্গ বানানো হয়েছে। আর স্পিনারদের পৌষ মাস মানে ব্যাটিং-বীরদের হয়তো সর্বনাশ— এ থেকে অশান্তির আশঙ্কা তো থাকছেই। রাজকোটে ড্রয়ের পরেই যা অশান্তি হয়েছিল।

পুরী একঘেয়ে লাগলে বাঙালির ওয়াল্টেয়ারে ছুটে আসার দিন যেমন চলে গিয়েছে, টার্নিং উইকেট বানিয়ে এই ইংল্যান্ডকে শায়েস্তা করার ছকও যে এখন অতীত, তার ট্রেলার শেষ দিনের রাজকোটই দেখিয়ে দিয়েছে। দেখিয়েছেন মইন আলি, আদিল রশিদ ও জাফর আনসারিরা।

পাল্টা ঘূর্ণিঝড়ে বিরাটদের শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরাতেই যেন আগমন এশীয় স্পিনত্রয়ীর ও তাঁদের কোচ প্রাক্তন পাক স্পিনার সাকলিন মুস্তাকের। রাজকোটে তিন স্পিনারে ১৩ উইকেট তোলার পরই যে সাকলিনের কোচিং মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অ্যালিস্টার কুকদের বোর্ড। বুধবার মাঠে সেই সাকলিনকেও পাওয়া গেল বেশ খোশমেজাজে।

শরীর, মনে সুস্থতা ফেরাতে যে ভাইজ্যাগে ছুটে আসে মানুষ, সেই ভাইজ্যাগেই এখন ভারতীয় ক্রিকেটের সম্মান ফেরানোর লড়াই। সেই লড়াইয়েই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই চারমূর্তি। গ্রেম সোয়ান, মন্টি পানেসরোত্তর জমানায় ভারতে ইংল্যান্ডের বেহাল দশার আগাম অনুমান করে যাঁরা প্রথম টেস্ট শুরুর আগে থেকে আতঙ্কে ছিলেন, সেই ব্রিটিশ সাংবাদিককুল এখন ফুর্তিতে।

ওঁ ক্রিকেটায় নমঃ

বাইশ গজে পুজো। কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেনুতে এমন দৃশ্য বিরল। বিশাখাপত্তনমের ওয়াইএসআর রেড্ডি স্টেডিয়ামে
এমনই ঘটনা দেখা গেল। শহরে প্রথম টেস্ট ম্যাচ। তার আগে বুধবার সকালে এই পুজো সেরে নিলেন অন্ধ্র ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা।
কিন্তু কেন এই পুজো? সংস্থার এক কর্তা জানালেন, যাতে প্রকৃতি সন্তুষ্ট থাকে, ঝড়-বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে না যায়, তারই প্রার্থনা করে এই পুজো।
তিন বছর আগে হুদহুদের মতো ভয়ঙ্কর সাইক্লোনে মাঠ তছনছ হয়ে যাওয়ার পর ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেন না এসিএ কর্তারা।

শুকনো খটখটে রাজকোট থেকে বেরিয়ে ছবির মতো সুন্দর বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রসৈকতে এসে পড়াটা যদি এই খোশমেজাজের একটা কারণ হয়, তা হলে আর একটা অবশ্যই এখানকার উইকেট। টার্নিং পিচ হবে জেনেও ঘাবড়াচ্ছে না ব্রিটিশ মিডিয়া বা অ্যালিস্টার কুকের টিম। বোর্ডের পূর্বাঞ্চল কিউরেটর আশিস ভৌমিকও এ দিন দ্বিতীয় দিন থেকে বল ঘোরার পূর্বাভাস শুনিয়ে দিলেন। এই উইকেটের সাময়িক দায়িত্বে তিনি। উৎফুল্ল এক ইংরেজ সাংবাদিক তো নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ধার করে টুইটও করে ফেললেন, ‘‘বিশাখাপত্তনমে ঘূর্ণি উইকেট? এ বার বোধহয় ইংল্যান্ডের ক্রিকেটেও ‘আচ্ছে দিন’ আসছে।’’

কিন্তু ভারতের গেমপ্ল্যানটা কী? কী ভাবে বিপক্ষকে চাপে ফেলার কথা ভাবছেন?

সাংবাদিক বৈঠকে বিরাট কোহালি এ দিন এই প্রশ্ন শুনে কিন্তু তাঁর স্পিনারদের প্রসঙ্গের সম্ভাব্য ‘জ্যাম’ এড়াতে ‘ক্যাচ দ্য বল’-এর বাইপাস ধরলেন। বুদ্ধিমান ক্যাপ্টেন বললেন, ‘‘আমাদের আরও ভাল ক্যাচ নিতে হবে। হাফ চান্সগুলোকে আরও বেশি করে নিতে হবে। ঠিকঠাক ক্যাচ নিয়ে বিপক্ষকে অনেক চাপে ফেলা যায়। যেটা দক্ষতা বা পিচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’’

রাজকোটে প্রথম দু’দিনে পাঁচ-পাঁচটা ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হাত থেকে পিছলে যাওয়ার পর সে দলের ক্যাপ্টেন এটা বলতেই পারেন। এই দু’দিনের প্র্যাকটিসে ক্যাচ অনুশীলনের বহরও ছিল দেখার মতো। বুধবার তো বিরাট সাপোর্ট স্টাফ টিমকেও ক্যাচ প্র্যাকটিস দিচ্ছিলেন। কিন্তু পুরো প্রেস কনফারেন্সে সযত্নে নিজের স্পিনারদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াটাকে বিশাখাপত্তনমে বেড়াতে এসে রুশিকোন্ডা বিচ না দেখে চলে যাওয়ার মতোই বিস্ময়কর লাগল।

উল্টে কি না হুঙ্কার ছাড়ছেন ক্যাপ্টেন কুক! বুধবার দুপুরে প্র্যাকটিসে এসে ইংরেজরা প্রায় সবাই দফায় দফায় এত মন দিয়ে উইকেট দেখে গেলেন, যেন প্রতিটা ফাটল মুখস্থ করে ফেলতে চান। তার আগে জেনেও নিয়েছেন, কেমন বাইশ গজে আগামী পাঁচ দিন ঘর করতে হবে তাঁদের। বিরাট যা বলেননি, কুক সেটাই বললেন, ‘‘আমাদের স্পিনারদের দিয়েই এখানে ভারতকে আমরা চাপে রাখতে পারি। রাজকোটের পারফরম্যান্স যদি এখানেও ধরে রাখতে পারে স্পিনাররা, তা হলে তো কথাই নেই। এর জন্য সাকিকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। ও-ই আমাদের ছেলেদের মধ্যে কনফিডেন্সটা জুগিয়েছে।’’

আর সাকি, মানে সাকলিন মুস্তাক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে যিনি সবচেয়ে বেশি উইকেট (৮২) পেয়েছেন ভারতের বিরুদ্ধে, ঘূর্ণি উইকেটের প্রসঙ্গ তুলতে তিনি শুধু তির্যক হাসি হেসে বললেন, ‘‘আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় ক্যায়া।’’ হাসির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে, ‘ওদের অশ্বিন, মিশ্রর তোপ আছে, তো আমাদেরও মইন, রশিদ, আনসারি মিসাইল আছে’— এই হুঁশিয়ারি।

আগের দিনই এই টেস্টে কে এল রাহুলের ওপেন করতে নামার ইঙ্গিতটা ছিল স্পষ্ট। এ দিন সেটা আরও স্পষ্ট করে দিয়ে ক্যাপ্টেন বলে দিলেন, ‘‘রাহুলই যেখানে আমার ফার্স্ট চয়েস ওপেনার, সেখানে ম্যাচফিট হতেই ওর দলে যোগ দেওয়াটা কী এমন অস্বাভাবিক?’’ এ দিন রাহুলের নেটে ব্যাট করা, মাঠে ফিল্ডিং করা— এ সব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন গম্ভীর গৌতম। যেমন দেখা গিয়েছিল ইডেন টেস্টের আগে, দু’বছর পর তাঁর টেস্টে ফেরার দিন। এ বার অবশ্য তিনি বিদায়ের মুখে।

ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে অনিশ্চয়তাও অনেক কেটে গেল এ দিন। হাতের চোটের অবস্থা এখন অনেক ভাল।। ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর ও মহম্মদ শামিকে নিয়ে যখন মাঠে দীর্ঘক্ষণ কিপিং প্র্যাকটিস করলেন ঋদ্ধি, তখনও অবশ্য তাঁর ডান তালুতে স্ট্র্যাপ লাগানো। পরে অবশ্য ব্যাটও করলেন নেটে।

এগুলো নিয়ে কোহালিকে বিরাট কোনও চিন্তা করতে না হলেও যা তাঁকে বেশি ভাবাতে পারে, তা হল ‘বুমেরাং’। পরের পাঁচ দিনে দ্বিতীয় টেস্টের বাইশ গজ যা হয়ে উঠতে পারে।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

অন্য বিষয়গুলি:

designer pitch Virat kohli Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE