২১ রানে ৫ উইকেট। ওয়াকায় বিধ্বংসী ফিল্যান্ডার। -রয়টার্স
ওয়াকার ব্যাটিং বিপর্যয় হোবার্টের দ্বিতীয় টেস্টেও তাড়া করছে অস্ট্রেলিয়াকে। এ দিন ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কম রান তুলে লজ্জার নজির গড়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গেল ৮৫ রানে। ভার্নান ফিল্যান্ডারের দৈত্য হয়ে ওঠার দিনে লড়লেন একমাত্র অস্ট্রেলীয় ক্যাপ্টেন স্টিভ স্মিথ। তাঁর অপরাজিত ৪৮ বাদ দিলে বাকিটা সুইং বোলিংয়ের সামনে স্রেফ অসহায় আত্মসমর্পণের কাহিনি।
চূড়ান্ত হতাশ অস্ট্রেলীয় কোচ ডারেন লেম্যান। দিনের শেষে তুলোধনা করেছেন নিজের ব্যাটসম্যানদের। সটান বলে দিয়েছেন, ‘‘বল সুইং করলেই দেখা যাচ্ছে আমাদের ব্যাটসম্যানদের সব কারিকুরি খতম। সুইংটা এরা খেলতেই শেখেনি!’’
ক্রিজে আজ সাকুল্যে ৩২.৫ ওভার টিকে ছিলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটমস্যানরা। যার পর স্কোরবোর্ডটা এই রকম: ১, ১, ৪, ৪৮ ন.আ., ০, ৩, ৩, ১০, ৪, ৮, ২। টস জিতে মেঘলা আকাশ আর পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন দু’প্লেসি। তবে তাঁর বোলাররা যে পিচ আর আবহাওয়া কাজে লাগিয়ে এতটা আতঙ্ক তৈরি করবেন, সেটা হয়তো নিজেও আঁচ করেননি। ডেভিড ওয়ার্নার (১), উসমান খোয়াজা (৪), অ্যাডাম ভোজেসের (০) মতো তারকাদের অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ভাঙার আসল কাজটা করেন ফিল্যান্ডার। যিনি মাত্র ১০.১ ওভার বল করে ২১ রানে পাঁচ উইকেট নিলেন। কাইল অ্যাবটের তিন উইকেট এল ৪১ রানে। দিনের শেষে পাঁচ উইকেটে ১৭১ তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাফ দু’প্লেসিরা প্রথম ইনিংসে আপাতত এগিয়ে ৮৬ রানে।
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলে হোবার্ট টেস্টের প্রথম দিন আবার ফিরিয়ে এনেছে ২০১১-য় কেপ টাউনে ৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্নের স্মৃতি। গত বছরের অ্যাসেজে ট্রেন্ট ব্রিজে ৬০ রানে চুরমার হওয়ার কথাও উঠছে। অনেকেই আবার টানা পাঁচ নম্বর টেস্ট হারের কালো ছায়া দেখছেন এখনই। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে স্টিভ স্মিথের টিমের সুইং সামলানোর অদক্ষতা নিয়ে।
দিনের শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে লেম্যানও সেটাই বললেন। ‘‘লুকোনোর চেষ্টা করে লাভ নেই। আমাদের ব্যাটসম্যানরা সুইং বোলিংয়ের সঙ্গে একদম মানিয়ে নিতে পারছে না। এই খামতি কাটিয়ে উঠতে নেটে আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করছি কিন্তু মাঠে তার কোনও প্রতিফলন হচ্ছে না।’’ তাঁর জমানায় ব্যাটিং ব্যর্থতা টিমের অন্যতম অসুখ হয়ে উঠেছে, বলছেন কেউ কেউ। টানা চার টেস্ট হারার পর দল নির্বাচনকেও অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ফেলা হচ্ছে। লেম্যান অবশ্য ফের দাবি করেছেন, এটাই এখন অস্ট্রেলিয়ার সেরা টিম। বলেন, ‘‘আমরা মনে করি এটাই আমাদের সেরা স্কোয়াড। আজকের পারফরম্যান্সের পর সমালোচনা হওয়াটা স্বাভাবিক। সেটা ন্যায্যও। তবে দিনের শেষে আমাদের টিম হিসাবে কঠিন সময়ে চাপের মুখে খেলা বের করাটা শিখতে হবে। গত সাড়ে চার টেস্টে সেটা পারিনি আমরা। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে পারাই এখন অস্ট্রেলিয়ার প্লেয়ার এবং কোচিং গ্রুপের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’’
পারথে ১৭৭ রানে হারার পর সমালোচক ও সমর্থক দু’পক্ষেরই প্রবল চাপ রয়েছে স্মিথ বাহিনীর উপর। সেই চাপের মুখে প্রথম ইনিংসে ফের ভেঙে পড়ল টিম। যেটা ভাবাচ্ছে অস্ট্রেলীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। লেম্যানও বলেছেন, ‘‘সমস্যা হল, ব্যাটিংয়ে একবার ধস নামা শুরু হলে সেটা থামানোর মতো কোনও পার্টনারশিপ তৈরি হচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে হতাশার।’’
এ দিন চা বিরতির পর মিচেল স্টার্ক দশ বলের একটা ভয়াবহ স্পেলে কুক, এলগার ও দুমিনিকে ফিরিয়ে একটা পাল্টা দেন। সঙ্গে দু’উইকেট নিয়ে হ্যাজেলউডও তাঁকে যে ভাবে সাহায্য করলেন, তাতে কিছুটা আশাবাদী হতে পারেন স্মিথ। আপাতত ব্যাটিং লজ্জা ঢাকতে সেই বোলারদের দিকেই তাকিয়ে অস্ট্রেলিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy