Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কেরল থেকে বাদ পড়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম হিউম কী বুঝিয়ে দেব

মুখোমুখি। ম্যাচের পর মুতু-হিউম। শুক্রবার। ছবি: উৎপল সরকার।

মুখোমুখি। ম্যাচের পর মুতু-হিউম। শুক্রবার। ছবি: উৎপল সরকার।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

যুবভারতীর টানেল দিয়ে বেরিয়েই দে ছুট ড্রেসিংরুমের দিকে। চার পাশে তাঁর নামের জয়ধ্বনি উঠলেও তাঁর হেলদোল নেই। বরং চিন্তিত মুখ। প্রবল ব্যস্ততা।

শুক্রবার ম্যাচ শেষে হিউমের অভিব্যক্তি দেখলে অনেকেই ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন! কী হল রে বাবা, হ্যাটট্রিক করে আটলেটিকো দে কলকাতাকে সেমিফাইনালে তুলেও ম্যাচের নায়কের এমন হাবভাব কেন?

আসলে হিউমের চিন্তার নাম বোরহা ফার্নান্ডেজ।

হ্যাটট্রিকের বলগুলো সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে যেতে চান কানাডিয়ান স্ট্রাইকার। একটা বল ইতিমধ্যেই তাঁর সুটকেসে জায়গা করে নিয়েছে। এ বার পরের বলটার পালা। কিন্তু সেটা সংগ্রহ করার আগেই হিউমকে নাকি মজা করে মাঠে হুমকি দেন বোরহা, ‘‘এই বলটা আমার। তোমাকে দেব না।’’

অন্য হিউম

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

ব্যাস! আর কোথায় যায়। সব ছেড়েছুড়ে তখন বোরহার পিছনে হিউম। কিন্তু ম্যাচের সেরার পুরস্কারও তো নিতে হবে। সেই অনুষ্ঠান কোনও মতে শেষ করেই বলের খোঁজে ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটলেন হিউম। কিছুক্ষণের মধ্যে বল আদায় করলেন ঠিকই। তবে ওই যে বলটা বগল চাপা করে রাখলেন, তার পর হোটেলের ঘরে ঢুকে নিশ্চিন্ত হলেন হিউম। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘‘হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করতে চাই। এক সঙ্গে তিনটে বল বাড়ি নিয়ে যাব।’’

হিউমের গা ঘেঁষে যাওয়া তাঁর সব সতীর্থ একবার করে তাঁর বলটায় টোকা মেরে গেলেন। কিন্তু শুক্রবারের নায়ক মাঠের ভিতরে যেমন বুক চিতিয়ে টিমকে আগলালেন, তেমনই মাঠের বাইরে সামলালেন বলটাও। এই সাফল্য যে তাঁর একার নয়, সেটাও মেনে নিলেন হিউম। তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘হ্যাটট্রিকটা আমি দ্যুতিকে উৎসর্গ করতে চাই। ও না থাকলে ও রকম পাসও পেতাম না। বল জড়োও করতে হত না।’’

এখানেই থামেননি এটিকের সুপার স্ট্রাইকার। দ্যুতির পারফরম্যান্সে এতটাই মুগ্ধ হিউম যে, তিনি বলেই ফেললেন, ‘‘দ্যুতি আসার পরে টিমের চেহারা বদলে গিয়েছে। ওর বয়স কম। কিন্তু যে সব পাস-থ্রু বাড়ায়, তাতে ওকে অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার মনে হয়।’’ আর দ্যুতি? তাঁর মুখে তো আবার একটাই কথা লেপ্টে, ‘‘এই জয় গোটা টিমের জয়।’’

দ্যুতি যাই বলুন না কেন, এ দিনের নায়ক টিম নয়। একা হিউমই। যে ভাবে গোলগুলো করলেন, তাতে তাঁর কৃতিত্ব কম করে দেখলে সেটা অবিচারই হবে। যেটা হিউমের সঙ্গে করেছে সচিন তেন্ডুলকরের টিম। কিন্তু কথায় আছে না, কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেই ফেললেন, ‘‘আমি এখনও বুঝতে পারিনি কেন হিউমকে ছেড়ে দিল কেরল। যাক গে, ভালই হয়েছে। লক্ষ্মীলাভ হয়েছে আমাদের।’’

আর হিউম? তিনিও কি সব ভুলে গিয়েছেন? বাঁ হাতের ট্যাটুতে কয়েকটা ইংরেজি হরফ। যার বাংলা মানে হল, নিঃশ্বাস নেওয়া বড় কাজ নয়। বড় ব্যাপার, যে কাজ নিঃশ্বাস বের করে দেবে। এই ট্যাটু কেরল ব্লাস্টার্স ছাড়ার পরে তিনি করেছেন কি না জানা নেই। তবে কেরলের তেতো স্মৃতি যে তাঁর মনে এখনও তরতাজা, সেটা বুঝিয়ে দিলেন হিউম। প্রথমে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও পরে বললেন, ‘‘কেরল থেকে ছাঁটাইয়ের পরেই একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। হিউম কী, বুঝিয়ে দিতে হবে। আমার লক্ষ্যে আমি কিছুটা এগিয়েছি ঠিকই। কিন্তু এখনও অনেক পথ চলা বাকি।’’

হিউমের কথাতেই স্পষ্ট, শুধু সেমিফাইনালের পাসপোর্ট নিয়ে তিনি খুশি নন। এ বার আইএসএলের মুকুটটাও মাথায় তুললে চান।

সচিন তেন্ডুলকরের টিমে হয়নি। হিউম এখন দাদার টিমে স্বপ্ন দেখছেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE