অ্যাসেজ জয়ের উৎসব। বান্ধবীকে চুমু স্টুয়ার্ট ব্রডের। মেয়ের সঙ্গে খুনসুটি ক্যাপ্টেন কুকের। -এএফপি
পমিসাইড।
হরর শো। জোক। জাতীয় লজ্জা। ব্যঙ্গেরও অযোগ্য।
ট্রেন্টব্রিজে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া ৬০ অল আউট হয়ে যাওয়ার পর এ সব শব্দ দিয়ে সাজানো হয়েছিল দুই দেশের সংবাদপত্রের শিরোনাম।
শনিবার সকালে দশ ওভার গড়াতে না গড়াতে সব শেষ। দু’দিন আগে যে সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠেছিল, এ দিন তা অমোঘ পরিণতি পেল মাত্র। ৫৯৯ দিন পর অ্যাসেজের ক্ষুদ্র অথচ বিপুল ভস্মাধারের মালিক হল ইংল্যান্ড।
আর তাই এ দিন দু’দেশের মিডিয়া দু’রকম আবেগ প্রকাশে অনেকটাই সংযত। যে ক্লাইম্যাক্স ঘিরে বিন্দুমাত্র নাটক ছিল না, রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা ছিল না, যে কৃতিত্ব ছিল স্রেফ কয়েকটা ওভারের ব্যাপার, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে এসে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া যেন অনেকটাই স্তিমিত।
ইংল্যান্ডের চেয়েও অনেক বেশি করে অস্ট্রেলিয়া। অ্যালিস্টার কুকদের দেশের বারবার আনন্দের সব মুহূর্ত ঝালিয়ে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। আপত্তি কেউ করছেনও না। বেন স্টোকস অল্প বিয়ারপানেই বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার জন্য সলজ্জ ক্ষমা চাইছেন। ট্রেন্টব্রিজের নায়ক স্টুয়ার্ট ব্রডের ফ্যান ক্লাব সদস্যরা টুইটারবিশ্বকে আগাম সতর্ক করে রাখছেন, এ বার ‘ব্রডির’ পরপর ছবি আপলোড হতে চলেছে। ক্যাপ্টেন কুক, যিনি ঘরের মাঠে দুটো অ্যাসেজজয়ী ইংরেজ অধিনায়কের তালিকায় তৃতীয় হলেন, যিনি কাঁদবেন না বলেও চোখের জল চেপে রাখতে পারলেন না, নিজের টুপি নিয়ে মেয়েকে পরিয়ে দিচ্ছেন। প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক অ্যাডাম হোলিওক চ্যানেল নাইনের কমেন্ট্রি বক্সে ঢুকে সদর্পে সেলফি তুলছেন আর তাঁকে উপেক্ষা করে, তাঁর দিকে পিছন করে বসে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট নক্ষত্রপুঞ্জ। জো রুট টেস্ট ব্যাটসম্যান র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছেন, বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অন্য দিকে, লর্ডসের একটা জয় বা স্টিভ স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরি বাদ দিলে চলতি অ্যাসেজে ব্যাগি গ্রিনের সবুজ ক্রমশ ম্রিয়মাণ দেখিয়েছে। হতাশার এক গহ্বর থেকে আরও গভীর খাদে ডুবতে ডুবতে অস্ট্রেলীয় গর্ব বিলুপ্তপ্রায়। টিম নিয়ে প্রাক্তনদের মনোভাবও বিরক্তি আর ঘৃণার চরম সীমা পেরিয়ে এখন হাল ছেড়ে দেওয়া একটা জায়গায়।
রিকি পন্টিং যেমন। আবেগ নয়, রুক্ষ-শুষ্ক ভাবে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলে দিয়েছেন, এ লজ্জার পর টিমের অর্ধেকে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে দিলে তিনি অবাক হবেন না। ‘‘যে টিমটা ইংল্যান্ডে এসেছে, তার মধ্যে অন্তত আট জন আছে যারা হয়তো আর কোনও দিন টেস্ট খেলবে না। হ্যাঁ, সংখ্যাটা খুব বড়। দলের অর্ধেক,’’ এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে বলেছেন পন্টিং। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পুরো ব্যাপারটা ভেঙে ভুলত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সব তথ্য সামনেই রয়েছে। আমরা ৬০ অল আউট হয়ে গেলাম আর ওই এক পিচে ইংল্যান্ড ৩৯১ রানে ডিক্লেয়ার করল। বোঝাই যাচ্ছে, আমরা ভাল ব্যাট করিনি। সম্ভবত ভাল বলও করতে পারিনি। দ্বিতীয় দিন, ব্যাটিংয়ের পক্ষে সবচেয়ে ভাল অবস্থাতেও সাতটা উইকেট চলে গেল। আসল ব্যাপারটা হল, এই টিম যথেষ্ট ভাল নয়। ওরা কী বলবে বা কাকে দোষ দেবে, সে সবে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।’’
দুই অস্ট্রেলীয় ওপেনার ক্রিস রজার্স এবং ডেভিড ওয়ার্নার দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করলেও তাতে পন্টিংয়ের হতাশা কমছে না। ‘‘ওরা নতুন বলের বিরুদ্ধে কঠিন সময়টা এত ভাল সামলে দিল। কিন্তু তার পর দু’জনেই বিশ্রী শট খেলে আউট হল। যে শট নিয়ে ওদের গর্ব হওয়া উচিত নয়,’’ বলছেন পন্টিং।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে তাঁর কলামে স্যর জিওফ বয়কট ব্যঙ্গের প্রতিমূর্তি। অ্যাসেজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার ২-১ জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা ইংরেজ হা-হুতাশ করছেন, কেন তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে বুকির অফিসে বাজি ধরেননি! তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, অস্ট্রেলিয়া এত জঘন্য ক্রিকেট খেলতে পারে। ‘ওদের প্রতি আমার কোনও সমবেদনা নেই। আমাদের ৫-০ হারিয়ে ওরা এসেছিল বড়াই করতে। যে যখন পেরেছে, প্রকাশ্যে আমাদের ক্রিকেটারদের ব্যঙ্গ করেছে,’ লিখছেন বয়কট। তার পরে আরও বিষাক্ত, ‘শেষ হাসির খোরাকটা ওরাই হল। ওদের ব্যাটিং এত জঘন্য যে, ওভালে আমাদের ‘এ’ টিমের চার-পাঁচজনকে খেলিয়ে দেওয়া যায়। সেকেন্ড ক্লাস অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওরাও কিন্তু ভাল করবে!’
বিশ্বের সিংহভাগের চেয়ে যে দেশ অনেক আগে সূর্যোদয় দেখে, সে দেশে সত্যিই এখন অশেষ সূর্যাস্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy