প্রতীকী ছবি।
গালওয়ান উপত্যকার সংঘাতের জল গড়াল সমুদ্রেও। ওই সংঘর্ষের প্রায় আড়াই মাস পর চিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে এ বার দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাল ভারতীয় নৌবাহিনী। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকা নিজেদের জলসীমার অন্তর্গত বলে দাবি আসা চিন এ নিয়ে স্বভাবতই রুষ্ট। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক চ্যানেলে নিজেদের আপত্তি ও অসন্তোষের কথা নয়াদিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছে বেজিং। যদিও তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেনি ভারত। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, চিনা আগ্রাসন ঠেকাতে নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত ১৫ জুন সেনা সংঘর্ষের পর থেকেই নয়াদিল্লি বেজিং সম্পর্কের পারদ চরমে উঠেছে। ওই সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সেনার মৃত্যু হয়েছিল। চিনের পক্ষের এক সেনা অফিসারের মৃত্যুর খবর স্বীকার করা হলেও হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানায়নি বেজিং। ওই সংঘর্ষের পর দু’পক্ষের সামরিক আলোচনার মাধ্যমে গালওয়ান উপত্যকা থেকে সেনা সরালেও প্যাংগং লেকের চারটি ফিঙ্গার পয়েন্টে এখনও সম্পূর্ণ সেনামুক্ত করেনি চিন। ফলে সঙ্ঘাত এখনও মেটেনি। ফলস্বরূপ সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় আয়োজিত বহুজাতিক প্রতিরক্ষা মহড়ায় চিন ও পাকিস্তান যোগ দেওয়ায় ভারত তাতে অংশ নিচ্ছে না।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগরে রণতরী নিয়ে হাজির হচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনী। কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা গতিবিধি লক্ষ্য করলে যাতে তার মোকাবিলা করা যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এই রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। সরকারের একটি শীর্ষ সূত্র একটি দেশীয় সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘‘ভারতীয় নৌবাহিনী রণতরী নিয়ে দক্ষিণ চিন সাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ওই এলাকায় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অধীন নৌবাহিনীর আধিপত্য। ওই এলাকার সিংহভাগই নিজেদের জলসীমার অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে আসা চিন এ নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছে।’’
আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তান চিনের পুতুল’, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে ইমরানের খোঁচার জবাবে জয়শঙ্কর
দক্ষিণ চিন সাগরে আগে থেকেই মোতায়েন রয়েছে আমেরিকান যুদ্ধজাহাজও। তা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েও কাজ না হওয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে শি চিনফিংয়ের বাহিনী। অন্য দিকে নৌবাহিনী সূত্রের খবর, ভারতীয় এই যুদ্ধজাহাজ মার্কিন রণতরী এবং তাঁদের বাহিনীর সঙ্গে সুরক্ষিত চ্যানেলে নিরন্তর যোগাযোগ রেখেছে। পাশাপাশি রুটিন নজরদারি হিসেবে সমুদ্রের ওই এলাকায় চিন-সহ অন্যান্য দেশের সামরিক জাহাজের গতিবিধির রিপোর্ট পাঠাতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ছাত্ররা ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ চাইছেন, মোদী করলেন ‘খিলোনে পে চর্চা’, কটাক্ষ রাহুলের
২০০৯ সালের পর থেকে দক্ষিণ চিন সাগরে সেনা মোতায়েন ব্যাপক বাড়িয়েছে চিন। বিতর্কিত এই এলাকা নিজেদের জলসীমার অন্তর্গত বলে দাবি করে আসছে তারা। কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে এই গোটা এলাকায় পণ্যবাহী ও অন্যান্য জাহাজের গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে আসছে চিন। সেই এলাকায় কার্যত তাদের ঘাড়ের উপর ভারত ও মার্কিন রণতরীর উপস্থিতিতে বেজিং কার্যত সাঁড়াশি চাপে পড়ে গিয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
অন্য দিকে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পরেই আন্দামান-নিকোবরের কাছে মালাক্কা প্রণালীতেও নৌবহর বাড়িয়েছে ভারত। রণকৌশলগত ভাবে এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত মহাসাগরে চিনা বাহিনীর প্রবেশের এটাই একমাত্র জলপথ। চিনের নৌবাহিনীও এই পথেই ভারতীয় নৌবাহিনীর গতিবিধির উপর নজরদারি চালায়। তা ছাড়া বহু পণ্যবাহী চিনা জাহাজও এই পথে যাতায়াত করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy