বিপাকে রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহ।
তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধিভঙ্গের অভিযোগ সংবলিত নির্বাচন কমিশনের চিঠিটি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ-সহ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কল্যাণ সিংহই কি প্রথম রাজ্যপাল হতে চলেছেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে যাঁকে সরে যেতে হচ্ছে?
কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীকে জয়ী করার জন্য তিনি প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেস অভিযোগটি জানানোর পরে নির্বাচন কমিশন আলিগড়ের জেলাশাসকের রিপোর্ট চায়। সেই রিপোর্ট পেয়ে মঙ্গলবার কল্যাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির দফতরে চিঠি পাঠায় কমিশন। বিদেশ সফর সেরে কাল রাতে দিল্লি ফিরে আজই ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ-সহ চিঠিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ। কল্যাণকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের কালই রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার কথা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঠিক কী ঘটিয়েছেন কল্যাণ? গত মাসের ২৩ তারিখে জয়পুর থেকে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে নিজের শহরে ফেরার পরে বিজেপির এক দল কর্মী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে তাঁর কাছে হাজির হন। কর্মীদের অভিযোগ, নেতৃত্ব আলিগড়ে ঠিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেননি। বিক্ষোভকারীদের থামিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে রাজস্থানের রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমরা সকলেই বিজেপির কর্মী, এবং প্রার্থী যিনিই হোন— তাঁকে জয়ী করতে আমাদের মাঠে নামা উচিত। কারণ মোদীজি ফের প্রধানমন্ত্রী হোন, সেটাই আমরা চাই। দেশের স্বার্থে মোদীজিকে ফেরাতেই হবে!’’
এমনিতে নির্বাচনী আচরণ বিধির আওতায় রাজ্যপাল পড়েন না। অর্থাৎ বিধি লঙ্ঘন করলে কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বা তাঁকে সরিয়ে দিতে পারেন না। কিন্তু সাংবিধানিক পদ হিসেবে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার কথা রাজ্যপালের। নির্বাচন কমিশন মনে করে, নিজেকে ‘বিজেপি কর্মী’ দাবি করে এবং নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে প্রচার করে কল্যাণ সাংবিধানিক পদের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছেন। রামনাথ কোবিন্দ বিদেশে থাকলেও তাঁর দফতর সূত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, রাজস্থানের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর বলেই মনে করছেন রাষ্ট্রপতি। এই অভিযোগ পাওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতি হাত গুটিয়ে থাকলে তাঁর নিরপেক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আজ কাজে যোগ দিয়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের চিঠিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠালেন।
অযোধ্যায় ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিজেপি, আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের করসেবকদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে উত্তপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সে দিন শুধু যে প্রশাসনকে ঠুঁটো করে রেখেছিলেন তাই নয়, পরে প্রকাশ্য সভায় মসজিদ ধ্বংসের সব দায় নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য ১৯৯৯-এ তিনি বিজেপি ত্যাগ করেন। ২০০৪-এ আবার দলে ফেরেন কল্যাণ। ২০১৪-য় নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে বাবরি ধ্বংসের মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত কল্যাণকে রাজস্থানের রাজ্যপাল নিযুক্ত করায় বিরোধীরা সরব হয়েছিলেন।
এর আগে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের বিরুদ্ধেও নিরপেক্ষতা ভেঙে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষে বিভিন্ন রকম বক্তব্য টুইট করার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন বিষয়ে টুইটে তাঁর একপেশে বক্তব্য বিতর্ক তৈরি করেছে। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার পরে তিনি সংযত। এর আগে নব্বইয়ের দশকে নিরপেক্ষতা ভেঙে নিজের ছেলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারের অভিযোগ ওঠায় ইস্তফা দিয়েছিলেন হিমাচলপ্রদেশের রাজ্যপাল গুলশের আহমেদ। কিন্তু নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগে এই প্রথম কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে খোদ রাষ্ট্রপতিকে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিতে হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy