মোদীর সঙ্গে সুষমা স্বরাজের মেয়ে বাঁশুরী। ফাইল চিত্র।
এক-একজনের মুখে মায়ের কথা শুনছেন, চোখ ফেটে জল বেরোচ্ছে।
৩৫ বছরের বাঁশুরী। বসেছেন ঠিক প্রধানমন্ত্রীর পাশে। অন্য দিকে বাবা স্বরাজ কৌশল। দিল্লিতে সুষমা স্বরাজের স্মরণসভায় বাঁশুরীর কথা প্রথম তুললেন প্রধানমন্ত্রীই। বললেন, ‘‘বাঁশুরীর মধ্যে সুষমাজির প্রতিফলন দেখি। মায়ের প্রয়াণের পর পরিণত ভাবে নিজের বাবা, পরিবারকে সামলেছেন।’’ স্বরাজের চোখেও তখন জল। আর সবার শেষে বলতে উঠে বাঁশুরী বললেন, ‘‘মা আমার সবথেকে বড় বন্ধু।’’ এই ব্যক্তিগত সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতাও জানালেন।
বক্তব্য শেষে বাঁশুরীর মাথায় হাত রাখলেন মোদী। উপস্থিত অনেকের প্রশ্ন, এ বার কি বিজেপিতে যাবেন সুষমা-কন্যা? সুষমা ও স্বরাজের একমাত্র কন্যা পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। আইনও পড়েছেন লন্ডনে। এখন সুপ্রিম কোর্ট, দিল্লি হাইকোর্টে মামলা লড়েন। ঠিক যে ভাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন সুষমা-কৌশল। আজ বাঁশুরীর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সুষমার ছাপও দেখলেন অনেকে।
আজ দীনেশ ত্রিবেদীকে স্মরণসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিএসপির সতীশ মিশ্র, কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, ডিএমকের তিরুচি শিবা—বিরোধীদের ভিড়ই ছিল বেশি। সকলের মুখেই এক কথা, সুষমা ছিলেন মায়ের মতো, বোনের মতো, দিদির মতো, ভারতীয় নারীর রূপ তিনি। মোদী-অমিত শাহদের সামনে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘কাঁধ ছোট, কিন্তু ব্যক্তিত্ব বড়। কখনও অহঙ্কার দেখিনি। অন্যকে ছোট করতে দেখিনি।’’ রাজনাথ সিংহের কথায়, ‘‘শুধু জননেতা নন, জনমন-নেতা ছিলেন সুষমা।’’ শিবসেনার নেতাও বললেন, ‘‘বালাসাহেবের লাডলি।’’ আরএসএসের নেতা কৃষ্ণগোপালও স্মরণ করেন, ‘‘একসময় সংসদে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যখন ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রূবাদ’ নিয়ে বিতর্ক করছিলেন, সুষমা বলেন, এক বাঙালি পরিবারের ছেলের নাম সোমনাথই ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদ’।’’
বিজেপি আয়োজিত স্মরণসভায় অনেকেই বলাবলি করছিলেন, গত পাঁচ বছরে সুষমাকে যোগ্যতা অনুসারে ব্যবহার করাই হয়নি। সে কারণেই হয়তো তিনি আর ভোটে লড়েননি। এমন চর্চার কথা অজানা নয় বলেই মোদী নিজের বক্তৃতায় আগেই বলেছিলেন, ‘‘চাপ আসবে জেনেই হয়তো সুষমাজি ভোটে না লড়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণার পর আমি আর বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেছিলাম, আপনি ভোটে দাঁড়ান। বাকি চিন্তা করবেন না। কিন্তু তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।’’ এ-ও বলেন, ‘‘যে বিদেশ মন্ত্রক শুধু প্রোটোকল, কোট-প্যান্ট-টাই-এ আবদ্ধ থাকে, তার পরিভাষাও বদলে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে যখন নিজের মন থেকে বক্তৃতা দেওয়ার কথা বলি, অকপটে বলেছিলেন —এ ভাবে হয় না ভাই। আপনি ভাল বক্তা হতে পারেন। কিন্তু এক-এক মঞ্চের এক নিয়ম আছে। সত্যি কথা অকপটে বলতে পারতেন তিনি।’’
মৃত্যুর আগে শেষ টুইটটি সুষমা করেন ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে। ফের বাঁশুরীর উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘বাঁশুরীই আমাকে বললেন, এত খুশি ছিলেন তিনি। ভিতরে হয়তো খুব উৎসাহ পেয়েছিলেন। এখন শ্রীকৃষ্ণের চরণে পৌঁছে গেলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy