মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)-এ ভুগছেন অনেক মহিলাই। এই রোগটি এক বার সেরে গেলেও বার বার ফিরে আসে। গরমে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ে। জল খাওয়া কম হলেই প্রস্রাব করার সময়ে জ্বালা অনুভূত হয়। অনেক সময়ে প্রস্রাবের রংও বদলে যায়। এর জন্য যে কেবল অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার দায়ী তা নয়, কারণ আরও অনেক রয়েছে।
গরমের সময়ে মূত্রনালির সংক্রমণ নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। এই বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানালেন, গরমের প্রাবল্যে জ্বর, পেটখারাপ, টাইফয়েড, মূত্রনালিতে সংক্রমণের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গরম থেকে সোজা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঢুকে পড়া বা বাইরে থেকে ঢুকেই ঠান্ডা জল খাওয়া, এ সবের ফলে গলায়, ফুসফুসে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে জল খাওয়া কম হলে বা শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্লুইড বেরিয়ে গেলে তখন মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। গরমের দিনে জল বা তরল জাতীয় খাবার কম খেলে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন দেওয়া খাবার খেলে তখন মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
এ সব থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের দাওয়াই, “গরম থেকে ঘরে ঢুকেই ঠান্ডা পানীয় খাবেন না, এসি চালাবেন না। অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। রাস্তার কাটা ফল, খাবার, বাইরের জল এড়িয়ে চলুন। দোকান থেকে কেনা বেশি চিনি দেওয়া পানীয়, ফলের রস, রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত, লস্যি খাবেন না। এর থেকে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।”
কোন কোন লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
১) শীত শীত ভাব। মাঝেমাঝে জ্বরও আসে।
২) প্রস্রাব করার সময়ে ব্যথা ও জ্বালা।
৩) প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া।
৪) প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হওয়া।
৫) পেটের গোলমাল শুরু হবে, বমি ভাব, খিদে কমে যাবে।
৬) শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন:
সুস্থ থাকার উপায়
শরীরের ‘পিএইচ ব্যালান্স’ বলতে মূলত রক্তের ‘পোটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন ব্যালান্স’ বোঝায়। এটি সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত। যদি এর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, তখনই নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এমনটাই জানালেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর মতে, মূত্রনালির ‘পিএইচ ব্যালান্স’ হওয়া উচিত ৪.৫ থেকে ৮.০-এর মধ্যে। যদি পিএইচ-এর মান এই মাত্রার চেয়ে খুব কম বা বেশি হয়ে যায়, তখনই সমস্যা তৈরি হবে। শরীরে জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে। তখন কিডনি ও মূত্রনালির স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। প্রক্রিয়াজাত খাবার বা প্যাকেটবন্দি পানীয় বেশি খেলে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতেই হবে। সেই সঙ্গে তরল জাতীয় খাবার রাখতে হবে ডায়েটে। পাতলা ডালের জল, চিকেন স্ট্যু, নিরামিষ খেলে সব্জি দিয়ে পাতলা ঝোল খেতে পারলে শরীর সুস্থ থাকবে।
গরমের দিনে ঘন ঘন চা-কফি খেলে শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে। বদলে গ্রিন টি বা ভেষজ চা খেতে পারেন। অ্যালকোহলের পরিমাণেও রাশ টানতে হবে।
রোজের পাতে রাখুন সবুজ শাকসব্জি, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। প্রোবায়োটিক আছে, এমন খাবার খেতে হবে যেমন দই, ইয়োগার্ট, পনির। ইডলি, দোসা প্রাতরাশ কিংবা সান্ধ্য জলখাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন কোনও প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না, যাতে ক্ষারের পরিমাণ অনেক বেশি। এই ধরনের প্রসাধনী থেকে ইউটিআই ছাড়াও আরও অনেক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
নিজে থেকে কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। রোগের লক্ষণ বুঝলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই ওষুধ খাওয়া জরুরি।