‘দুধ’ ইঞ্জেকশন ফোটানোর পরেই বুক ধড়ফড় করতে শুরু করে কাই ইউক্সিনের। সারা শরীর নীল হতে থাকে তাঁর। কিছু ক্ষণ পরেই চিকিৎসকেরা দেখেন, কাইয়ের শরীর নিথর হয়ে গিয়েছে। নাড়ির স্পন্দন নেই, শ্বাসও পড়ছে না। গভীর কোমায় চলে যান তাইওয়ানের মডেল। এর পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা মৃত্যুর জন্য ওই ‘দুধ’ ইঞ্জেকশনকেই দায়ী করেন। সেটি আসলে কী?
অজ্ঞান করার জন্য এমন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় অনেক রোগীকে। কাই তাঁর অনিদ্রার সমস্যার জন্য হরমোন থেরাপি করাচ্ছিলেন। অস্ত্রোপচারের সময়ে এই ইঞ্জেকশন তাঁকে দেওয়া হয়। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর খিঁচুনি শুরু হয়। চিকিৎসকেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোমায় চলে যান তিনি। তাইপেইয়ের যে ক্লিনিকে হরমোনের থেরাপি চলছিল কাইয়ের, সেটি নাকি বেশ জনপ্রিয়। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ সূত্রে খবর, যে চিকিৎসকের নির্দেশে এমন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় মডেলকে, তিনি তাইপেইয়ের জনপ্রিয় কসমেটিক সার্জন। কিন্তু এমন ইঞ্জেকশন তিনি মডেলকে কেন দিলেন, সে কারণ জানা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
‘দুধ’ ইঞ্জেকশন কী?
চিকিৎসকেরা বলেন ‘মিল্ক ইঞ্জেকশন’। তার মানে কি ইঞ্জেকশনে দুধ ভরে দেওয়া হয়? তা নয়। এতে একরকম চেতনানাশক ওষুধ থাকে, যার নাম ‘প্রোপোফল’। এই ওষুধটি শরীরে গেলেই স্নায়ু নিস্তেজ হতে থাকে, ঘুম এসে যায়। রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য প্রোপোফলের ব্যবহার হয় অনেক সময়েই। তবে অবশ্যই রোগীর শরীরের অবস্থা বুঝে।
আরও পড়ুন:
প্রোপোফল দেখতে সাদা ঘন দুধের মতো। ওষুধটি তৈরি হয় সয়াবিন তেল, গ্লিসারল ও ডিমের প্রোটিন দিয়ে। দেখতে সাদা তরলের মতো ওষুধটি যখন ইঞ্জেকশনে ভরা হয়, তখন দেখলে মনে হয় ইঞ্জেকশনে দুধ ভরা হয়েছে। তাই এর নাম ‘মিল্ক ইঞ্জেকশন’।
প্রোপোফল নির্দিষ্ট ডোজ়েই দিতে হয় রোগীকে। এর ডোজ় বেশি হয়ে যাওয়া মানেই বিপদ। স্নায়ুর উপর এত বেশি চাপ পড়বে, যে স্নায়ু বিকল হতে শুরু করবে। প্রোপোফল ইঞ্জেকশন যদি বারে বারে দেওয়া হয় কাউকে বা খুব বেশি ডোজ়ে দেওয়া হয়, তা হলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের চরম ক্ষতি হবে। সারা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকবে, পেশির খিঁচুনি হবে এবং আচমকা হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। রোগী গভীর কোমায় চলে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।অ্যানাস্থেশিয়ার আগে রোগীর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা খুব জরুরি। রোগী যদি বিশেষ কোনও ওষুধ খান বা তাঁর হার্টের রোগ থাকে, তা হলে কী ধরনের চেতনানাশক ওষুধ তাঁকে দেওয়া হবে, তা একজন অ্যানাস্থেশিস্টই ঠিক করে দেবেন। সব ওষুধ সকলের জন্য নয়। অ্যানাস্থেশিয়ার ডোজ়ের সামান্য এ দিক-ও দিক হলেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। অনিদ্রার চিকিৎসায় প্রোপোফল দেওয়া ঠিক কি না, তা না বুঝেই ওই ওষুধটি দেওয়া হয় কাইকে। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে মৃত্যু হয় মডেলের।