দুনিয়ায় যত রকম ক্যানসারে মৃত্যু হয়, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে গ্যাসট্রিক ক্যানসার। কারণ, গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হল এমন এক রোগ, যার উপসর্গ সহজে বোঝা যায় না। এর বিভিন্ন উপসর্গের সঙ্গে হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যাকে গুলিয়ে ফেলা সহজ। আর ঠিক সেখান থেকেই বিপদের শুরু।
গ্যাসট্রিক ক্যানসার আসলে পাকস্থলীর দেওয়ালে তৈরি হওয়া ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। মুশকিল হল, পাকস্থলীতে টিউমার হলে তার যা যা উপসর্গ, তা যে কোনও হজমের সমস্যা থাকা রোগীর শারীরিক অসুবিধার সঙ্গে মিলে যায়। পেটে ব্যথা, বদহজম— এই সবই মূলত দেখা যায় গ্যাসট্রিক ক্যানসার হলে।

সাধারণত এই ধরনের অসুবিধা হলে গ্যাস-অম্বল-বদহজমের ওষুধেই ভরসা করেন মানুষ। তাতেও সুবিধা না হলে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে বদল আনেন। চিকিৎসকের পরামর্শও নেন কেউ কেউ। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও অনেক সময় উপসর্গ গুলিয়ে ফেলার সুযোগ থাকে। ক্যানসার বা টিউমার দেখার জন্য যে এন্ডোস্কপি করানোর প্রয়োজন হয়, তা ক’জনই বা করান? পদ্ধতিটি যেহেতু অস্বস্তিকর, সে জন্য রোগীরাও এড়িয়ে যান অনেক ক্ষেত্রে। অথচ গ্যাসট্রিক ক্যানসার যথাসময়ে ধরা পড়লে তার চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছে একাধিক গবেষণা। ইটালির এল সাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মিলানের ডিপার্টমেন্ট অফ ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের একটি গবেষণার কথাই ধরা যাক। সেই গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, গ্যাসট্রিক ক্যানসারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ যেমন হজমের সমস্যা বা ডিসপেপসিয়ার সঙ্গে মিলে যেতে পারে, তেমনই একটু খেয়াল করলে কিছু উপসর্গ দেখে সতর্ক হওয়াও যেতে পারে। বিশেষ করে পরিবারের কারও যদি ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস থেকে থাকে, তবে ওই উপসর্গগুলিকে কিছুটা সতর্ক হয়েই যাচাই করে নেওয়া উচিত।

১। সকালের দিকে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
ব্রিটেনের ক্যানসার রিসার্চ সংস্থা ‘ক্যানসার রিসার্চ ইউকে’ বলছে, গ্যাসট্রিক ক্যানসারের একটি লক্ষণ হল পেটে ব্যথা। বিশেষ করে সকালের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পরেই যদি পেটে ব্যথা বোধ হয় বা অস্বস্তি হয় বা পেটের উপরের ভাগে যদি এক ধরনের জ্বালাভাব হতে থাকে এবং ওষুধ খেয়েও যদি তা না সারতে চায়, তবে সতর্ক হওয়া উচিত।
২। গা গুলোনো এবং বমি ভাব
যে কোনও হজমের সমস্যাতেই এমন উপসর্গ দেখা যেতে পারে। কিন্তু ওই উপসর্গ কি সকালের দিকেও হচ্ছে? তা হলে চিন্তার বিষয়। বমিতে যদি রক্ত আসে বা তাতে যদি কফির গুঁড়োর মতো কোনও পদার্থ দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩। খিদে না থাকা
টিউমার অনেক সময়ে খাবার হজমের পথরোধ করে। পাকস্থলীতে খাবার যাওয়ার পরে, তা প্রসারিত হয়। কিন্তু টিউমার তা সহজে হতে দেয় না। ফলে খিদে বোধ চলে যায়। পেট সব সময় ভরে আছে বলে মনে হয়। না খাওয়ার ফলে দ্রুত ওজনও কমতে থাকে।

৪। পেট অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া
যাঁদের গ্যাসট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ় বা পেপটিক আলসার রয়েছে তাঁদের রোগের উপসর্গের সঙ্গেও গ্যাসট্রিক ক্যানসারের উপসর্গ মিলতে পারে বলে জানাচ্ছে মিলানের ডিপার্টমেন্ট অফ ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের গবেষণা। ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ গ্যাসট্রোলজি’তে। তাতে বলা হয়েছে, খাবার খাওয়ার পরেই যদি পেট ফাঁপার সমস্যা হয়, তবে তা গ্যাসট্রিক ক্যানসারেরও উপসর্গ হতে পারে।
৫। মলে রক্তে থাকলে
মলের রং থেকেও বোঝা যেতে পারে রোগ। মলের রং যদি প্রায় কালো হয়ে যায় বা তাতে যদি রক্ত দেখা যায় অথবা যদি রক্ত বেরোনোর ফলে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দেয় হঠাৎ, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।