সত্যিই তো দশ বছরে নাইট রাইডার্সে কত কিছুই না পাল্টেছে। জার্সির রং কালো থেকে হয়েছে বেগুনি। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের সেই বিধ্বংসী সমস্ত দিন থেকে সুনীল নারাইন নামক জাদুকরকে দেখেছেন ভক্তরা। গৌতম গম্ভীরের মতো অধিনায়কের হাত ধরে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
শুধু একটা জিনিসই পাল্টায়নি— ইডেন গ্যালারির সঙ্গে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রেম কাহিনি।
আজও তো আইপিএলের ইডেন গ্যালারি মানে আবেগের চোরাস্রোত। যেখানে অনবরত শোনা যাচ্ছে ‘‘কেকেআর কেকেআর।’’ তীব্র গরম উপেক্ষা করেও যে গ্যালারির আনাচে কানাচে বেগুনি ফেট্টি আর হলুদ ফ্ল্যাগের মহড়া। প্রতিটা বাউন্ডারির অভ্যর্থনা যেখানে মেক্সিকান ওয়েভ দিয়ে জানানো হচ্ছে। নববর্ষের দুপুরেও মিষ্টির প্যাকেটে উৎসব পালন নয়। বরং আইপিএলের উন্মাদনায় কাটাচ্ছেন সবাই।
ভিআইপি গ্যালারিটা আজও তো ফাঁকা। সেখানে তিনি হাত ছুঁড়ে লাফাচ্ছেন না। তাঁর চিৎকারও শোনা যাচ্ছে না। নাইটদের সবচেয়ে বড় সমর্থক শাহরুখ খানের অভাবও যে ঢেকে দিতে পেরেছে ইডেন গ্যালারি।
আরও পড়ুন:
ওপেনারের জায়গা হারিয়েও ক্ষোভ নেই নাইটদের রবিনহুডের
টি-টোয়েন্টির গ্রহ মানেই তো অ্যালফ্রেড হিচককের কোনও থ্রিলার ফিল্ম। যেখানে প্রতিটা মুহূর্তেই অপেক্ষা করে থাকবে অভূতপূর্ব এক একটা মোচড়।
পরাভূত: ইডেনে রান পেলেন না যুবরাজ। দলও হারল। নিজস্ব চিত্র
টস জিতে শুকনো উইকেটে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন সানরাইজার্স অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। চব্বিশ ঘণ্টা আগে নাইটদের সহকারী কোচ সাইমন ক্যাটিচ বলেছিলেন, রোজরোজ নারাইনকে ওপেন করানোটা ঝুঁকি হবে। তাতেও সেই নারাইন ফর্মুলাতেই শুরু করেছিল কেকেআর। পঞ্জাব ম্যাচে ওপেনার নারাইন লেটার মার্কস পেলেও এ দিন ডাহা ফেল। ভুবনেশ্বর কুমারের নিখুঁত ইয়র্কারে মাত ‘সানি’। নাইট অধিনায়ক গম্ভীর আবার কাট করতে গিয়ে রশিদ খানের লেগব্রেকে আউট হলেন।
ইডেন গ্যালারি তখনও আশায় ছিল একটা কোনও বড় ইনিংস হয়তো তারা দেখতে পাবে। জবাবটা এল রবিন উথাপ্পার ব্যাটে। ভুবনেশ্বরের বলে উথাপ্পার ক্যাচের আবেদন ওঠে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে বেঁচে যান উথাপ্পা। দ্বিতীয় বার প্রাণ পেয়ে উথাপ্পাও দেখিয়ে দিলেন ফর্মে থাকলে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর। চার ছক্কা ও পাঁচটা বাউন্ডারিতে করলেন ৬৮। মিডউইকেট থেকে লং অন, প্রত্যেকটা জায়গায় বলটা পাঠালেন উথাপ্পা। ‘রবিন রবিন’ চিৎকারে গ্যালারিও তাল মিলিয়ে গেল উথাপ্পার দুরন্ত ইনিংসের সঙ্গে।
উথাপ্পার ব্যাটের নৃশংসতায় রান রেটটাও আস্তে আস্তে উঠতে থাকল। উথাপ্পাকে যথাযথ সহায়তা দিলেন মণীশ পাণ্ডে। কিন্তু ভুবনেশ্বরের শিকার মণীশ একটুর জন্য হাফসেঞ্চুরি পেলেন না। স্লগ ওভারে ভুবনেশ্বরের দুরন্ত বোলিং সত্ত্বেও ইউসুফ পাঠানের ২১ রান নাইট রাইডার্সকে ১৭২-এ পৌঁছতে সাহায্য করে।
বাজিগর না থাকলেও এ দিন কিরণ ছিলেন ইডেনে। অনবরত দলকে উৎসাহ দিয়ে গেলেন জুহি চাওলা। উইকেট পড়লে মুখ গম্ভীর। আবার দল একশো সত্তরে পৌঁছনোর পরে হাসি।
ওপেনার নারাইন এ দিন সফল না হলেও, বোলার নারাইনের স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন হল। নারাইন মানে সত্যি যেন রহস্য। হয় ব্যাটে থাকবেন। নয়ত বলে। ইডেন যে ‘সানি’-কে দেখে অভ্যস্ত, নববর্ষের দিনে সেই নারাইন ফিরলেন। সানরাইজার্স যখনই দ্রুত গতিতে ছোটার চেষ্টা করছিল, রান রেট স্লো করে দেন নারাইন। ব্যাটসম্যানরা অনুমানই করতে পারেননি কী ডেলিভারি আসছে নারাইনের হাত থেকে। নাইটদের নিয়ন্ত্রণে আনেন বোলার নারাইন। দীপক হুডার গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও তোলেন।
সানরাইজার্স ইনিংসটা খুব ভালই শুরু হয়েছিল। নাইটদের খারাপ ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে আউট হওয়ার মুখ থেকে বাঁচেন শিখর ধবন ও ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু ক্যাপ্টেনের একটা চালেই সব উলটপূরাণ— ইউসুফ পাঠানকে বল দেওয়া।
পাঠানের বলে সঠিক টাইমিং না করতে পেরে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন ধবন। সেই যে ওপেনিং পার্টনারশিপ ভাঙল, টাইটানিকের মতো ডুবতে থাকল সানরাইজার্স। নারাইনের মতো বল হাতে ঝড় তুললেন কুলদীপ যাদবও। পীযূষ চাওলার জায়গায় দলে এসে যিনি ওয়ার্নার নামক অস্ত্রকে ভোঁতা করে দেন। নাইটদের অলরাউন্ডার ওক্স রান দিলেও এনরিকস ও যুবরাজের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তোলেন।
যুবরাজই ছিলেন সানরাইজার্সের শেষ আশা। দুটো ছয় ও দুটো চার মেরে সবেমাত্র যুবি ওয়ার্ম আপ সেরেছিলেন। কিন্তু অপয়া ভূমিতে সানরাইজার্সের পাঁচ নম্বর হার আটকাতে পারলেন না। ওকসের স্লো বলে যুবরাজ ক্যাচ আউট হওয়ার পর তখন ইডেন গ্যালারিও আন্দাজ পেয়ে গিয়েছে নববর্ষের বিকেলে নাইটদের জয় দেখেই মাঠ ছাড়বেন তাঁরা। ট্রেন্ট বোল্টের শেষ ওভারে বাকি ছিল ৩০ রান। বিপুল শর্মা দুটো বাউন্ডারি মারলেও ১৫৫ রানে থেমে যায় সানরাইজার্স।
ইডেনে তখন ‘করব লড়ব জিতব রে’ গান শুরু হয়ে গিয়েছে। গম্ভীর তাঁর নাইটদের পিঠ চাপড়াচ্ছেন। চার ম্যাচে তিন জয়। দিনের শেষে সেই হুঙ্কারটাই তো যেন শোনা গেল— শীর্ষে আবার উঠলাম রে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy