উৎসুক: আশা কি আছে? দেখে নেওয়ার চেষ্টায় শাহরুখ।
সেরা : কর্ণ শর্মা (৪-১৬)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স জয়ী ৬ উইকেটে
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে বুধবারই এই পিচে খেলেছিল বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক ছিল যে চিন্নাস্বামীর পিচ কী রকম ব্যবহার করবে, তা জানে কলকাতা নাইট রাইডার্স। সুবিধেটাও নিতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, পরিচিত পিচ এবং পরিবেশ পেয়েও ফায়দা তুলতে পারল না কলকাতা নাইট রাইডার্স। মাঠ এবং মাঠের বাইরে কয়েকটা ভুল ডুবিয়ে দিল নাইটদের।
কী সেই ভুলগুলো?
প্রথম এগারো বাছা: চিন্নাস্বামীর উইকেট এ বারে বেশ স্লো। তার সঙ্গে লাল মাটির হওয়ায় বাউন্স থাকবে, টার্ন থাকছে। ফলে রিস্ট স্পিনাররা এখানে অনেক সুবিধা পাবে। শুক্রবার হলও তাই। মুম্বইয়ের কর্ণ শর্মা এবং কলকাতার পীযূষ চাওলা মিলে ছ’টা উইকেট তুলে নিল। কিন্তু এই পিচেও কেন ম্যাচ উইনার হিসেবে প্রমাণিত কুলদীপ যাদবকে বাইরে রাখা হল, বুঝলাম না। চায়নাম্যান বোলার হিসেবে ও কিন্তু ফায়দা তুলতে পারত এই পিচ থেকে। বাড়তি পেসার হিসেবে অঙ্কিত রাজপুতকে খেলানো হল। যাকে এক ওভারের বেশি বল দিতে পারল না গম্ভীর। আর সেই ওভারেও উঠল ১৪ রান। পাশাপাশি ইউসুফ পাঠানকেও এ রকম একটা বিগ ম্যাচে বাইরে রাখা ঠিক হয়নি। ও ফর্মে নেই ঠিকই, কিন্তু ইউসুফের ব্যাটে বলে হয়ে গেলে রানটা হয়তো আর একটু বেড়ে যেত।
চাপ নিতে না পারা: নাইটদের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে দেখে মনে হয়, ও সব সময় চাপে থাকে। খেলাটাকে উপভোগ করে না। এই চাপটা ছড়িয়ে শুক্রবার ছড়িয়ে গেল সতীর্থদের মধ্যেও। কেকেআরের ব্যাটসম্যানদের দেখে সেটাই মনে হয়েছে। এই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নাইট ব্যাটসম্যানরা বেছে নিয়েছিল পাল্টা মারের রাস্তা। যে স্ট্র্যাটেজি খাটল না। লিন, গম্ভীররা বিগ শট খেলতে গেল এমন উইকেটে যেখানে বল ভাল ব্যাটে আসছে না। ঠিক এই ভাবে মারের রাস্তা নিতে গিয়ে পুণের বিরুদ্ধে ডুবেছিল পঞ্জাব। আর একটা ব্যাপার মনে হল কলকাতাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল। সেটা হল, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ওদের পরিসংখ্যান। কিছুতেই যে ওরা মুম্বইকে হারাতে পারে না, এটা সম্ভবত ভুলতে পারেনি নাইটরা। দশ বছরের আইপিএলে ২০ ম্যাচে ১৫টা হার, এ বারে দু’টোতে দু’টোতেই হার, অবশ্য চাপে রাখার মতোই পরিসংখ্যান। যতদূর মনে হয়, প্রতিপক্ষ মুম্বই— এই ব্যাপারটা মানসিক ভাবে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল কলকাতাকে।
উল্লাস: চিন্নাস্বামীতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের উইকেট পতনের পরে সতীর্থদের সঙ্গে জসপ্রীত বুমরার উচ্ছ্বাস। শুক্রবার।
ব্যাটিং অর্ডার: এই রকম একটা চাপের ম্যাচে কী ভাবে সুনীল নারাইনকে দিয়ে কলকাতা ইনিংস ওপেন করাল, মাথায় ঢুকছে না। উইকেটটা যে একটু স্লো ছিল, আগেই বলেছি। এখানে অন দ্য রাইজ শট মারা কঠিন। তাই ওপেনে প্রয়োজন ছিল এমন দু’জন ব্যাটসম্যান, যারা উইকেটে থেকে ইনিংসটা গড়বে। এই তো ম্যাচের পরে গম্ভীরকে বলতে শুনলাম, ওরা নাকি ধরে নিয়েছিল এই উইকেট ১৪০ রানের। মানে ওভার পিছু সাত রানের হিসেবে অঙ্কটা করেছিল কেকেআর। তা হলে পিঞ্চ হিটার কেন শুরুতে? বিশেষ করে যেখানে ক্রিস লিনের মতো বিগ হিটার আছে? এই গম্ভীর-লিন জুটি তো এ বারের আইপিএল শুরু করেছিল দারুণ ভাবে। তা হলে কেন সেই জুটি ফেরানো হবে না? নারাইন কেমন ব্যাট করে, সবাই জেনে গিয়েছে। মিচেল জনসন আর যশপ্রীত বুমরা দুরন্ত গতিতে নারাইনের শরীর লক্ষ্য করে বল করে ওকে আটকে দিল। রান উঠল না, চাপ বেড়ে গেল। যে চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে সাত ওভারে ৩১-৫ হয়ে যায় কলকাতা। ম্যাচ ওখানেই শেষ।
রবিন উথাপ্পার অফ ফর্ম: এই আইপিএলে দু’জন রবিন উথাপ্পা-কে দেখলাম। এক জন চোট পাওয়ার আগে, অন্য জন চোট পাওয়ার পরে। প্রথম জন দুরন্ত ব্যাট করে কেকেআর-কে ম্যাচ জেতাচ্ছিল। দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট ছিল। অন্য জন চোট পাওয়ার পরের রবিন। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পরে ওকে একেবারেই আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি। মিডল অর্ডারে রবিনের এই ভাবে আটকে যাওয়া কিন্তু বড় ধাক্কা দিয়ে গেল নাইটদের। একই সঙ্গে এই ম্যাচে মণীশ পাণ্ডে এবং ইউসুফ পাঠান না থাকায় মিডল অর্ডারে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। রবিন ব্যর্থ হওয়ার চাপ তাই কেউ নিতে পারেনি।
রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব: প্রথম এগারো বাছা, বোলিং পরিবর্তন, ফিল্ডির সাজানো— সব কিছুতেই দশে দশ পাবে রোহিত। হরভজনকে বসিয়ে কর্ণ শর্মা-কে খেলাল। লেগস্পিনার কর্ণ চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিল। বুমরা নতুন বলে বল করে না। ওকে ক্রিস লিনের জন্য দ্বিতীয় ওভারেই আনল। মিড অনকে পিছিয়ে দিল বাউন্ডারিতে। ওখানেই ক্যাচ তুলল লিন। হার্দিক, ক্রুনাল, দুই পাণ্ড্য ভাইকে খেলাল। যাদের আমরা ময়দানি ভাষায় বলি, মধ্যবিত্ত ক্রিকেটার। যারা দুর্দান্ত কিছু না করলেও কাজের কাজটা করে দেয়। দুই ভাই যেমন বোলিং, ব্যাটিং আর ফিল্ডিংয়ে করে দেখাল। ক্রুনালকে ব্যাটিং অর্ডারে কায়রন পোলার্ডের আগে তুলে আনাটাও মাস্টারস্ট্রোক।
সব মিলিয়ে মাঠ এবং মাঠের বাইরে জিতে গেল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
স্কোরকার্ড
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১০৭ (১৮.৫)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১১১-৪ (১৪.৩)
কলকাতা নাইট রাইডার্স
ক্রিস লিন ক পোলার্ড বো বুমরা ৪
সুনীল নারাইন স্টা পার্থিব বো কর্ণ ১০
গৌতম গম্ভীর ক হার্দিক বো কর্ণ ১২
রবিন উথাপ্পা এলবিডব্লিউ বুমরা ১
ইশাঙ্ক জাগ্গি ক জনসন বো কর্ণ ২৮
গ্র্যান্ডহোম এলবিডব্লিউ কর্ণ ০
সূর্যকুমার যাদব ক মালিঙ্গা বো বুমরা ৩১
পীযূষ চাওলা ক রায়ডু বো জনসন ২
কুল্টার নাইল ক হার্দিক বো জনসন ৬
উমেশ যাদব ন.আ. ২
অঙ্কিত রাজপুত বো মালিঙ্গা ৪
অতিরিক্ত ৭
মোট ১০৭
পতন: ৫-১ (লিন, ১.৩), ২৪-২ (নারাইন, ৪.৪), ২৫-৩ (উথাপ্পা, ৫.২), ৩১-৪ (গম্ভীর, ৬.৫), ৩১-৫ (গ্র্যান্ডহোম, ৬.৬),
৮৭-৬ (ইশাঙ্ক, ১৪.৫), ৯৪-৭ (পীযূষ, ১৬.১), ১০০-৮ (কুল্টার নাইল ১৬.৫), ১০১-৯ (সূর্যকুমার ১৭.১), ১০৭-১০ (রাজপুত, ১৮.৫)।
বোলিং: মিচেল জনসন ৪-০-২৮-২, জসপ্রীত বুমরা ৩-১-৭-৩, লাসিথ মালিঙ্গা ৩.৫-০-২৪-১,
কর্ণ শর্মা ৪-০-১৬-৪, ক্রুনাল পাণ্ড্য ৩-০-২৫-০, হার্দিক পাণ্ড্য ১-০-৪-০।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
লেন্ডল সিমন্স এলবিডব্লিউ চাওলা ৩
পার্থিব পটেল ক উথাপ্পা বো উমেশ ১৪
অম্বাতি রায়ডু বো চাওলা ৬
রোহিত ক অঙ্কিত বো কুল্টার নাইল ২৬
ক্রুনাল পাণ্ড্য ন.আ. ৪৫
কায়রন পোলার্ড ন.আ. ৯
অতিরিক্ত ৮
মোট ১১১-৪
পতন: ১১-১ (সিমন্স ১.৩), ২৪-২ (পার্থিব, ২.৫), ৩৪-৩ (রায়ডু, ৫.৪), ৮৮-৪ (রোহিত, ১২.২) ।
বোলিং: উমেশ যাদব ২.৩-০-২৩-১, পীযূষ চাওলা ৪-০-৩৪-২, নেথান কুল্টার নাইল ৩-০-১৫-১,
সুনীল নারাইন ৪-০-২১-০, অঙ্কিত রাজপুত ১-০-১৪-০।
ছবি: বিসিসিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy