ক্রিকেট খেলা এবং দেখার অভ্যেস ছোট থেকেই। আমি দক্ষিণ কলকাতার যে অঞ্চলে বড় হয়েছি সেখানে মাঠের অভাব। খেলার জায়গা বলতে পাড়ার গলি, বন্ধুর বাড়ির কম্পাউন্ড অথবা বাড়ির ছাদ। তাই হয়তো ফুটবলের থেকে ক্রিকেট খেলার সুযোগ বেশি হয়েছে। বাবা ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেন। কিন্তু আমার কেন জানি না ফুটবলের প্রতি তেমন টান কোনও দিনই তৈরি হয়নি। আমার প্রথম স্পোর্টস মেমরি হল ১৯৯৬-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ। প্রায় প্রত্যেক খেলাই দেখেছিলাম। কিন্তু ইডেন গার্ডেন্সের সেই সেমিফাইনাল কোনও দিন ভোলার নয়। বোতল ছোড়া, আগুন জ্বালানো এবং সচিন-কাম্বলির চোখে জল। ভারতীয় ক্রিকেটে হয়তো একটি ভুলে যাওয়ার মতো দিন। কিন্তু ক্রিকেটের উন্মাদনা কী তা হয়তো সেই দিনটা আমায় দেখিয়েছিল।
টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে ক্রিকেট আমার বড়ো হওয়ার অঙ্গ। প্রথম ইডেন গার্ডেন্স গিয়েছিলাম বাবার সঙ্গে। সালটা ঠিক মনে নেই। তবে ম্যাচটা ছিল ইন্ডিয়া বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট। ওদের ক্যাপ্টেন মার্ক টেলর এবং আমাদের আজহারউদ্দিন। ইডেনের ঘাস যে কতটা সবুজ তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। কেমন একটা বিস্মিত হয়েই কেটে গিয়েছিল সময়টা। ক্রিকেট ইজ নট জাস্ট আ স্পোর্ট, ইট ইস অ্যান এক্সপিরিয়েন্স।
আরও পড়ুন, ‘সৌরভ কমেন্ট্রি দিলে, আমি কমেন্ট্রিকেই সাপোর্ট করব’
ক্রিকেটের এই অনুভব যে একটা স্পেকট্যাকেল হতে পারে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় আইপিএল। খেলার সঙ্গে হিরোইক মিউজিক এবং চিয়ার লিডারদের নাচ। সব মিলিয়ে স্পেকট্যাকেলই বটে। অনেকেই আইপিএলকে নীচু চোখে দেখেন, তবে আমার তেমন মনে হয় না। টেস্ট ম্যাচ হল পাঁচ দিন ধরে বিয়েবাড়ি। ওয়ান ডে ক্রিকেট রসিয়ে বিরিয়ানি এবং টি২০ ইজ ফাস্ট ফুড। সারা দিনের কাজ শেষ করে তিন ঘণ্টার এন্টারটেনমেন্ট। অনেকটা হয়তো ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচ দেখার মতো।
খবর পেলাম গৌতম গম্ভীর আউট হয়ে গিয়েছে।
আমি কলকাতার বাসিন্দা। তাই সাপোর্ট করছি কেকেআরকেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে পর্বটা বাদ দিলে বরাবর কলকাতার সাপোর্টার। ‘কেন পুণে’, প্রশ্ন করাটা বৃথা। এর কোনও ব্যাখ্যা নেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি বাঙালির ভালবাসার কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে আমি আমার শহরের সবচেয়ে বড় ফ্যান। কলকাতার মতো শহর নেই। তাই যখন পুণেতে পড়াশোনা করেছিলাম তখনও মরাঠিদের মাঝে বসে কলকাতার জন্যই গলা ফাটিয়েছি।
আরও পড়ুন, ওভারডোজ অব ক্রিকেট!
এ বার প্রথম দুটো কেকেআর-এর খেলা দেখেছি। তৃতীয়টা মিস করেছি এবং চতুর্থটা চলাকালীন এই লেখাটা লিখছি। খবর পেলাম সুনীল নারিন এবং গৌতম গম্ভীর আউট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লেখা শেষ না করে টিভির সামনে বসা যাবে না। খেলা দেখার সময় অন্য কাজ করা চলবে না। পুরো মনোযোগ খেলার প্রতি হতে হবে। কিছু সুপারস্টিশন থাকেই খেলা-ভক্তদের। আমার বাবা সঙ্গে, ভাইয়ের সঙ্গে, ঋদ্ধিমার সঙ্গে অথবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খেলা দেখতে পছন্দ করি এবং এরা সবাই এক সঙ্গে, এক জায়গায় হলে তো কথাই নেই! এ বছর ইডেন যাচ্ছি না। ভিড়ভাট্টার চেয়ে বাড়িতে খেলা দেখাটা এই গরমে বেশ ভালই লাগে।
এই লেখাটা যখন আপনারা পড়ছেন তখন খেলা হয়তো শেষের পথে। আশা করছি কলকাতা জিতবে। পয়লা বৈশাখে কলকাতাবাসীদের জন্য এক থেকে ভাল উপহার আর কী হতে পারে? লং লিভ কলকাতা, লং লিভ ক্রিকেট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy