কেক, ক্রিকেট আর ক্রিসমাস— তিনটেই আমার কাছে এক সুতোয় বাঁধা।
একটু খুলে বলি। অনেক মায়ের মতোই আমার মা-ও রান্না করতে ভালবাসেন। রান্নার সঙ্গে মায়ের একটা মায়ার সম্পর্ক। ছোট থেকেই দেখেছি এ সময়টা নানারকম কেক বানায় মা। পাঁউরুটি কেক, লেমন কেক, মিল্ক কেক, কোনওটা আবার এগলেস। আমার ছোটবেলায় তো কেক-আভেন ছিল না। একটা অদ্ভুত পদ্ধতিতে তখন মা তৈরি করত। কী যে বলে ওটাকে…‘ভাপে’ বোধহয়।
আর ছিল ক্রিকেট। ছেলেবেলার শীত রোদ্দুরের গোটা এপিসোডটা জুড়েই ব্যাট, বল, উইকেটের দাপট। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত ক্রিকেট খেলতাম। কিঞ্চিত ভাল খেলতাম বলে ওই সময়টা আমাকে মাঠেই পাওয়া যেত। ২৩ ডিসেম্বর থেকে টুর্নামেন্ট শুরু হত। আর ক্রিসমাসে থাকত ফাইনাল। এই রুটিন চলেছে দীর্ঘদিন।
গত সাত বছরে শীত বলুন বা ক্রিসমাস, রুটিন বদলেছে অনেকটাই। আমার যে কোনও ছবির শুটিং সাধারণত শীতেই করি। ফলে ২৫ ডিসেম্বর কোনও না কোনও ছবির শুটিং করেছি। শুটিংয়েও কেক আনা হয়।। সকলে মিলে মজা করে কেক খাওয়া হয় কাজের ফাঁকে। এ বার শুটিং আছে। তবে শুটিংয়ের পর সোজা বাড়ি। কোনও পার্টিতে নেই আমি। প্রচুর কাজ জমে আছে…।
আরও পড়ুন: কোথায় পাবেন ক্রিসমাসে ঘর সাজানোর জিনিস?
আমি যেখানে থাকতাম মানে, বরানগরে সিঁথির মোড়ের কাছে একটা চার্চ ছিল। এখনও আছে সম্ভবত। আমি তো বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তাম। আর সে সময় বড় কোনও চার্চ দেখার কোনও অভিজ্ঞতাই হয়নি। ফলে বাড়ির কাছে একটা চার্চ, আর ২৫ ডিসেম্বর সকালে সেখানে প্রেয়ার হওয়াটাও খুব মনে পড়ে।
ক্রিকেটে বুঁদ থাকতাম বলে ওই সময়টা বেড়ানো খুব একটা আমার হয়নি। তবে এই ছুটিতে বাড়ির সকলে মিলে শান্তিনিকেতন গিয়েছি কয়েকবার। ২৩ ডিসেম্বর মেলা, ২৪ তারিখ বাজি পোড়ানো— সব মিলিয়ে ওটাও বেশ লাগত।
ছেলেবেলার ক্রিসমাসের আর একটা স্মৃতি আজও তাজা। আমাদের বরানগরের বাড়ির সাদা-কালো টিভি। আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা একটা গান, ‘একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে…’। অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় গাইতেন। মা-বাবার খুব প্রিয়। মা আজও গুনগুন করে। তখন হয়তো মানেটা বুঝিনি। আজ বুঝি। ওই গানটা একটা ম্যাজিক জানত। মায়ের হাতে বানানো কেক, পাড়া ক্রিকেট, হাতে বোনা সোয়েটার, কমলা-কোয়া আহ্লাদী রোদ্দুর আর ওই গানটা কোথাও যেন মনকেমনের ডাক পাঠায়। আজও…।
আরও পড়ুন: ক্রিসমাস ট্রি কী ভাবে সাজাবেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy