‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ধারাবাহিক। বিদ্যাসাগরের লুকস সঠিক ভাবে রূপায়ণ করার বিষয়টি ছিল বেশ জটিল। কারণটা অন্য কিছুই নয়, বিদ্যাসাগরের হেয়ার স্টাইল। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌরভ দাস। শেষমেশ কী করলেন তিনি?
সৌরভ জানালেন, “প্রথমে তো লুকস সেট করতে গিয়ে কিছুতেই ঠিকঠাক হচ্ছে না। সে জন্য বিদ্যাসাগরকে নিয়ে প্রোমোও অন এয়ার করা যাচ্ছিল না। তখন ঠিক হল প্রস্থেটিক মেকআপ করা হবে। এ রকম অদ্ভুত ভাবে চুল ন্যাড়া করার কথা ভাবতে পারছিল না কেউ, বিশেষ করে সিরিয়ালের জন্য বলেই হয়তো। তার পর দেখলাম যে, হচ্ছে না বিষয়টা। সব থেকে বড় কথা চরিত্রর ফিলটা আমার আসছে না... তার পর সবাইকে বললাম, ঠিক আছে চল, আমি ন্যাড়া হব... কিছু নর্মস থাকে, কনট্রাকচুয়াল ব্যাপার থাকে। সেগুলো হয়ে যাওয়ার পর ন্যাড়া হয়ে গেলাম।”
ধারাবাহিকের গবেষক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানালেন, “মেদিনীপুরের বামুন, বিদ্যাসাগরকে ‘যশুরে কই’ বলা হত অর্থাৎ মাথাটা বড়। বিদ্যাসাগর জন্ম টেকো। বাবা ঠাকুরদাসেরও চুল খুব কম ছিল। ঠাকুরদাসের একটিই ছবি পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগরের চুল কম ছিল, কপাল অতি প্রশস্ত ছিল, ব্রহ্মতালুর আশপাশ অব্দি চুল ছিল, বাকিটা ফাঁকা... সেখান থেকে বিদ্যাসাগরের লুকসটা করা।”
আরও পড়ুন, জবার মধ্যে কাকে দেখেন ধারাবাহিকের দর্শকরা?
এই ধারাবাহিকের চরিত্রদের লুকস রূপায়িত যারা করেন তাঁদের অন্যতম সাবর্ণী দাস। তিনি শেয়ার করলেন, “সৌরভ ওর চুল সেভ করাতে রাজি হওয়ায় বিদ্যাসাগরের কাছাকাছি একটা লুকস আনতে আমাদের একটু সুবিধে হল। উইগ বা প্রস্থেটিক মেকআপ ব্যবহার করতে হল না। সিরিয়ালে প্রস্থেটিক মেকআপের জন্য এত সময় ব্যয় করাটাও ঝামেলার ছিল। আর বিদ্যাসাগরের লুকস নিয়ে কী-ই বা বলার আছে... একটা ধুতি, একটা চাদর, মাথায় একটা টিকি দেওয়া হয়েছে, আর জুতোর নামই ‘বিদ্যাসাগরী জুতো’... এইটুকুই তো। আসলে যে পিরিয়ডটা হচ্ছে এত ফটোগ্রাফিক এলিমেন্ট আছে... লুকস করতে সুবিধে হয়ে গেছে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিদ্যাসাগরের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরের বেশবাসের একটা ধারণা পাওয়া যায় (‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’)।
এক, ‘তিনি এক অদ্ভুত পুরুষ, লালপেড়ে কাপড় পরেন, জামা পরেন, বার্নিশ করা জুতা পরেন...।’
দুই, ‘বিদ্যাসাগরের বয়স আন্দাজ ৬২/৬৩। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অপেক্ষা ১৬/১৭ বৎসর বড় হইবেন। পরনে থান কাপড়, পায়ে চটি জুতা, গায়ে একটি হাত-কাটা ফ্লানেলের জামা। মাথার চতুষ্পার্শ্ব উড়িষ্যাবাসীদের মতো কামানো। কথা কহিবার সময় দাঁতগুলি উজ্জ্বল দেখিতে পাওয়া যায়, -- দাঁতগুলি সমস্ত বাঁধানো। মাথাটি খুব বড়। উন্নত ললাট ও একটু খর্বাকৃতি। ব্রাহ্মণ, তাই গলায় উপবীত।’
সৌরভ আসলে যেমন।
ধারাবাহিকের বিদ্যাসাগর মানে সৌরভ কেমন জুতো ব্যবহার করেন? তিনি ব্যাখ্যা করলেন, “এখনকার দিনে যেটা নাগরাই তখন সেটা টায়ারের হত। টায়ারের হত এই কারণে যে, বিদ্যাসাগর হেঁটে হেঁটে বেড়াতেন তো বিভিন্ন জায়গায়... পুরো কলকাতা তো হাঁটতেনই... ভাবা যায়, তখনকার দিনে বসিরহাট থেকে তিনি হেঁটে আসছেন রাসমণির বাড়ি! এমন একজন মানুষ যিনি ক্লাস-এও বিলং করেন, মাস-এও বিলং করেন। তো বিদ্যাসাগরী জুতোর মজাটাই হচ্ছে এটা যে জুতোটা ক্ল্যাসি কিন্তু টেকসই। খানিকটা এখনকার মেয়েরা যে কালো পাম্প শ্যু ব্যবহার করেন সেরকম।”
তা তো হল কিন্তু এরকম অদ্ভুত ভাবে চুল ন্যাড়া করার জন্য বন্ধুরা কী বলল? তিনি বন্ধুদের কোট করে শুরু করলেন, “বড় পর্দায় বা সিরিয়ালে যদি বিদ্যাসাগরের উপরেই গল্প হত তো ন্যাড়া হতিস ঠিক আছে। কিন্তু এই সিরিয়ালের জন্য কেন করছিস?’, অনেক বন্ধু বললো। আমি যে ফরম্যাটে কাজ করি সেটা বড় পর্দা হতে পারে, সিরিয়াল হতে পারে, সেটা যাত্রা হতে পারে, ডকুমেন্টারি হতে পারে। কিন্তু আসল বিষয়টা হল আমি ঠিকঠাক কাজটা করছি কিনা, হাণ্ড্রেড পারসেন্ট দিতে পারছি কিনা।”
আরও পড়ুন, সদ্য বিয়ে করেছেন শ্রাবন্তী, দেখুন ফোটো অ্যালবাম
লোকেরা কী বলে? তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “একটা ট্রোল দেখেছিলাম তাতে একজন বলেছিল, ‘উইগটা ঠিকঠাক সেট হয়নি।’... হা হা হা... আর একজন বলেছিল, ‘ওইসময় কি এরকম চুল ছিল?’ এমনকি অনেক মেকআপ আর্টিস্টও আমার চুলকে উইগ ভাবেন... হা হা...প্রথমদিন লুকসেট করে যখন স্টুডিও থেকে বেরোচ্ছি... স্টুডিওর সামনে আমার গাড়ি টার্ন নিচ্ছে... একজন আমাকে দেখে গালাগালি করতে করতে চলে গেল... বোধহয় ভেবেছে মডার্ন হেয়ার স্টাইল থেকে একধাপ এগিয়ে আমি স্টাইল করেছি... হা হা... বাড়িতে তো মা-বাবা অদ্ভুত বিহেভ করছিল প্রথম দিকে... মানে চিনতে পারছিল না... বাড়ির ছেলের মতোই বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছদাচ্ছে... কিন্তু ঠিক বাড়ির ছেলের মতো দেখতে নয়...”
আরও পড়ুন, নবনীতা-জিতুর রিসেপশনে কারা গিয়েছিলেন জানেন?
আর গার্ল ফ্রেণ্ড? “ও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একবার হয়েছে কি নর্থ কলকাতায় আমি, আমার এক দাদা, আমার গার্ল ফ্রেন্ড... দাঁড়িয়ে টিফিন করছিলাম। পঞ্চাশের এক ভদ্রলোক এসে আমাকে প্রণাম করলেন। আমার হাতে খাবারের প্লেট... খুবই বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম। বললাম, ‘কেন এরকম করছেন?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি বিদ্যাসাগর করেন তো?’ উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি বিদ্যাসাগরের চরিত্রে অভিনয় করি... বিদ্যাসাগর নই।’ উনি বললেন, ‘সে যাই হোক।’ পরে জানা গেল ওনার এক পূর্ব পুরুষ বিদ্যাসাগরের টোলে পড়াশোনা করতেন। কেউ আমায় প্রণাম করলে সেটা আমার নয়, বিদ্যাসাগরের। আমি রিপ্রেজেন্টেটিভ।”
লুকস তো হল কিন্তু সংলাপ? তিনি হাসলেন, “আমাকে তো প্রচণ্ড শুদ্ধ বাংলা বলতে হয়... ধরা যাক আজ সকাল নটায় ঢুকলাম ফ্লোরে... সাড়ে দশটায় আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দেওয়া হল যাতে রয়েছে গঙ্গা আরতি... সেটা আমায় মুখস্থ করে আধ ঘণ্টায় বলতে হয়... মাঝে মাঝে টাং টুইস্টারের মতো হয়ে যায় দু’তিন লাইন... তখন সবাই খিল্লি করে, মজা করে... আমি নিজেই হেসে ফেলি... দুটো তিনটে শব্দ মিশে এমন একটা অদ্ভুত শব্দ বেরোয়... হা হা হা... ‘বিদ্যাসাগরী শব্দ’ আছে না তাঁর অনুকরণে এগুলোকে বলা যায় ‘সৌরভ দাসী’ শব্দ... হা হা...”
(টলিউডের প্রেম, টলিউডের বক্স অফিস, বাংলা সিরিয়ালের মা-বউমার তরজা -বিনোদনের সব খবর আমাদের বিনোদন বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy