Advertisement
১১ জুন ২০২৪
Soumitra Chatterjee

ওঁকে আমি হিংসে করতাম

সৌমিত্রদা চলে গেলেন। আমার বিশ্বাস, ওঁর কাজের মধ্যে দিয়ে উনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। 

এক ফ্রেমে: সৌমিত্রের সঙ্গে নাসিরুদ্দিন। ছবি: নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

এক ফ্রেমে: সৌমিত্রের সঙ্গে নাসিরুদ্দিন। ছবি: নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

নাসিরুদ্দিন শাহ
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ ১৫:১৭
Share: Save:

সৌমিত্রদা চলে গেলেন। আমার বিশ্বাস, ওঁর কাজের মধ্যে দিয়ে উনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অলটার ইগো’ হিসেবেই দর্শক তাঁকে মনে রাখবেন। ওঁর আভিজাত্য, রুচি, বৈদগ্ধ, পরিশীলিত আচার আচরণ ওঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল।

সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে সৌমিত্রদার অসাধারণ কাজ দেখে মুগ্ধ তো হয়েইছি সেই সঙ্গে হিংসেও করেছি। সত্যিই উনি কত ভাগ্যবান যে, ওই রকম সব কাজের সুযোগ পেয়েছেন এবং তার সদ্ব্যবহার করেছেন। মানুষটির সঙ্গে একসঙ্গে কোনও কাজ যদি করতে পারি, আমার এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলাম ‘সত্যজিৎ রায় মেমোরিয়াল লেকচার’ দিতে এসে।

সেই সুযোগ এল। কলকাতা থেকে শৈবাল মিত্র আমাকে যখন তাঁর ‘আ হোলি কন্সপিরেসি’ ছবির প্রস্তাব দিয়ে ফোন করলেন। বিষয়টা পছন্দ হওয়ায় আমি ওঁকে চিত্রনাট্য পাঠাতে বলি এবং জানতে চাই ছবির ভাষা কী হবে। চিত্রনাট্য পড়ে আমার মনে হয়েছিল ছবিটা করা যেতে পারে। তখনও জানি না ছবিতে কারা-কারা অভিনয় করবেন। সেটা জানলাম মুম্বইয়ে এসে যখন ছবিটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হল। আসলে ছবির কাহিনি আমেরিকায় টেনেসি শহরের আদালতের একটি মামলাকে নিয়ে। অনেকদিন আগে আমি ওই মামলাকে কেন্দ্র করে লেখা নাটক মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি। যখন জানলাম ছবির মুখ্য দুই চরিত্রের একজন আমি ও অন্য জন সৌমিত্রদা, খুব উৎসাহিত বোধ করেছিলাম। আমি আছি শুনে সৌমিত্রদাও খুব খুশি হয়েছিলেন। সৌমিত্রদার সঙ্গে অভিনয় করার ইচ্ছেটা বাস্তবায়িত হল।

তার পরে কলকাতায় এলাম শুটিং করতে। ২০১৯ সালের ৯ জুন থেকে শুরু হয়েছিল কাজ। ফ্লোরে পৌঁছে দেখেছিলাম আমার আর সৌমিত্রদার মেকআপ রুম একেবারে মুখোমুখি রাখা হয়েছে। ব্যাপারটা দারুণ লেগেছিল। দীর্ঘ এক মাস ধরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমরা দু’জনে কাজ করেছিলাম। যদিও স্বাস্থ্যের কারণে দিনে চার ঘণ্টার বেশি সৌমিত্রদা শুটিং করতেন না। তবু উনি ওই দুর্বল শরীর নিয়ে অভিনয় করেছিলেন। আমার দেখে দুঃখ হয়েছিল বয়স ও স্বাস্থ্য ওঁর অভিনয় ক্ষমতাকে কিছুটা কেড়ে নিয়েছে। যে সৌমিত্রদাকে দেখে আমি মুগ্ধ হতাম তার অল্পই অবশিষ্ট ছিল। ওঁর শেষ জীবনে এই কাজের অভিজ্ঞতা আমার চিরকাল মনে থাকবে। বাংলা সিনেমা ও নাটকে সৌমিত্রদার অবদান কোনও দিন ম্লান হবে না।

অনুলিখন সুদেষ্ণা বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE