Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

মুভি রিভিউ: কালাকান্দি: আক্ষরিক অর্থে ঘেঁটে ঘ!

‘কালাকান্দি’র মানে জানেন আপনি? গোদা বাঙলায় ‘ঘেঁটে ঘ’ বলতে পারেন। এইবার আপনি ভাবুন যে ছবির মানে দাঁড়াল গিয়ে ঘেঁটে ঘ, আর সেই ‘মানে’ ছবির পরতে পরতে জিইয়ে রাখতে গেলে কী কাণ্ডটাই না ঘটাতে হবে!

‘কালাকান্দি’ ছবির একটি দৃশ্য।

‘কালাকান্দি’ ছবির একটি দৃশ্য।

রনজিৎ দে
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:২৪
Share: Save:

কোনও কোনও ছবি দেখার পর আমরা অনেক সময়ে মাথা চুলকোই, ‘ছবির নাম এমন হল কেন?’ ‘কালাকান্দি’ সেই দোষ থেকে একেবারেই মুক্ত। এমন সাৰ্থক নামকরণ বহু দিন পর বলিউড সিনেমায় হল! নামকরণের প্রতি এমনই সুতীব্র নিষ্ঠা যে ছবি দেখতে দেখতে মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হয় যে ‘আচ্ছা ছবির নাম কালাকান্দি বলেই কি এ সব সিনেমায় হচ্ছে?’ এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে! ছবির নাম যেমন তেমনই তো ছবির প্লট বোনা হবে না কি! হক কথা। কিন্তু ছবির নাম যেখানে ‘কালাকান্দি’ সেখানে যদি কেউ আক্ষরিক অর্থে নামকরণের সাৰ্থকতার পেছনে পাঁই পাঁই দৌড়য় গোলটা তখনই বাধে! ছবি দেখতে দেখতে প্রশ্নটা মাথায় চড়ে, ছবির নাম নাকি ছবির গল্পের ঘনঘটা, কে কার প্রতি বেশি নিবেদিত? কে আগে জন্ম নিল? ছবির নাম নাকি ছবির প্লট! কে কাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে? এ সব ভাবতে ভাবতে আপনি ঘেঁটে ঘ। হবেনই তো!

‘কালাকান্দি’র মানে জানেন আপনি? গোদা বাঙলায় ‘ঘেঁটে ঘ’ বলতে পারেন। এইবার আপনি ভাবুন যে ছবির মানে দাঁড়াল গিয়ে ঘেঁটে ঘ, আর সেই ‘মানে’ ছবির পরতে পরতে জিইয়ে রাখতে গেলে কী কাণ্ডটাই না ঘটাতে হবে! আখসত বর্মা মানে এই ছবির পরিচালক সেই সব কাণ্ডই ছবিতে ঘটিয়েছেন। এবং এমন সুনিপুণ ভাবে ঘটালেন যে ছবি শেষে আপনিও ঘেঁটে ঘ! এটাই কি চেয়েছিলেন আখসত? মহান পরিচালকরা তো এমন ভাবেই ক্যাথারসিস ঘটান দর্শকমনে। ধরুন কোনও ছবির নাম ‘প্রেম’, আর সেই ছবি দেখার পর আপনিও দারুণ ভাবে প্রেমরসে জারিত হলেন! সেই ছবি তো হিট মশাই। পরিচালকের অস্কার পাওয়া কে আটকায়! শুনেছি ‘৪২’ দেখতে দেখতে কে এক জন বিকাশ রায়কে জুতো ছুড়ে মেরেছিলেন! বিকাশ রায় যে মহান অভিনেতা এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না! সেই হিসাব কষলে তো ‘কালাকান্দি’র অস্কার ঠেকানো মুশকিল। বা আখসাতের ছোট করে একটা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড! ছবি শেষে তিনিও তো আমাদের ‘ঘেঁটে ঘ’ করে ছেড়েছেন! যেমনটি ছবির নাম তেমনটি দশাগ্রস্ত দর্শককুল! যে কোনও মহান পরিচালকের মুন্সিয়ানাই তো আখসত দেখিয়েছেন। তবে?

এই ‘তবে’র উত্তর যদি আপনি পেতে চান তবে ছবিটা একবার দেখুন। বুঝতে পারবেন আখসত কেন মহান পরিচালক হতে পারলেন না! উনি আমাদের ছবির নামের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে ঘেঁটে ঘ করে ছেড়েছেন ঠিকই, কিন্তু সে তো কেবল নামকরণের সার্থকতার বিজয়-পতাকা উড়ল! ছবি হিসাবে কল্কে পেল কোথায়?


‘কালাকান্দি’ ছবির একটি দৃশ্য।

অথচ কন্টেন্টের যে জোর ছিল না তেমন তো নয়। খুব সুন্দর প্লট ফেঁদেছেন আখসত। যে জীবনের কাছে প্ৰতিনিয়ত মাথা কুটে মরছি আমরা, যে জীবন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে আমাদের, যে জীবনের চোরাবালিতে পড়ে ঘেঁটে ঘ হচ্ছি আমরা সেই হরেক কিসিমের জীবন নিয়ে ছবি বানিয়েও ছবি শেষে আমাদের বলতে ইচ্ছে করে না ‘জীবন রে ছাড়িয়া যাস নে মোরে!’ 'জীবনের ওঠা-পড়া নিয়ে আমাদের বাস্তবিক টানাপড়েন সিনেম্যাটিক ম্যাজিকে কোনও উত্তরণে আমাদের পৌঁছে দেয় না! আর এখানেই এই ছবির ব্যর্থতা।

আরও পড়ুন, দৃষ্টিসুখের উল্লাস পেতে দেখে ফেলাই যায় ‘আমাজন অভিযান’

সইফ বেশ ভাল। কত দিন পর আবার ছবি করলেন। পুষিয়ে দিয়েছেন বইকি! ছবি শুরুই হচ্ছে ডাক্তারের চেম্বারে। সইফের স্টমাক ক্যানসার। লাস্ট স্টেজ। বেশি দিন আর বাঁচবে না। এক দিন রাতে কোকেন খাবার পর সইফ নতুন ভাবে জীবনকে দেখে। জীবনের কাছে মাথা কুটে মরে। ঠিক যেমন ভাবে মাথা কুটে মরে সেই মেয়ে যে এক রাতে বেসামাল গাড়ি চালিয়ে দু’জনকে মেরে ফেলে! সেই মেয়েকে কি জীবন এ বার নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে?

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: এমন রান্নাও তা হলে বলিউডে সম্ভব

যেমন ভাবা তেমন কাজ করলে এই ছবি উতরে যেত, কিন্তু আখসত তেমন করলেন কই! এই ছবি কেবল নাম সর্বস্বই হয়ে রইল, ছবি হয়ে উঠল না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE