আ জেন্টলম্যান ছবির একটি দৃশ্যে সিদ্ধার্থ ও জ্যাকলিন।
আ জেন্টলম্যান
পরিচালক: কৃষ্ণ ডিকে, রাজ নিদিমোরু
অভিনয়: সিদ্ধার্থ মলহোত্র, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, সুনীল শেট্টি
আ জেন্টলম্যান এমনই এক ছবি যে ছবি দেখতে দেখতে আপনি অনায়াসে ফোনে কথা বলতে পারেন অথচ পাশের লোক আপনাকে ‘অভদ্র’ বলে গালি দেবে না। তবে কি রাজ অ্যান্ড ডি কে-র ‘আ জেন্টলম্যান’ বেশ খারাপ ছবি? না, তা হয়তো নয়। ‘হয়তো’ বলছি, কারণ ‘আ জেন্টলম্যান’ ধোঁকা দেয়নি। কেমন ধোঁকা? রাজ অ্যান্ড ডি কে ‘ফাটাফাটি ছবি বানিয়েছি’ বলে কখনওই আশ্বাস দেননি। ট্রেলার দেখিয়েই এই পরিচালকদ্বয় ঠারেঠোরে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘দেখো বাপু, আর পাঁচটা মশলাদার মামুলি বলিউডি ছবিই বানিয়েছি। তাক লাগিয়ে দেবার ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই। তা-ও যদি নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে ছবি থেকে আনন্দরস শুষে নিতে পার সে তোমার ক্যালি বস।’ সে দিক থেকে ‘আ জেন্টলম্যান’ সত্যি ‘ভদ্র’! কথার খেলাপ করেনি। যেমনটা বলেছিল তেমনটা করে দেখিয়েছে। এখন যদি কোনও আহাম্মক এক-বুক আশা নিয়ে ‘জারা হাটকে’ কিছু দেখবে বলে ‘আ জেন্টলম্যান’ দেখতে আসে তারা তো বাপু ঠকবেই। ছবি-টবি দেখে আঁতলামি পাকিয়ে এখন যদি তারা তেড়ে খিস্তি মারে তা হলে বলব তারা নিন্দুকই। নিন্দে করবে বলেই নিন্দে করতে এসেছে। পরিচালক বেচারিদের দোষ কোথায় বলুন! ওরা তো গলা ফাটিয়ে সেই কবে থেকে চেঁচাচ্ছিল ‘আ জেন্টলম্যান’ ভরপুর অ্যাকশন কমেডি ছবি। ছবি দেখ আর ফুলট্টু মস্তি নাও। বেশি বোদ্ধা হতে যেও না, গুগলি খাবে।
আরও পড়ুন: লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা: কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে বলা এক গল্প
রাজ অ্যান্ড ডি কে একটা ঝাঁ-চকচকে কমেডি-অ্যাকশন ছবি বানিয়েছেন বটে! সিদ্ধার্থ মলহোত্রর ঠাঁই ঠাঁই গুলি চালানো, আকাশ-ছোঁয়া বাড়ি থেকে টপাটপ লাফিয়ে পড়া, ধাঁই ধপাধপ ঘুষি মারা— কী অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে এই সব দেখানো হয়েছে। কোথাও এতটুকু টাল খায়নি। কমেডি অবশ্য একটু কম পড়িয়াছিল, তাতে কী! অ্যাকশন-কমেডির অ্যাকশন-এ তো কোনও খামতি রাখতে চায়নি! পুরো ছবি দেখেও যদি আপনি রামগরুড়ের ছানাদের মতো মুখ করে বসে থাকেন সেই দায় আপনার। পরিচালকরা এইটুকু ছাড়ের দাবিদাওয়া সেই অনেক আগে থেকেই করে বসেছিলেন। তা সত্ত্বেও আপনি যদি নিটোল ভরপুর খামতিবিহীন অ্যাকশন-কমেডি দেখতে আসেন টিকিট কেটে, সেই বোকামি ভাই আপনার।
এখন সেই আমোঘ প্রশ্ন এসে পড়ে। সব দোষই কি তবে নিন্দুকের? মানছি, দুই পরিচালক প্রথম থেকেই এন্টারটেনিং মশলাদার ছবি দেখাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাদের। সেই কথা রেখেওছেন। কিন্তু তবু আঙুলটা তুলতে হয়। মশলাদার ছবি বানানোটা কোনও মাইনাস পয়েন্ট নয়। গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ফুলকা মশলাদার ছবি বলিউডে তৈরি হয়। ভুললে চলবে না, এই সব মশলাদার ছবি করেই শাহরুখ আজ শাহরুখ হয়েছেন। সলমন আজ সলমন হতে পেরেছেন। আমির আমির খান হয়েছেন। আমাদের, মানে আমজনতার কনসেপশন কিন্তু খুব ক্লিয়ার। আমরা খুব ভাল করে জানি মশলাদার ছবিতে পদে পদে যুক্তি খুঁজতে নেই, কথায় কথায় কাৰ্যকারণ নিয়ে মাথা ঘামাতে নেই। কিন্তু অবাস্তবতার বাস্তবতায় ডুবে যেতে পারলাম কি না সেই দায় কিন্তু পরিচালককে নিতেই হয়। মশলা ধোসা খেতে এসে আমরা যেমন চিজ ধোসার টেস্ট নিয়ে মাথা ঘামাব না তেমনই মশলাটা কতটা ‘স্পাইসি’ হল সে পরখ তো আমরা করবই। আর এখানেই ‘আ জেন্টলম্যান’ মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ, মশলায় ভেজাল। এই মশলায় কোনও ঝাঁজ নেই। সব এক্সপায়ারি-ডেট পেরনো মালমশলা দিয়ে ছবি বানিয়েছেন রাজ-ডিকে।
আ জেন্টলম্যান ছবির একটি দৃশ্য।
খুব মামুলি গল্প ফেঁদেছেন রাজ-ডিকে। এইসব ছবিতে গল্প যে খুব একটা জোরালো হবে না এটা তো জানাই ছিল। সিদ্ধার্থ মলহোত্র ওরফে গৌরব মিয়ামিতে সদ্য ফ্ল্যাট কিনেছে। সুশীল, সুন্দর ছেলে গৌরব, যেমন ট্যাগ লাইনে লেখা আছে আর কী! জ্যাকলিন ওরফে কাব্যর একদম পছন্দ নয় এমন ‘নিরামিষ’ ছেলে। তবু কাব্যর প্রেমে পড়ে গৌরব। কাব্যর আবার একটু ‘রিস্কি’ ছেলেই পছন্দ। সেই রিস্কি ছেলে আবার ঋষি। কে এই ঋষি? সিদ্ধার্থই আবার ঋষি। কিন্তু কী ভাবে! তা হলে কি সিদ্ধার্থর ডবল রোল? না, আর ভাঙছি না। এইটুকু সাসপেন্স থাক। কিছু একটার জন্য তো ছবিটা দেখতে হবে। এইটুকু জানার জন্যই না হয় ছবিটা দেখুন। অবশ্য ছবিটা দেখতেই হবে এমন মাথার দিব্যি দেবার লোক খুঁজে পেলে হয়!
আরও পড়ুন, মেঘনাদ বধ রহস্য: ফের ছন্দ ভাঙলেন অনীক
কেন বানালেন রাজ-ডিকে এই ছবি? দশ বছর আগে হলে এই ছবি করে সিদ্ধার্থ স্টার হলেও হতে পারতেন! যেমনটি হতে পেরেছেন শাহরুখ-সলমনরা। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন ছবিতে হিরোগিরি দেখিয়ে সিদ্ধার্থের স্টার হওয়া চাপ। তবু সিদ্ধার্থ অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উনি একা কী করবেন! রান্নার মালমশলাগুলোতেই যে গন্ডগোল! না এই ছবির গান ভাল, না এই ছবিতে এমন কোনও অ্যাকশন আছে যা দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়, না এমন কোনও ঘটনার ঘনঘটা আছে যা দেখে দাঁত দিয়ে নখ খুটতে হয়! যা যা আছে সেগুলো খুব ক্লিশে। আমরা দেখে দেখে হেদিয়ে গেছি।
রাজ-ডিকে একটু বোকাও আছেন। সিদ্ধার্থ-জ্যাকলিনের মতো দুই সেক্সবম্বকে পেয়েও কোনও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলেন না! অথচ খুব সহজেই ওটা একটা কারণ হতেই পারত ছবিটা দেখার। সেটাও হাতছাড়া করলেন তাঁরা। এ ছবি চলবে কেমন করে বলুন তো? রাজ-ডিকে মশলাদার ছবি বানাইয়া প্রমাণ করিলেন মশলাদার ছবি বানানোটা কত শক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy