কে এই সোফিয়া হায়াত? গাইয়া মাদার সোফিয়া কি সত্যিই এক অন্য মানুষ? সত্যিই কি তাঁর ভাবান্তর হয়েছে? না কি এ শুধুই এক বাহ্যিক রূপান্তর? রীতিমতো চর্চা চলছে বলি মহলে।
সোফিয়ার জন্ম ব্রিটিশ মুসলিম পরিবারে। স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন কাটানো, র্যাম্পে সাফল্যের সিঁড়িতে হাঁটা, ফ্যাশন ম্যাগাজিনের ঝাঁ চকচকে কভারে পোজ দেওয়া, বলিউডের গ্ল্যামার-স্রোতে ভাসা, রসালো বিতর্কের শিরোনামে থাকার পর হঠাত্ই ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হওয়া। স্পটলাইট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ‘অপার্থিব টান’ অনুভব করা এ নারীর আসল রহস্য কী? অবিশ্বাসীদের মনে একঝাঁক প্রশ্ন উঠছে তাঁকে ঘিরে।
আর্কলাইটের আলো ছেড়ে সন্ন্যাসিনী হয়ে সোফিয়া হলেন গাইয়া মাদার সোফিয়া। আড়ালে থেকে নিঃশব্দে নয়, রীতিমতো দিনক্ষণ জানিয়ে তার নতুন জীবনের কথা ফলাও করে প্রচারও করলেন। আধ্যাত্মিক টানের কথা জানালেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর কারণও জানিয়েছেন মিডিয়ায়। তাঁর কথায়, “এক দিনে এই পরিবর্তন হয়নি। গত দু’বছর ধরেই এটা হচ্ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিজের ভেতরে অনেক পরিবর্তন অনুভব করি। স্বপ্ন নয়, আমার চোখের সামনে মাদার মেরি এসেছেন। ব্রহ্মা-কৃষ্ণ-গণেশও এসেছেন। এপ্রিল থেকে পুরোপুরি সন্ন্যাসিনী।” জানিয়েছেন তাঁর আউটার বডি এক্সপিরিয়েন্সের কথা। বিশ্বাস করেন পূর্বজন্মেও। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানলাম আমরাও। অবিশ্বাসী মন যার প্রতিটি কথা কাটাচেরা করছিল। আসলে অবিশ্বাসের বহু উপকরণ নিজের হাতেই আমাদের কাছে তুলে দিয়েছেন মাদার সোফিয়া। সন্ন্যাসিনী হওয়ার কথা ঘোষণা করলেও অভ্যস্ত চোখে তাই ধাক্কা লেগেছে। তা সে তাঁর সাদা পোশাকে ছাপা ওঁম চিহ্ন আঁকা সবুজ চক্রের জন্যই হোক বা ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবির পিছনের দেওয়ালে রাখা কালীর মূর্তিই হোক বা কপালে ওঁম আঁকা ট্যাটু— কোনও একটি বিশেষ ধর্মের প্রতীকী চিহ্নগুলো ছাপিয়ে সর্বধর্ম সমন্বয় করে তা মেনে চলার কথা বলেছেন মাদার সোফিয়া। ধর্মকে সরলীকৃত করা অভ্যস্তদের তাই খটকা লাগছে। কে আসল মাদার সোফিয়া? সোফিয়া অবশ্য জটিলতা কাটিয়ে সরলরেখাতেই চলেছেন। তাঁর মতে, “সমস্ত ধর্মের উত্স মাদার মেরি। আমরা তাঁরই সন্তান।” সর্বধর্ম সমন্বয়ের পাঠ তো অনেকেই দিয়েছেন। তবে সে তালিকায় সোফিয়া হায়াতের নাম থাকাটা একটা চমকপ্রদ বিষয় তো বটেই। ওই যে বললাম, আমরা অনেক কিছুতেই অনভ্যস্ত। তাই খটকা লাগছে।
আরও পড়ুন: এই মডেল এখন সন্ন্যাসিনী!
নতুন জীবনে রূপান্তরণের কাহিনি শোনাতে গিয়ে সোফিয়া বলেছেন, “গত জুলাইয়ের পর থেকে কোনও রকম যৌন সংসর্গ করিনি।” বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গ ছেড়েছেন। নিরামিষাশী হয়েছেন। এমনকী পোশাকও পরছেন অর্গ্যানিক। ইচ্ছে আছে, লন্ডনে একটি মন্দির খোলার। যেখানে তাঁর হিলিং পাওয়ারের মাধ্যমে সকলকে সাহায্য করতে চান। মহারাষ্ট্রের খরাপীড়িতদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে একটি বেসরকারি সমাজসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজও শুরু করবেন। এ সবই জানিয়েছেন ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে। তা-ও অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন উঠছে। আচ্ছা, সাংবাদিক সম্মেলন করে এ সব কথা বলার ফাঁকে হঠাত্ নিজের ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করা সিলিকন প্যাড প্লাস্টিকের ব্যগে ভরে কেন এনেছিলেন? কেনই বা তা বের করে আনলেন জনসমক্ষে? সোফিয়া বলেন, “আমরা আসলে একটা ভুয়ো বাস্তবের পিছনে ছুটছি। এটা একেবারেই ভুল। মেকআপ-চুলে কালার করে যে মেয়েটি সামনে আসছেন তিনি আসল মানুষ নন। এই ভুয়ো জাগতিক ঘেরাটোপ থেকে আমাদের প্রত্যেকের বের হওয়া উচিত। আমরা প্রত্যেকেই ভেতর থেকে সুন্দর।” সামনেই তাঁর বলিউড ফিল্মের রিলিজ। সে ছবির প্রমোশনেও যাবেন না বলে জানিয়েছেন মাদার সোফিয়া। বলেছেন, “ওই ফিল্ম রিলিজ তো রুখতে পারব না। তবে আমি চাই, কেউ যেন ওই ফিল্ম দেখতে না যান।” সোফিয়া হায়াতকে নাকি একেবারেই ভুলে যেতে চান গাইয়া মাদার সোফিয়া!
সন্ন্যাস নেওয়ার আগের ছবি
তবে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই! ধর্মকর্মে মন চলে যাওয়ার পরও বারবার কেন ক্যামেরা আর প্রচারের আলোয় নিজেকে মেলে ধরছেন সোফিয়া? কারও কারও সন্দেহ, এ সবই আসলে নিজের ফিল্মের প্রচারই নয় তো? কেউ বলছেন এ ভাবে নিজেকে প্রজেক্ট করে ভবিষ্যতের গুরুমা কেরিয়ারের রাস্তা প্রশস্ত করছেন সোফিয়া।
সত্যিটা কী ভবিষ্যত্ই বলবে। কিন্তু আপাতত সোফিয়ার পরবর্তী ‘বাণী’র অপেক্ষায় আছেন এমন অনুরাগীর সংখ্যাও নাকি নেহাত কম নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy