টলি নায়িকাদের হাফ ইয়ারলি টেস্টের রেজাল্ট আগেই বেরিয়েছে। কে পাশ, কে ফেল এক নজরে পরখ করেছেন। জেনেছেন তাঁদের অভিনীত ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যের খতিয়ান। নায়করাই বা বাদ যাবেন কেন? টলিউডের হাফ ইয়ারলিতে তাঁদের এক এক জনের গ্রাফ এক এক রকম। দেখে নেওয়া যাক কে কোথায় দাঁড়িয়ে।
আরও পড়ুন, কে পাশ, কে ফেল, দেখুন টলি নায়িকাদের হাফ ইয়ারলি মার্কশিট
প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়
নট আউট ব্যাটিং। এই কথাটা সম্ভবত প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দীর্ঘ কেরিয়ারে কখনও সাফল্য এসেছে, কখনও বা ব্যর্থতা। কিন্তু থেমে যাননি নায়ক। চলতি বছরে বিরসা দাশগুপ্তের ‘ওয়ান’-এ ছক ভেঙেছেন প্রসেনজিত্। এখানে তিনি নায়ক থেকে খলনায়ক। নেগেটিভ ক্যারেক্টারেও অভিনেতা প্রসেনজিত্কে পছন্দ করেছেন দর্শক। তবে ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেনি।
যিশু সেনগুপ্ত
টালিগঞ্জে এক্সপেরিমেন্টাল কাজের চল শুরু হয়েছে গত কয়েক বছর। সেই ধারায় পরিচালকদের পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতেই থাকেন যিশু। এ বছর এখনও পর্যন্ত যিশুর সেরা কাজ ‘পোস্ত’। বাণিজ্য সফল ছবিতে যিশুর অভিনয় পছন্দ করেছেন দর্শকদের একটা বড় অংশ। নিজেকে ভেঙেছেন তিনি। ভেঙেছেন নতুন সাবজেক্টের খাতিরে। বছরের প্রথম দিকে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য বংস্ এগেন’-এও অভিনয় করেছিলেন যিশু। তবে সিনে সমালোচকদের মতে, ছবিটি নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি।
দেব
হাফ ইয়ারলি মার্কশিটে দেবকে নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই বেশি। অভিনয় তো তিনি করতেনই। এ বার প্রযোজনাতেও হাতেখড়ি হল। তাঁর হাত ধরেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ডেবিউ হল বান্ধবী রুক্মিণীরও। তাঁর অভিনয় নিয়ে দর্শকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন থাকলেও যেভাবে প্রযোজক হিসেবে নিজে ‘চ্যাম্প’-এর সবটা সামলেছেন তাতে তাঁর কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতে চান টলি মহলের একটা বড় অংশও।
আরও পড়ুন, ‘ডিভোর্সের পর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয় তৈরি হয়েছে’
ঋত্বিক চক্রবর্তী
এই মুহূর্তে ঋত্বিক চক্রবর্তী ইজ ইক্যুয়াল টু অন্য ধারার ছবি। খুব বেছে বেছে কাজ করেন অভিনেতা। কোয়ান্টিটির থেকে বরাবরই কোয়ালিটিতে মনোযোগী। ঝুলিতে যা রয়েছে প্রত্যেকটাই আলাদা ধরনের ছবি। বছরের ফার্স্ট হাফে মৈনাক ভৌমিকের ‘বিবাহ ডায়েরিজ’-এ ঋত্বিক জমিয়ে কাজ করেছেন। পরের হাফেও হাতে রয়েছে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং প্রজেক্ট। তাই দর্শকের মার্কশিটে বেশ ওপরের দিকেই থাকছেন অভিনেতা।
জিত্
এই মুহূর্তে টালিগঞ্জে বাণিজ্যিক ধারার অন্যতম সেরা বাজি জিত্। ‘বস ২’তেও তার প্রমাণ দিয়েছেন নায়ক। মোটের ওপর ভাল ব্যবসা করেছে ছবিটি। কর্মাশিয়াল নায়ক হিসেবেও জিত্ নিজের কাজ করেছেন। ফলে প্রথম ছ’মাসে জিতের রেজাল্ট ভাল-র দিকেই বলে মনে করেন দর্শকের একটা ব়ড় অংশ।
আবির চট্টোপাধ্যায়
চলতি বছরে ১৪ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছিল ‘বিসর্জন’। ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আবিরকে কাস্ট করেছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু হল কালেকশন বলছে, ওই ছবিতে জয়া আহসান এবং কৌশিক স্বয়ং এত ভাল ব্যাট করেছেন যে উল্টো দিকে উইকেটটা ধরে রাখার কাজ ছিল আবিরের। দর্শকদের একটা অংশ বলছেন, নন স্ট্রাইকার আবির উতরে গিয়েছেন। কিন্তু একটা অংশের মত, ‘বিসর্জন’-এর সবচেয়ে দুর্বল ঘুটি ছিলেন আবির।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
বলিউডি ছবিতে ইদানিং চালিয়ে ব্যাট করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের নিরিখে তাঁকে নতুন করে বিচার করার প্রয়োজন নেই দর্শকের। তিনি নিজে বহুবার প্রমাণ করেছেন। শুধু আরও বেশি বাংলা ছবিতে যদি তাঁকে ব্যবহার করত ইন্ডাস্ট্রি…। অডিয়েন্সের অন্দরে কোথাও যেন লুকিয়ে থাকে এই আক্ষেপ। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত শাশ্বতর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ব্ল্যাক কফি’। যথারীতি অভিনয় পছন্দ হয়েছে দর্শকের। তবে বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি ছবিটি।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
টলিউডের পাশাপাশি পরমব্রতও মন দিয়েছেন বলিউডে। অনুষ্কা শর্মার ‘পরী’তে দেখা যাবে তাঁকে। বছরের ফার্স্ট হাফে ‘মন্দবাসার গল্প’ অভিনেতার উল্লেখযোগ্য কাজ। এক সাইক্রিয়াটিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। বাণিজ্য সফল না হলেও প্রশংসিত হয়েছিল পরমের অভিনয়।
আরও পড়ুন, ‘মন এবং শরীর থেকে মেদ সরানোর চেষ্টা করেছি’
হিরণ
চলতি বছরে নতুন এক হিরণকে পেয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। এতদিন নায়ক হিসেবে তাঁকে দেখেছেন সকলে। এ বার প্রযোজনাতেও এলেন হিরণ। ৩১ মার্চ মুক্তি পেয়েছিল ‘মেহের আলি’। এ ছবির গল্প তো বটেই, চিত্রনাট্যও হিরণের। পাশাপাশি অভিনয়ও করেছিলেন। সব মিলিয়ে হিরণকে মার্কশিটে বেশ ভাল নম্বরই দিতে চান দর্শকের একটা হড় অংশ।
সোহম
অভিনয়টা ভালই করেন। কমিক সেন্স দুরন্ত। সোহমের সম্বন্ধে এ হেন বিশেষণ ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। কিন্তু তবুও তাঁর ছবি বাণিজ্য সফল কেন হয় না? কেনই বা তিনি দর্শকদের পছন্দের প্রথম সারিতে নেই? চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে সোহমের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘আমার আপনজন’ও ব্যবসায়িক লাভের মুখ দেখেনি। ফলে সব মিলিয়ে হাফ ইয়ারলি মার্কশিটে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন সোহম।
অঙ্কুশ
‘আমি যে কে তোমার’ হার্ডকোর বাণিজ্যিক ছবি। হিরো অঙ্কুশ। কিন্তু ছবিটি ইন্ডাস্ট্রিকে আদৌ কতটা বাণিজ্য দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরেই। দর্শকদের পছন্দের তালিকায় এখনও অঙ্কুশ ফার্স্ট বেঞ্চার নন। বাকি উত্তর দেবে ভবিষ্যত।
যশ
ছোটপর্দায় জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। তবে বড় পর্দায় এখনও নভিস যশ। বিরসা দাশগুপ্তের হাত ধরেই তাঁর টলি ডেবিউ। চলতি বছরেও যে ছবিটি করেছেন তা বিরসারই। মার্কশিটে ওপরের দিকে থাকতে হলে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে যশকে। অন্তত এমনটাই মন সিনে মহলের।
বনি
সবে শুরু হয়েছে বনির কেরিয়ার। এ বছরে এখনও পর্যন্ত মাত্র একটাই মেনস্ট্রিম ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কৌশানির সঙ্গে তাঁর নতুন জুটি ইন্ডাস্ট্রির পছন্দের। তবে দর্শকদের মন জয় করতে হলে আরও অনেকটা পথ বনিকে হাঁটতে হবে বলেই মনে করেন টলি মহলের একটা বড় অংশ।
গোটা তালিকা থেকে গত ছ’মাসে সবচেয়ে আলোচিত পাঁচ নায়ককে বেছে নিতে হলে আসবে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়, দেব, জিত্, আবির চট্টোপাধ্যায় ও ঋত্বিক চক্রবর্তীর নাম। গুগল ট্রেন্ডও সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
২০১৭-এর প্রথম সাত মাসে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চ হয়েছে দেবকে নিয়ে। লাল গ্রাফটি তাঁর। দ্বিতীয় সার্চে রয়েছেন জিত্। হলুদ গ্রাফটি তার প্রমাণ। এই মুহূর্তে তাঁরা যে ফার্স্ট ও সেকেন্ড সে ইঙ্গিত দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। থার্ড পজিশনে রয়েছেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়। নীল গ্রাফটি সেই রেজাল্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে। এর পরের স্থানে রয়েছেন আবির। সবুজ গ্রাফ তাঁর। বেগুণি গ্রাফ বুঝিয়ে দিয়েছে ঋত্বিকের গুগল সার্চের রেজাল্ট। তিনি রয়েছেন পঞ্চম স্থানে।
তবে এ সব তো গুগল ট্রেন্ডের রেজাল্ট। শেষ বিচারের ভার দর্শকের।
(১ অগস্ট ২০১৭ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় একটি গুরুতর ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। ‘আমার আপনজন’ ছবির গ্রাফিক্স প্লেটে ভুলবশত ‘আমি যে কে তোমার’ ছবির বিষয়বস্তু লেখা হয়েছিল। পরে তা সংশোধন করে নেওয়া হয়। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত। পাঠকদের ধন্যবাদ এই ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy