বাবা শত্রুঘ্ন সিন্হা, বোন সোনাক্ষী সিন্হা অভিনয়ে। তিনি কিন্তু পরিচালনায়। অথচ, তিনিও অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন! ‘নিকিতা রায়’ দিয়ে পরিচালনায় হাতেখ়ড়ি। বাবা আসানসোলের সাংসদ। আগামী দিনে অভিনয়ে আসবেন? বোনের সঙ্গে শুটিং থেকে ছবি মুক্তিতে কাজলের সঙ্গে টক্কর— আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে প্রথম কথা বললেন নতুন পরিচালক কুশ সিন্হা।
প্রশ্ন: বাবা, বোন অভিনয়ে। আপনি পরিচালনায়। ইচ্ছে করেই?
কুশ: আমিও কিন্তু অভিনয় শিখেছি। প্রশিক্ষণ নিয়েছি।
প্রশ্ন: তাই!
কুশ: অভিনয় করব বলে নয়। অভিনেতাদের মানসিকতা, তাঁদের কাজের ধারা, অভিনয়ের ধারা বুঝব বলে। সবটাই ভাল পরিচালক হব বলে। বরাবর পরিচালনার ইচ্ছে। ভাল পরিচালক হতে গেলে যা যা শেখার প্রয়োজন, যত্ন নিয়ে শেখার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: ভাল পরিচালকের কি অভিনয়টা জানাও জরুরি?
কুশ: ভীষণ জরুরি। ধরুন, আমি পরিচালক। অথচ, ছবির সাউন্ড সম্বন্ধে কিচ্ছু জানি না। তা হলে পোস্ট প্রোডাকশনের সময় ছবির সাউন্ডের কাজ ভাল করব কী করে? এই জন্যই বলে, অভিনয় দুনিয়ার সমস্ত বিষয় পরিচালকের নখদর্পণে থাকা উচিত। তার মানে আমি সব জানি, এমনও নয়। জানার চেষ্টা করি। একই ভাবে অভিনেতাকে নিজের ইচ্ছা, ভাবনা বোঝানোর জন্যেও পরিচালকের অভিনয়ে প্রশিক্ষণ থাকা দরকার।
প্রশ্ন: থ্রিলার বানাচ্ছেন...
কুশ: অলৌকিক বা অতিলৌকিক রহস্য-রোমাঞ্চ বলতে পারেন। দর্শক নতুন কিছু দেখতে চান।
প্রশ্ন: হিন্দিতে পারিবারিক গল্প বা আগের মতো প্রেমের ছবি হচ্ছে না। আপনি সে রকম ছবি বানানোর দিকে গেলেন না...
কুশ: সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার হলেও অন্য সমস্ত উপাদানের অভাব নেই। রাগ, ভালবাসা, ঘৃণা, প্রেম, গান, ভাল অভিনয়— সব পাবেন এক ছবিতে। সমস্ত মানবিক অনুভূতি প্রতি দৃশ্যে ছড়িয়ে। এই ধরনের ‘টোটাল প্যাকড’ ছবিও খুব কম তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: থ্রিলার বা ভৌতিক ছবি অবশ্য বাণিজ্যে ভাল ফল করছে...
কুশ: তা হলে বলি, পবন কৃপালনির লেখা এই গল্পটি কিন্তু একজন বর্ষীয়ান পরিচালকের হাতে চলে গিয়েছিল। কারণ, আমি নতুন। আমিও মেনে নিয়েছিলাম। ঘুরেফিরে সেই চিত্রনাট্য আবার আমার হাতেই এল! তখন থেকে বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেল, ‘নিকিতা রায়’ শুধু আমার জন্যই লেখা হয়েছে। তা ছাড়া, এই ছবির গল্পও আমার খুব পছন্দের। প্রত্যেকটি চরিত্র আমায় টেনেছে। অবশ্যই ব্যবসার কথা ভেবেছি। কিন্তু শুধুই বাণিজ্যিক দিক দেখিনি। ছবির গল্পের উপরে ভরসা করেছি।
প্রশ্ন: নিজের বোন সোনাক্ষীকেও বেছেছেন নিশ্চয়ই বিশেষ কারণে?
কুশ: সোনাক্ষীকে বেছেছি কারণ, ওর অভিনয়ের উপরে আস্থা আছে। নিজের বোন বলে বলছি না, সোনাক্ষী খুবই ভাল অভিনেত্রী। ও যেন ছাইচাপা আগুন। ভাল পরিচালকের হাতে পড়লেই পর্দায় ঝলসে ওঠে। ওর সাম্প্রতিক কাজ তার প্রমাণ।
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, ‘নিকিতা রায়’ নারীকেন্দ্রিক ছবি বলেই নিজের বোনকে বেছেছেন?
কুশ: আমি বলব, এটা হিউম্যানসেন্ট্রিক ছবি (বলেই হা-হা হাসি)। মানুষের কোনও অনুভূতি ছবিতে বাদ নেই।
প্রশ্ন: পরিবারের কেউ ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে পরিচালনা করা সুবিধার, না কি অসুবিধার?
কুশ: বোনকে সেটে পরিচালনা করা সুবিধা না অসুবিধার— এটাই প্রশ্ন তো? দেখুন, সোনাক্ষী অনেক ছবিতে কাজ করেছে। যথেষ্ট দায়িত্বশীল অভিনেত্রী। ওকে সেই সম্মান জানিয়েই আমরা কাজ করেছি। এটুকু বলতে পারি, সেটে কোনও পরিবারতন্ত্র ছায়া ফেলেনি। সোনাক্ষী অভিনেত্রী, আমি পরিচালক— এই পেশাদারিত্ব বজায় ছিল। নইলে বাকিরা ভাবতেন, এখানে কাজ কম, হুল্লোড় বেশি হচ্ছে। যা একেবারেই কাম্য নয়।
প্রশ্ন: সোনাক্ষী মানেই আমরা বিপরীতে সলমন খান, শাহিদ কপূর বা রাজকুমার রাওকে ভাবি। এই ছবিতে একমাত্র সোনাক্ষী ছাড়া তথাকথিত তারকা নেই...
কুশ: ছবিতে চরিত্র অনুযায়ী অভিনেতা বেছেছি। পরেশ রাওয়াল, অর্জুন রামপাল, সুহেল নইয়ার। এঁরা প্রত্যেকে তারকা এবং ভাল অভিনেতা। পরেশজির কথাই ধরুন। ভীষণ ভাল অভিনেতা। আবার দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়ও। অর্জুনস্যর বা সুহেলও একই তালিকায়। কোনও ছবিতে একসঙ্গে অনেক ভাল অভিনেতা থাকলে সেই ছবির আবেদন দর্শকদের কাছে আরও জোরালো হয়। ছবি দেখার পর সেটা আপনিও মানবেন (হাসি)।
প্রশ্ন: শুটিংয়ের গল্প বলুন না...
কুশ: ট্রেলার দেখলেই বুঝবেন, একটু অন্য রকম জায়গায় ছবির শুটিং হয়েছে। লন্ডন থেকে অনেক দূরে, খুব পুরনো, খোলা জায়গায়, জঙ্গলে শুটিং করেছি। কোনও ঘর ২০০ বছরের পুরনো, কোনওটা ৪০০ বছরের। অনেকেই ভাবেন, সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার মানে সেটেও বুঝি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আমাদের সঙ্গে কিন্তু সে রকম কিছুই হয়নি। তবে এটা বলতে পারি, একটি ঘরে মাঝেমধ্যে কাজের সময় একটু যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। এ বার ওটাই অলৌকিক অনুভূতি কি না বলতে পারি না। কারণ, সে রকম কিছুই কিন্তু দেখিনি।
প্রশ্ন: ইদানীং সোনাক্ষী কি একটু কম ছবি করছেন?
কুশ: বেছে ছবি করছে। দেখুন, যখন কেউ নতুন থাকেন, তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সব রকমের ছবিতে অভিনয় করার চেষ্টা করেন। পরিচিতি তৈরি হয়ে গেলে তিনিই ভাল চরিত্র খোঁজেন। পরেশ রাওয়ালের সঙ্গে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। তাঁকেও কেউ বলছিলেন, কম কাজ করছেন। পরেশজির যুক্তি, একটা সময়ের পরে সব কাজ করতে নেই। এমন চরিত্র বাছতে হয় যা সারা জীবন দর্শক মনে রাখবে। সোনাক্ষীও ওই পথেই হাঁটছে। তাই ‘দহার’, ‘হীরামন্ডি’র পর ‘নিকিতা রায়’-এ কাজ করল।
প্রশ্ন: ২৭ জুন ‘নিকিতা রায়’-এর সঙ্গে কাজলের ‘মা’-ও মুক্তি পাচ্ছে। ওটাও ভৌতিক থ্রিলার। টক্করের সম্ভাবনা?
কুশ: কোনও টক্কর নেই। ‘মা’ পুরোপুরি ভৌতিক ছবি। আমাদের ছবি সুপার ন্যাচারাল। আর টক্কর তো বলিউডে প্রতি সপ্তাহেই হয়!

ইদানীং বেছে ছবি করছেন সোনাক্ষী। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রশ্ন: ভয় করছে না! কিংবা দুশ্চিন্তা?
কুশ: ভয় পাচ্ছি না। দেখুন, প্রত্যেক ছবির ভাগ্য যদি প্রযোজক বা পরিচালকের হাতে হত তা হলে সব ছবি হিট করত। করে না। কারণ, ছবির ভাগ্য দর্শক ঠিক করেন। আমির খানের ‘সিতারে জমিন পর’কেই দেখুন। শুরুতে খুব ভাল ফল করেনি। এখন কিন্তু দৌড়চ্ছে।
প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনার বাংলা যোগও ঘটেছে। আপনার ছবির পোস্টার বানিয়েছেন বাঙালি শিল্প নির্দেশক একতা ভট্টাচার্য।
কুশ: আমার ছবির প্রথম পোস্টার হিমাংশু রানে বানিয়েছেন। ছবির ট্রেলারমুক্তির পর মনে হল, আরও পোস্টার দরকার। একতা খুব কম সময়ে কলকাতায় বসে একাধিক সুন্দর পোস্টার বানিয়ে দিয়েছেন। সোনাক্ষী টর্চ হাতে ধরে, পিছনে অলৌকিক শক্তির মুখ। সূক্ষ্ম অনুভূতি না থাকলে এত দ্রুত পোস্টার তৈরি করা যায় না।
প্রশ্ন: শত্রুঘ্ন সিন্হা আসানসোলের সাংসদ। বাংলার প্রতি টান কি সেখান থেকেই?
কুশ: বলতে পারেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্মান জানিয়ে বাবাকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ পদ দিয়েছেন। আসানসোলের মানুষেরা বাবাকে ভালবেসে নির্বাচনে জিতিয়েছেন। বাংলা এত সম্মান দিয়েছেন। আমিও বাংলাকে তাই ভালবাসি।
প্রশ্ন: আপনার বাবা পরিচালক গৌতম ঘোষের ‘অন্তর্জলি যাত্রা’য় অভিনয় করেছেন। আপনি বাংলা ছবি বানাবেন?
কুশ: বাংলা ছবি বানাব কি না জানি না, তবে বাংলায় হয়তো শুটিং করব।
প্রশ্ন: বাঙালি অভিনেতাদের নেবেন না?
কুশ: নিশ্চয়ই নেব। আমার পরের দুটো ছবির চিত্রনাট্য তৈরির কাজ চলছে। তার একটায় হয়তো বাঙালি অভিনেতা বা অভিনেত্রী থাকতেও পারেন।

একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে কাজল আর সোনাক্ষীর ছবি। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রশ্ন: আপনার কার কাজ ভাল লাগে?
কুশ: কারও নাম নেব না এখন। যদি ছবিতে কাউকে নির্বাচন করি তা হলে তখনই জানতে পারবেন (মৃদু হাসি)।
প্রশ্ন: কখনও ছবি পরিচালনায় একঘেয়েমি এলে বাবার মতো রাজনীতিতে আসবেন?
কুশ: সবে পরিচালনায় এলাম। অনেক কাজ করতে চাই। এখনই অন্য পেশার কথা বলবেন না। আর আমি কিন্তু এত সহজে দমে যাই না! শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ি। সুতরাং, ছবি পরিচালনার বাইরে অন্য কিছু করার প্রশ্নই ওঠে না।