নিজের অফিসে বসে ‘আমাজন অভিযান’-এর গল্প শোনালেন দেব।— নিজস্ব চিত্র।
রিলিজের আগের রাত…
দেব: প্রশ্নটা শোনার আগেই উত্তর বলে দিচ্ছি, ঘুম হয় না (হা হা…)।
এখনও?
দেব: মানে? আমি কি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি নাকি? ‘আরশিনগর’ হোক বা ‘পাগলু’ বা ‘চাঁদের পাহাড়’— যে টাকাটা লাগানো হচ্ছে, প্রযোজককে তো সেটা ফেরত দিতে হবে। রিলিজের তিন-চার দিন আগে থেকে ঘুম হয় না। রিলিজের পরেও ঘুম হয় না। আর যদি প্রিমিয়ার হয়, তা হলে আরও খারাপ অবস্থা।
কেন?
দেব: প্রিমিয়ার ইজ লাইক আ পেড অ্যাবিউস। আরে, একটা লোক কষ্ট করে ছবি বানিয়েছে। তুমি ফ্রিতে দেখছ, তার মানে এই নয় যে, লোককে জাজমেন্ট দেবে। দর্শককে টিকিট কেটে হলে গিয়ে ছবিটা দেখতে তো দাও।
‘আমাজন অভিযান’-এরও তো প্রিমিয়ার হবে।
দেব: তা তো হবেই।
এই ছবিটা কি ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সিক্যুয়েল?
দেব: যেখানে ‘চাঁদের পাহাড়’ শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই শঙ্করের অভিযান শুরু হচ্ছে। ২০ কোটি টাকার একটা ছবি আমার কাঁধে। এটা যদি হিট হয়ে যায় হয়তো ‘এসভিএফ’ বলবে লেটস প্ল্যান ফর পার্ট থ্রি (হাসি)।
আরও পড়ুন, রুক্মিণী নার্ভাস হলে কে হেল্প করত জানেন?
এত বড় বাজেট, রিস্কি মনে হয়নি?
দেব: এটাই তো আমার রেসপন্সিবিলিটি।
আপনার প্রোডাকশনে ছবি হলে তো প্রোমোশনের নতুন নতুন আইডিয়া থাকে। এখানে আইডিয়া শেয়ার করেছিলেন?
দেব: অফকোর্স। দেখুন, আমার কোনও ইগো নেই। তা ছাড়া অ্যাক্টর দেব ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান প্রোডিউসার দেব। প্রোডিউসার দেবের ভবিষ্যৎ কিন্তু আমি এখনও জানি না।
‘আমাজন অভিযান’-এর একটি দৃশ্যে দেব।
আর এখন তো এসভিএফ-এর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়েই নিয়েছেন?
দেব: পুজোতে হয়তো আবার ঝগড়া হবে। যখন ওরা ছবি নিয়ে আসবে, আমিও ছবি নিয়ে আসব, আবার ঝামেলা হবে। কিন্তু বুদ্ধিমান লোকেরা জানে ঝগড়া কতটা নিয়ে যেতে হয়। ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করে তো ঝগড়া করে লাভ নেই।
‘ককপিট’-এর থেকে ‘আমাজন অভিযান’ বেশি হিট করলে প্রযোজক দেবের ভাল লাগবে নাকি খারাপ?
দেব: অফকোর্স ভাল লাগবে। দেখুন, খুব ছোট্ট পৃথিবী। আমি তো সেলফিশ নই। হয়তো যেটার জন্য আমি লড়ছি সেটা পাওয়ার আগেই চলে গেলাম। আর এর আগে ‘চ্যাম্প’ আর ‘ককপিট’ হিট না হলে কি ‘আমাজন অভিযান’ এই অ্যাক্সেপট্যান্স পেত?
এত দিনের কেরিয়ারে কী শিখলেন?
দেব: সেলফ গ্রুমিং। দেখুন, আজ কোনও নিউ কামার বম্বেতে এসে শাহরুখ খান হতে চায়। শাহরুখ হতে চেয়েছিল দিলীপকুমার।
আর দেব কী হতে চেয়েছিলেন?
দেব: দেব সুপারস্টার হতে চেয়েছিল। আর টলিউডে তো উত্তমকুমার রোল মডেল। ওঁর হাসি ভাল, হাঁটা ভাল…
আরও পড়ুন, ঘুরে দাঁড়ানোর উড়ান ধরলেন দেব
দেব কখনও উত্তমকুমার হতে চাননি?
দেব: না। তার কারণ আমার সেই যোগ্যতাই নেই। ভাল করে বাংলাই বলতে পারতাম না, উত্তমকুমার কী করে হব! আমি কখনও ভুলব না, প্রথম ছবির অডিশন দিতে গিয়ে আমাকে বলা হয়েছিল, ও! তোমার জন্য তো আরও ২০০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। আবার হিন্দিতে লিখতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, এত বড় অপমান! বাট ইট ওয়াজ গুড। ওটা হয়েছিল বলেই আজ আমি এখানে আছি। তখন বাংলা টিচার রাখলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলা শিখে ওই প্রোডিউসারকে বলেছিলাম, আমি বাংলা পড়তে শিখে গিয়েছি। আপনাকে আর আমার জন্য ২০০ টাকা এক্সট্রা খরচ করতে হবে না। তবে আমি কিছু লোভী স্বপ্ন দেখি।
যেমন?
দেব: কেরিয়ারের শুরুতে ভাবতাম, একটা ফ্ল্যাট হোক। মেট্রো করে যেতে আর ভাল লাগছে না। একটা গাড়ি হোক। তার পর সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি হল। তার পর ভাবলাম, এ বার একটা হন্ডা সিটি হোক। সেটা হওয়ার পর ভাবলাম, এ বার একটা বিএমডব্লিউ তো কিনি…। কিন্তু এগুলো তো কিনলাম। এর আগে কত রাত যে ঘুমোইনি। এটা বুঝলাম আরও পরিশ্রম করতে হবে।
আরও পড়ুন, পুজোর ছবির রিলিজ নিয়ে দেব বনাম শ্রীকান্ত
তার ফসল হিসেবেই তো সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবির দায়িত্ব আপনার কাঁধে।
দেব: (হাসি) আই ওয়ান্ট টু বি আ ভেরি আনপ্রেডিক্টেবল অ্যাক্টর। অনেক দিন ধরে বেঁচে থাকতে গেলে বিভিন্ন ঘরানার ছবি করতে হবে। আমার প্রোডাকশনের পরের ছবিটা কমেডি হবে। হাসতে হাসতে লোকে পাগল হয়ে যাবে।
আমাজনের শুটিংয়ে আনপ্রেডিক্টেবল অনেক সিচুয়েশন ফেস করেছেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কী ছিল?
দেব: ওয়াটারফল। ওটা দেখে ভয় পেতাম আমি। একদম ধার দিয়ে হাঁটতে হত। পুরোটাই স্লিপারি। শ্যাওলা হয়ে গিয়েছে। ওখানে শটের আগে যে অল দ্য বেস্ট বলা হত, মনে হত সেটা কথাটাই আসলে ভগবান।
আচ্ছা, ককপিটে কি আপনার কথাতেই কলকাতার রসগোল্লা গানটা রেখেছিলেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়?
দেব: হ্যাঁ, এটা সত্যি।
‘আমাজন অভিযান’-এর অন্য একটি দৃশ্য।
আমাজনেও কি তেমন কিছু ইনপুট দিয়েছিলেন?
দেব: না, আমাজনের যা গল্প আমার থেকে কমলদা অনেক বেশি জানেন। আর এখন সব জায়গাতেই রিমিক্সের একটা কালচার চলছে। ফলে রসগোল্লা রেখেছিলাম। সেটা তো হিট।
২৪ ঘণ্টায় এত রকম কাজ সামলান কী ভাবে? টাইম ম্যানেজমেন্টের রেসিপিটা কী?
দেব: এটার জন্য আমার টিমকে ধন্যবাদ। যারা আমাকে সহ্য করে। আমার মনে আছে, চ্যাম্পের আগে রাত দুটোর সময় হোয়াটস্অ্যাপে ডেকে নিয়েছিলাম টিমকে। সাড়ে তিনটের মধ্যে সকলে আমার অফিসে চলে আসে। তার পর কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।
আরও পড়ুন, দ্বিতীয় ‘সন্তানের’ জন্মের আগে আকাশে উড়লেন দেব
আর রাজনীতি?
দেব: বিশ্বাস করুন, পলিটিক্সটা আমি কিছুই বুঝি না। যেটুকু করতে পারছি দিদির জন্য।
টাইম ম্যানেজমেন্টের লিস্টে বিয়ে, সংসার কবে ঢুকবে?
দেব: বিয়ের এখন প্রশ্নই ওঠে না। যে দিন বাড়ি থেকে সকাল ১০টার সময় বেরোব, আবার রাত ১০টার মধ্যে বাড়ি ঢুকতে পারব সে দিনই বিয়ে করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy