Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

‘শট রেডি, ডাকতে আসবে, কিন্তু উঠব না, এ ভাবেই মরতে চাই’

প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়ি। শীতের বিকেল। সাজানো ড্রইংরুমে ঢুকে প্রথমেই বললেন, ‘আপনাকে চা-কফি কিছু দিয়েছে তো?’ ঠিক যেন যে কোনও বাড়ির দায়িত্বশীল কর্তা। অতিথি আপ্যায়ণের দিকে কড়া নজর। মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতেই সোফায় বসলেন। সামনে বসে থাকা মানুষটা কখনও ‘বুম্বা’, কখনও ‘প্রসেনজিত্’, কখনও এই মুহূর্তে টলিউডের অভিভাবক। রেকর্ডার অন হল…। পরতে পরতে রেকর্ড হল তাঁর জীবনের অনেকগুলি অধ্যায়। সামনে বসে থাকা মানুষটা কখনও ‘বুম্বা’, কখনও ‘প্রসেনজিত্’, কখনও এই মুহূর্তে টলিউডের অভিভাবক। রেকর্ডার অন হল…। শুধু আত্মজীবনী নয়, পরতে পরতে রেকর্ড হল অনেকগুলি অধ্যায়।

আড্ডার ফাঁকে প্রসেনজিত্।— নিজস্ব চিত্র।

আড্ডার ফাঁকে প্রসেনজিত্।— নিজস্ব চিত্র।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:৪৭
Share: Save:

সদ্য কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৃষ্টিকোণ’-এর ফার্স্ট লুক রিলিজ করল। প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণার জন্য তো নতুন করে অপেক্ষা শুরু হল দর্শকদের?
প্রসেনজিত্: ‘প্রাক্তন’-এর পর আমি ঋতুকে বলেছিলাম, জানি না সেটা সম্ভব হবে কিনা, আমার ইচ্ছে আমাদের দু’জনের যখন চুল একেবারে সাদা হয়ে যাবে তখনও আমাদের জুটির ছবি দেখার জন্য দর্শকের একই রকম অপেক্ষা থাকবে। আর সেটা করতে গেলে ছাড়ার ভাগটা বেশি, ধরার ভাগটা কম রাখতে হবে।

অর্থাত্ বেশি ছবি করবেন না আপনারা?
প্রসেনজিত্: আসলে ঠিক গল্প, ঠিক পরিচালকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখন আর আমরা শুধু নায়ক-নায়িকা নই। অভিনেতা-অভিনেত্রী। যে স্ক্রিপ্ট, যে পরিচালক আমাদের সঙ্গে সেই জাস্টিসটা করতে পারবেন সেখানেই কাজ করব।

কিছু দিন আগেই পুরীতে এই ছবিরই আউটডোর হল, অনেক দিন পর এই জুটির আউটডোর।
প্রসেনজিত্: হ্যাঁ, খুব ছোট্ট আউটডোর। আমরা সবাই খুব মজা করে কাজ করেছি। এ বারের আউটডোরটা ফ্যামিলির মতো হয়েছে। আমি তখন বলছিলামও, এই সব বিচগুলোতে আমরা আগে গান করেছি, নাচ করেছি। (হাসি) ঋতু মানেই বৃষ্টির সিকোয়েন্স থাকতই। সে সময় জল ছেটানো, রোল খাওয়া— এ সব হত। আর এখন সেই জায়গায় উই আর ডুইং সিনস।

আরও পড়ুন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি বেকার, আমার কাছে কোনও কাজ নেই’


পুরীর আউটডোরে প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণার সেলফি টাইম। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

মনে হয়নি, আগের মতো আবার প্রেমে পড়ে যাওয়া যায়?
প্রসেনজিত্: প্রেমে তো বারবার পড়া যায়। প্রেমে পড়াতে কোনও আপত্তি নেই। সেটা প্রকাশ করুন আর না করুন। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের দু’জনেরই মনে হয়েছে কাজটা খুব ইমপর্ট্যান্ট। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে আমাদের দুজনেরই অনেক কিছু দেওয়ার রয়েছে। ‘প্রাক্তন’ এর পর আমার ঋতুর সঙ্গে দু-একটা পার্টিতে হাই-হ্যালো হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরার সামনে আমরা যখন দু’জনে দাঁড়াই সেটা ১৪ বছর পরে হোক বা তিন বছর বা ১০— সেই ম্যাজিকটাই ওয়ার্ক করে।

প্রযোজনার লিস্ট লম্বা হচ্ছে, কিন্তু আর্থিক লাভ হচ্ছে কি?
প্রসেনজিত্: দেখুন, প্রযোজকের জ্যাকেটটা আমি কোনও দিনই পরিনি। আজও পরি না। আমি যখন ‘তিন ইয়ারি কথা’ করেছি, তখন মনে হয়েছিল ওই সিনেমাটা করা দরকার। আমি প্রোডিউসার ছিলাম। কিন্তু আই ওয়ান্টেড টু সাপোর্ট দেম। তার পর টেলিভিশনে ‘গানের ওপারে’ করলাম। সেটা হয়তো ফিনানশিয়ালি লস করেছিল। কিন্তু ২০ বছর পরেও যদি টেলিভিশনের ভাল কাজের আলোচনা হয়, হোপফুলি ‘গানের ওপারে’র নাম আসবে। আসলে মানি মেকিং ছবি কোনটা হবে, আর কোনটা হবে না সেটা আমার থেকে বেটার কেউ জানে না। ‘শঙ্খচিল’ আমি মানি মেকিংয়ের জন্য করিনি। মনের মানুষের সময় গৌতমদাকে স্ট্রাগল করতে দেখেছিলাম। ফলে গৌতম ঘোষের একটা ছবি আমার কাছে, রাদার আমার ছেলের কাছে থাকবে। সেই ভাবনা থেকেই করা। আমার প্রযোজক হওয়ার ভাবনাটা হল সেই ভাল কাজ। আমি কিন্তু আজও অভিনেতা হিসেবে খুশি।

আরও পড়ুন, সিভিতে তিনটে ছবি, ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা জায়গা তৈরি করলেন যশ?

আর পরিচালনা?
প্রসেনজিত্: এগজ্যাক্ট সময়টা এখনই বলতে পারব না। একটা কাজ করছি। আমি কলকাতায় বসে যা সিনেমা শিখেছি, সেখান থেকে কলকাতার মানুষদের নিয়ে একটা ছবি তৈরি করব, যেটা ন্যাশনাল লেভেলে যাবে। আমার সব সময়ই মনে হয়, এখানে প্রচুর ট্যালেন্ট রয়েছে। তাদের নিয়ে তো ন্যাশনাল লেভেলে কাজ করতে হবে। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। না হলে এরা চিরকালই রিজিওনাল সিনেমায় আটকে থাকবে। পরিচালনা করলে সেটা বলিউড।

বাহ! দারুণ খবর। এই বছরই হচ্ছে কি?
প্রসেনজিত্: (সামান্য পজ) এই বছর না হলেও পরের বছর। আসলে বম্বের কথা তো সে ভাবে বলা যায় না…।

আরও পড়ুন, ‘ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে কোনও মজা নেই’

এত রকম কাজ করেন, মোটিভেশনটা কী?
প্রসেনজিত্: মোটিভেশনটা আমার নিজের। প্রত্যেক দিন সকালে উঠে আমার মনে হয়, আজ আমার জন্য নতুন দর্শক কে হবেন? কাদের আজ আমি আমার ফ্যান তৈরি করব।

এর মধ্যেই আত্মজীবনীও লিখে ফেললেন।
প্রসেনজিত্: হ্যাঁ, ‘বুম্বা শট রেডি’। ৩০ জানুয়ারি রিলিজ করছে।

‘বুম্বা শট রেডি’ এই কথাটা কি নিজেই নিজেকে বলেন? প্রসেনজিত্ হ্যাঁ। মানে আমি এমন একটা লোক যে মৃত্যু পর্যন্ত এটাই শুনতে চাই। আমি চাই মেকআপ রুমে বা মেকআপ ভ্যানে রেস্ট নেব। শট রেডি থাকবে। আমাকে ডাকতে আসবে কিন্তু আমি আর উঠব না। এ ভাবেই মৃত্যু চাই আমি।চোখের পলক পড়বে না আপনার এমনই রুদ্ধশ্বাস এক অচেনা প্রেমের গল্প !

‘বুম্বা শট রেডি’ এই কথাটা কি নিজেই নিজেকে বলেন? প্রসেনজিত্ হ্যাঁ। মানে আমি এমন একটা লোক যে মৃত্যু পর্যন্ত এটাই শুনতে চাই। আমি চাই মেকআপ রুমে বা মেকআপ ভ্যানে রেস্ট নেব। শট রেডি থাকবে। আমাকে ডাকতে আসবে কিন্তু আমি আর উঠব না। এ ভাবেই মৃত্যু চাই আমি।

সব সত্যি কথা লিখেছেন?
প্রসেনজিত্: বলার মতো ৯৯ ভাগ সত্যি ঘটনাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

বইটা বেরনোর পর বিতর্ক হতে পারে?
প্রসেনজিত্: হতেই পারে। কন্ট্রোভার্সি হতেই পারে। একটা মানুষ ৩০-৩৫ বছর কাজ করছে। বেশির ভাগ সময়টাই নিজেকে একটা জায়গায় রেখেছে। ফলে তাকে নিয়ে তো কন্ট্রোভার্সি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE