চেনা ছকের কমেডি নয়। বরং একেবারে অচেনা এক চরিত্রে বিশ্বনাথ বসুকে কাস্ট করেছেন পরিচালক পরিচালক বিশ্বরূপ বিশ্বাস। তাঁর আসন্ন ছবি ‘বিলের ডায়েরি’-তে বিশ্বনাথ কানু মহারাজ। ছবি মুক্তির আগে অকপট অভিনেতা।
এক সময় নাকি সংসার ছেড়ে দেবেন ভেবেছিলেন?
ঠিকই। ভেবেছিলাম সব ছেড়ে বেরিয়ে যাব।
কেন?
ছোট থেকে সাধুদের দেখেছি। ওই লাইফস্টাইলটা আমার ভাল লাগত। আর নিজের সঙ্গে নিজের যোগাযোগটা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা মিশন আমাকে শিখিয়েছে। খাওয়ার আগে ঠাকুরের নাম নেওয়া, তারপর ছাত্র পড়ানো— খুব ভাল লাগত ওই জীবনটা। তা ছাড়া বিবেকানন্দ বরাবরই আমাকে টানে। মিশনে আমার যাতায়াত দীর্ঘ দিনের। সে সব থেকেই হয়তো ভেবেছিলাম…।
তারপর?
তারপর যেটা হল সেটাও স্বাভাবিক। আসলে সব সময়ই ভেবেছি যেটা করব মন দিয়ে করব।
তা হলে ‘বিলের ডায়েরি’র ‘কানু মহারাজ’-এর চরিত্র আপনার দর্শনের সঙ্গে অনেকটা মিলে গিয়েছে নিশ্চয়ই?
কী বলব আপনাকে, সকাল ১০টা-১১টা নাগাদ স্ক্রিপ্ট শুনতে শুরু করেছিলাম। যখন শেষ হল তখন দেখলাম একটা স্বপ্নের চরিত্র ধরা দিয়েছে। জীবনে প্রত্যেক চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু চরিত্র থাকে যেটা হয়ে উঠতে হয়। কানু মহারাজ তেমনই।
আরও পড়ুন, ৩২ বছরের এক ছেলের ‘মা’ অপরাজিতা!
‘কানু মহারাজ’কে কি কারও আদলে গড়েছেন?
চরিত্রটা পাওয়ার পর স্বামী নিত্যরূপানন্দ অর্থাত্ জ্ঞান মহারাজের কথা মনে হয়েছিল। আমাকে একবার একটা ধুতি উপহার দিয়েছিলেন। বিবেকানন্দের বই পড়তে দিয়েছিলেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ওঁর।
আপনি নিজে কি মিশনের ছাত্র ছিলেন?
না। সে সুযোগ আমার হয়নি। ভর্তির পর কড়া শাসনে থাকতে হয় বলে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রত্যেক ছাত্রের খুব রাগ হয়। পরে তারা প্রত্যেকে উপলব্ধি করে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা মিশনেই কাটিয়েছে।
কানু মহারাজের চরিত্রে বিশ্বনাথ।
এ ছবির ইউএসপি কী?
এই প্রথম কোনও ছবির জন্য রামকৃষ্ণ মিশনের কোনও স্কুলের ভিতরে শুটিং হল। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের খেলার মাঠ, রান্নাঘর, প্রার্থনাসভা ব্যবহার করা হয়েছে। আর ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা তো খুব সুন্দর, শ্রদ্ধার, ভালবাসার। গুরু মানেই ভয় পাওয়া নয়, সে বন্ধু। শুধু ছাত্রজীবনে নয়, বিভিন্ন সময়েই তাঁকে মনে পড়বে। সেটাই এই ছবিতে রয়েছে।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক যেখানে দাঁডিয়ে, সেই প্রেক্ষাপটে কি অন্য বার্তা দেবে ছবিটি?
অবশ্যই। এ সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক এই সিনেমা। আমি তো বুঝতেই পারি না, শিক্ষক কী এমন করতে পারেন যাতে ছাত্ররা তাঁর গায়ে হাত তুলবে? এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আবার শিক্ষক মদ্যপ অবস্থায় স্কুলে ঢুকছে সেটাও দেখেছি। ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক অশালীন আচরণ করছে তাও দেখলাম। ব্যথা লাগে। এটা আমার দর্শনের সঙ্গে যায় না। ছোটবেলা থেকে এ সব দেখিনি।
শুধু তো স্কুল শিক্ষক নন, জীবনের অন্য গুরুদের কথাও কি বলবে এই ছবি?
হুম। আমার জীবনেই দেখুন না। খরাজদা- আজও ওঁর কাছ থেকে শিখছি। পরাণকাকা- জীবনের কথা কথা শুনি। শুভাশিসদা- কত কী যে শিখেছি। এই ছবিটা সে সব বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে।
‘কানু মহারাজ’-এর চরিত্রের জন্য নাকি ছ’মাস ন্যাড়া মাথায় ছিলেন?
হ্যাঁ, তা থাকতে হয়েছিল।
অসুবিধে হয়নি?
আমি ১৯ ডিসেম্বর ন্যাড়া হয়েছিলাম। আবার মে মাসে চুল আঁচড়াই। আর ডিসেম্বর শুধু নয়, গোটা শীতকালটা আমার কাছে আর্থিক কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর শো থাকে। সে সব প্রায় বন্ধ রেখেছিলাম। খুব কম শো করেছি। তাও মাথায় ব্যান্ডেনা বেঁধে। তবে ফিল্ম বিশেষত টেলিভিশনের প্রজেক্ট ছাড়তে হয়েছে। সে সব এখন হিট হয়েছে প্রচুর।
‘বিলের ডায়েরি’র একটি দৃশ্যে বিশ্বনাথ।
টাইপকাস্ট কমেডি ছাড়াও যে অন্য চরিত্রে আপনাকে ভাবছে ইন্ডাস্ট্রি, কেমন লাগছে?
এটা প্রথম নয়। এর আগে টেলিভিশনে ‘সুবর্ণলতা’ করেছি। লোকে বলেছিল, তুই ‘প্রবোধ’! এটা কি চলবে? ‘উড়ো চিঠি’ দেখে শত্রুও মিত্র হয়ে গিয়েছিল। ‘অলীক সুখ’-এও সিরিয়াস চরিত্র। আসলে ভাল লাগা বলুন বা কৃতজ্ঞতা— সবটাই দর্শকদের প্রতি। আমাকে যে কত ভাবে তাঁরা অ্যাকসেপ্ট করেছেন, ভাবা যায় না। অবশ্যই যাঁরা অন্য রকম চরিত্রে ভেবেছেন সেই সব পরিচালকদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। তবে কমেডি করতেও আমার কোনও অসুবিধে নেই।
শুধু কমেডি?
আরে যে দেশে জন্মেছি, সেখানে বাঘা বাঘা কমেডিয়ানদের পাশে আমার কমেডি যে দর্শক দেখছেন, এটাই অনেক। দ্বিধা নেই আমার। আফশোস করলে পিছিয়ে যাব। দেখুন আমার দোকানে অনেক রকম খাবার পাওয়া যায়। তবে লোকে যদি সবচেয়ে বেশি কাটলেটটা ভালবাসে, আমি সেটাই খাওয়াবো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy