Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Soumitra Chatterjee’s Birthday

এখনও মনে হয় হয়তো কখনও ফোনটা বেজে উঠবে, সৌমিত্রর জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় পরিচালক অতনু

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে তিনি তাঁর অভিভাবক মনে করেন। অভিনেতার জন্মদিনে সেই সম্পর্ককে ফিরে দখলেন পরিচালক অতনু ঘোষ।

Bengali director Atanu Ghosh remembers deceased actor Soumitra Chatterjee on his birthday

ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫২
Share: Save:

শুক্রবার সমাজমাধ্যমে ভেসে উঠল একটি ছবি। ছবিটি একটি মোবাইল ডায়ালারের। সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। ছবিটি পোস্ট করেছেন পরিচালক অতনু ঘোষ। যাঁর চারটি ছবিতে দর্শক সৌমিত্রকে দেখেছেন। শুক্রবার প্রয়াত অভিনেতার জন্মদিন। প্রিয় মানুষের স্মৃতিচারণায় অতনু লেখেন, ‘‘মোবাইল কন্ট্যাক্ট বইয়ে প্রোফাইল ছবি, নাম, নম্বর যেমন ছিল, তেমনই আছে। নির্ঘাত এক দিন ফোন বেজে উঠবে— ‘কী ব্যাপার বলো তো… এত দিন পাত্তা নেই? চলো, কিছু একটা করি দাঁড়াও, এক মিনিট ধরো, ডায়রিটা নিয়ে আসি…।’’’

প্রিয় অভিনেতার জন্মদিনে তাঁর অনুপস্থিতি কতটা অনুভব করেন অতনু? পরিচালক আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘শুধু জন্মদিন কেন, মানুষ হিসেবে আমি ওঁকে প্রতিদিন মিস করি। অভিভাবককে সন্তান তো সব সময়েই কাছে পেতে চায়। সৌমিত্রবাবু আমার জীবনে সে রকমই এক জন মানুষ।’’ নেপথ্যে একাধিক কারণও উল্লেখ করলেন অতনু। শিল্পী হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একাধিক সত্তা অতনুকে বিভিন্ন সময় অনুপ্রাণিত করেছে। অতনুর কথায়, ‘‘উনি তো ছিলেন একটা আলো। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ভোরবেলায় হাঁটতে গিয়ে পৌলমীদির মেসেজ এল, ‘বাপি আর নেই!’ তার পর আমার সামনে থেকেও আলোটাও যেন নিভে গেল মনে হল।’’

সৌমিত্রর জন্মদিনে সাধারণত তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন অতনু। কখনও কাছাকাছি থাকলে বাড়িতেও পৌঁছে যেতেন। পরিচালকের কথায়, ‘‘উনি কিন্তু সেটা পছন্দও করতেন।’’ কাজের বাইরেও দুই শিল্পীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে জানালেন ‘রবিবার’ ছবির পরিচালক। শিল্প বিষয়ক কোনও প্রশ্ন জাগলেই তিনি তার উত্তর পেতে সৌমিত্রের দ্বারস্থ হতেন। অগ্রজ অভিনেতা উত্তরও দিতেন। অতনু বললেন, ‘‘শুধুই ছবি নয়। ফিল্ম স্কুলে দীর্ঘ দিন ওঁর সঙ্গে মাস্টারক্লাস করেছি। সে অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।’’ অতনু জানালেন, তিনি যে ছবির দর্শনে বিশ্বাসী, সৌমিত্র নিজেও সেই ধরনের ছবি পছন্দ করতেন। অতনুর কথায়, ‘‘আমাদের মতো পরিচালকদের লড়াইটা উনি বুঝতেন এবং সম্মান করতেন। অল্প বয়সে ওঁরও ডেট নেওয়া হত, তার পর নাকি অনেক ছবি আর হতই না। সে অভিজ্ঞতাও ওঁর থেকে শুনেছি।’’

 Bengali director Atanu Ghosh remembers deceased actor Soumitra Chatterjee on his birthday

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচালক অতনু ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

অনেকেই হয়তো জানেন না, সৌমিত্রর সঙ্গে অতনুর পরিচয় পরিচালকের শৈশবে। পরিচালক বললেন, ‘‘উনি তো আমার মামার বন্ধু ছিলেন। শুরুতে কৃষ্ণনগরে ওঁরা একসঙ্গে কিছু দিন পড়াশোনা করেছিলেন। পরে আবার কলকাতায়।’’ কথা প্রসঙ্গেই এক মজার অভিজ্ঞতা শোনালেন অতনু। ছেলেবেলায় এক বার দক্ষিণ কলকাতার এক ওষুধের দোকানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ওষুধ কিনতে দেখেন অতনু। পরিচালক বললেন, ‘‘পরবর্তী সময়ে যখন ওঁকে ঘটনাটা বলি, তখন বললেন, ‘‘কী! ওষুধ কিনছিলাম? তা মাথা ধরার ওষুধ হতে পারে। সিনেমায় এটা প্রায়ই দরকার হয়।’’ এ রকম রসবোধ সত্যিই সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।’’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে এক জন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী হিসেবেই দেখেন অতনু। কারণ শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি নিজস্বতার ছাপ রেখে গিয়েছেন। অতনু বললেন, ‘‘বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ এবং শেষ পর্যন্ত তা নিয়ে লড়াই করা এবং পরিশ্রম সবাই করতে পারেন না। এতগুলো বছর ধরে ‘এক্ষণ’ পত্রিকা সম্পাদনা করা এবং লেখা চাইতে রীতিমতো লেখকদের কাছে পৌঁছে যাওয়া, এত বড় মাপের অভিনেতাকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।’’

অতনু পরিচালিত এবং জাতীয় পুরস্কারজয়ী ‘ময়ূরাক্ষী’ ছবিতে সৌমিত্র ছিলেন। অভিনেতার সঙ্গে এটাই ছিল পরিচালকের শেষ ছবি। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বললেন, ‘‘অনেকগুলো চরিত্র মাথায় এসেছিল, যেগুলো ওঁকে মাথায় রেখেই ভাবা। সেই ছবিগুলো আর কোনও দিন করতে পারব না ভেবে খারাপ লাগে।’’ পাশাপাশি নতুন পরিচালকদের উৎসাহ দেওয়ার প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করলেন অতনু। বললেন, ‘‘নতুনদের সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করেছেন। যে ছবিতে উনি নেই সেই ছবিও দেখতে পৌঁছে গিয়েছেন। আমার ‘অ্যাবি সেন’ ছবিতে উনি অভিনয় করেননি। কিন্তু দেখতে এসেছিলেন। এটাও কিন্তু শিক্ষণীয়।’’

অতিমারির সময় তখন ইন্ডাস্ট্রিতে শুটিং বন্ধ। বয়স্ক অভিনেতাদের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করার নিদান দেওয়া হয়েছে। এ দিকে সৌমিত্র পরিচালককে তাঁর বাড়িতে চলে আসতে বলতেন। অতনু বললেন, ‘‘বলতেন, ‘ধুর! তুমি চলে এস। কিচ্ছু হবে না!’’ ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ‘আমি সৌমিত্র’ নামের তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে সৌমিত্রর সঙ্গে অতনুর শেষ দেখা। পরিচালক বললেন, ‘‘চার দিন পরেই উনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন। শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গিয়েছেন। ডায়রিতে একটা পাতাও ফাঁকা ছিল না। সেখান থেকে একটা মানুষ যেন বুদবুদের মতো হারিয়ে গেলেন। তাই এখনও মনে হয় হয়তো আবার আমার ফোনটা বেজে উঠবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE