কলকাতা ছেড়ে ব্যবসা করতে হঠাত্ দিল্লি গেলেন কেন?
কলকাতায় আমি যে বছর শুরু করি, সে বছর সারদা হিট করে। ফলে বুঝতেই পারছেন, এখানে তখন আর কিছুই সম্ভব ছিল না। আর আমার বিজনেস পার্টনার বরুণ দিল্লিতে থাকে। ফলে আমার কাছে কলকাতা অথবা দিল্লি কোথাও একটা কাজ করতে হত।
কলকাতায় থাকলে ইন্ডাস্ট্রিতে বুম্বাদার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব কোথাও সমস্যার কারণ হয়েছিল?
বিজনেসের জায়গায় আমার মনে হয় না বুম্বাদার নাম কোথাও আসে। আমার কাছে ইটস নাথিং বাট আ বিজনেস। কলকাতা তো আমার কমর্ফট জোন। আমার কানেকশন সব এখানে। সেট-আপ এখানে। আমি কেন কলকাতা ছেড়ে ভারতের সবচেয়ে খারাপ জায়গা দিল্লিতে যাব? আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম। সামহাউ ওয়ার্ক করল না। খুবই আনফরচুনেট।
ডিসট্যান্স রিলেশনশিপের কারণ তা হলে একমাত্র কাজ?
অবশ্যই। আমি তো কলকাতাতেই করতে চেয়েছিলাম। হল না। সে জন্য আমি আমার স্বপ্নটা ড্রপ করে দেব?
দূরে থেকেও সম্পর্কে শান দেওয়া যায় বলছেন?
(হেসে) আজকের দিনে দিল্লি-কলকাতা তো দু’ঘণ্টার ব্যাপার।
এখন তা হলে বিজনেসের কাজে দিল্লিতেই থাকবেন?
অবশ্যই। আরও চার-পাঁচ বছর তো বটেই। যদি না তার পর আমি দেশ ছেড়ে চলে যাই।
আরও পড়ুন, ‘মায়ের সঙ্গে তো তুলনা হবেই, ওটা নিয়ে ভাবি না’
তা হলে দেশ ছেড়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা আছে!
অবশ্যই আছে। সেটা আমার ছেলের জন্য। এমনিতেই আমার একটা পরিকল্পনা রয়েছে বিদেশে ওকে হায়ার স্টাডিজ করানোর। কারণ ওর স্কুল থেকে ৯০ শতাংশ ছেলেমেয়েই বিদেশে যায়। তা ছাড়া ও ফুটবলার হতে চায়। বিদেশে আরও ভাল ভাবে সেটা করা যাবে।
‘শব্’-এর স্ক্রিপ্ট এত পছন্দ হল কী ভাবে?
প্রথম কারণ ওনির (এই ছবির পরিচালক)। ও এই ছবিটায় আমার হ্যাঁ বলার অন্যতম কারণ। আমি যখন চিত্রনাট্য পড়েছিলাম, তখন কোনও চরিত্র করছি না ভেবেই পড়েছিলাম। গল্পটা খুব ভাল লেগেছিল। আর ওনিরের ছবির একটা সিগনেচার মার্ক তো থাকেই।
ছবিতে আপনার চরিত্রটা কেমন?
আমার চরিত্র মানে, রায়না দিল্লির মেয়ে। ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ করে। সেলফ ডিপেন্ডেন্ট। কনফিডেন্ট একটা ক্যারেক্টার। তবে রহস্য আছে ওর মধ্যে। রায়নার একটা ব্যাক স্টোরি রয়েছে। সেটা কী এখনই আমি বলব না।ওর কিন্তু দিল্লিতে জন্ম, বড় হওয়া নয়। জীবন ওকে দিল্লিতে নিয়ে এসে ফেলেছে।
‘রায়না’র সঙ্গে অর্পিতার কোনও মিল রয়েছে?
দেখুন আমরা প্রফেশনাল। কোনও চরিত্রের যতটা ভিতরে ঢোকা যায় সেই চেষ্টা করি। আমি কী রকম, মানে আমার সঙ্গে চরিত্রের কতটা মিল, সেটা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা হেল্প করল ভাবি না।
আরও পড়ুন, চৌরঙ্গি লেনে হাতেখড়ি মায়ের, ম্যাকলাস্কিগঞ্জে যাত্রা শুরু কঙ্কনার
‘শব্’ কি সম্পর্কের গল্প বলবে?
সম্পর্কের জটিলতা বলতে যা বোঝায় গল্পটা তেমন ঠিক নয়। এটা লভ স্টোরি। টিপিক্যাল নয়। সেনসিটিভ লভ স্টোরি। আসলে দিনের শেষে সবাই ভালবাসতে চায় এবং ভালবাসা পেতে চায়। সেটারই বোধহয় ক্রাইসিস। যেটা হার্ডলি থাকে। আর না থাকলেই যত জটিলতা তৈরি হয়।
ভালবাসার সংজ্ঞা আপনার কাছে কী?
ডিপেন্ডিং অন ভালবাসাটা কার প্রতি…। (হা হা হা…) অ্যাজ আ মাদার হতে পারে, অ্যাজ আ ডটার হতে পারে…।
প্রসেনজিতের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত।
জীবনের প্রায়োরিটি অনুযায়ী ভালবাসার সংজ্ঞা…
আমার জীবনে প্রথম প্রায়োরিটি ছেলে, মিশুক। সেকেন্ড কোম্পানি। থার্ড অ্যাক্টিং, অর এনিথিং রিলেটে়ড টু পারফর্মিং আর্টস।
প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় কি প্রায়োরিটি লিস্টে আরও পরে?
ছেলে প্রায়োরিটি লিস্টে এল মানেই তো বুম্বাদাও চলে এল। তাই না? (হাসি) ইটস বাই প্রোডাক্ট।
ছবিতে আশিস বিস্তের সঙ্গে আপনার বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। তার আগে প্রিপারেশন কেমন ছিল?
প্রিপারেশনটা খুব মজার ছিল। আশিসের এক্সপিরিয়েন্স, বয়স দু’টোই আমার থেকে কম। আমি, ওনির আর ডিওপি সচিন স্যার একসঙ্গে বসে কী ভাবে শুট হবে ডিসকাস করতাম। ফাইনাল ক্যামেরা পজিশন অনুযায়ী কোরিওগ্রাফ হয়ে যাওয়ার পর ওনির আর আমি পুরোটা অভিনয় করেছিলাম। এমনও হয়েছে যখন ওনির আমার চরিত্রের অভিনয় করেছে, তখন আমি আশিসের চরিত্রটা করে দেখিয়েছি। ও পুরো দেখত। ওকে বলা হয়েছিল, তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। জাস্ট কপি পেস্ট।
আরও পড়ুন, ‘সংসার ছেড়ে চলে যাব ভেবেছিলাম’
রিহার্সালটা আপনাকেও হেল্প করেছিল?
অবশ্যই। এক এক জন ডিরেক্টরের এক এক রকম স্টাইল থাকে। কিন্তু আমি সব সময় রিহার্সাল করে নিতে চাই। এক জন অভিনেতার কাছে সবটা খুব পরিষ্কার থাকা উচিত।
প্রসেনজিত্ ‘শব’-এর ট্রেলার দেখেছেন?
আমি জানি না বুম্বাদা ট্রেলার দেখেছে কি না। এটা তো আমাদের কাজ। আর কাজ নিয়ে বাড়িতে আমরা আলোচনা করি না।
কিন্তু আপনার হিন্দি ডেবিউ বলেই প্রসেনজিত্ কী বলেছেন জানতে চাইবেন দর্শক।
হিন্দি ছবি বলে আমি নিজেই তো তেমন উত্তেজিত নই। যে ভাবে সব ছবি আমার কাছে ইমপর্ট্যান্ট। এটাও তেমন। বলিউড বলে আলাদা কোনও উত্তেজনা নেই।
‘শব্’-এর একটি দৃশ্যে অর্পিতা।
ছেলের জন্য মনখারাপ হলে কী করেন?
এই মন খারাপটা পাঁচ বছর ধরেই রয়েছে। কিচ্ছু করার নেই। এটা তো ওর ভালর জন্যই।
মিশুককে হস্টেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কি আপনাদের দু’জনেরই?
না! ওকে বাইরে পড়তে পাঠানোর ডিসিশনটা আমার ছিল।
আর প্রসেনজিত্?
বুম্বাদা আমাকে সাপোর্ট করেছিল।
কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
সেলিব্রিটির ছেলে হওয়ার জন্য কলকাতায় ওর ওপর সবসময় একটা এক্সট্রা প্রেশার ছিল। যেটা ওকে কোনও ভাবেই হেল্প করত না।
আরও পড়ুন, রাজ ও তার বর্তমান প্রেমিকার সম্পর্ক ভাঙার কারণ আমি! রাবিশ!
এখন তো ও বড় হয়েছে। হস্টেলে পাঠানোর জন্য কখনও দোষারোপ করে না আপনাদের?
ওর তো পড়াশোনাটা না করতে পারলেই ভাল হয় (হাসি)।…ও ক্লাস থ্রি থেকে বাইরে। ওর তখন আট বছর বয়স। আমি ওকে তখন থেকেই সে ভাবে সাইকোলজ্যিক্যালি তৈরি করেছিলাম। এখন ক্লাস সেভেন। ওর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা এখন কলকাতা এবং বাড়ি।
বাংলায় কবে আবার দর্শক দেখতে পাবেন আপনাকে?
সেটা তো এখানকার ইন্ডাস্ট্রির মানুষ ভাল বলতে পারবেন।
কোনও ছবির অফার নেই?
না।
এখনকার বাংলা ছবি দেখেন?
দিল্লিতে খুব একটা দেখা হয় না। অনেকের কাছেই ডিভিডি চাই আমি। পাইও অনেক সময়। তবে রিলিজের অনেকটা পরে হয়তো দেখতে পাই।
তা হলে কলকাতায় এলে বাংলা ছবি দেখেন?
কলকাতায় এলে ছেলের সঙ্গে ছবি দেখি। কিন্তু মিশুক বাংলাটা বুঝতে পারে না। ফলে বাংলা ছবি ফলো করতে পারে না। ও ছোট থেকে বাইরে থাকার জন্য বাংলা লিখতে বা পড়তে পারে না। বলতে পারে, তবে সেটাও বেসিক।
ছেলেকে নিয়ে এত কথা হল, ওর সঙ্গে আপনার একটা ছবি দেবেন প্লিজ?
না, প্লিজ…। ওকে আমি মিডিয়ার থেকে দূরে রাখতে চাই।
কিন্তু তৃষাণজিতের ছবি তো এর আগেও বেরিয়েছে মিডিয়ায়।
আমার দিক থেকে কখনও নয়। হয়তো বুম্বাদার দিক থেকে বেরিয়েছে (হাসি)।
ছবি: আশিস সাহা।
স্টাইলিং: অনিরুদ্ধ চাকলাদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy