Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Entertainment News

‘ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করতেই পারত, করেনি’

আগামী মাসে মুক্তি পাবে স্বাগত চৌধুরী পরিচালিত ‘নায়িকার ভূমিকায়’। বন্ধুত্বের গল্পে মধ্যমণি ইন্দ্রাণী দত্ত। দীর্ঘ বিরতির পর বছর দুয়েক আগে ‘বেলাশেষে’তে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার ব্রেক নিয়ে ছবিতে ফেরা। কেন এই বিরতি? নাচের শো-করতে যাওয়ার আগে ফুল মেকআপে বসেই মুখ খুললেন নায়িকা।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ১২:৩৮
Share: Save:

আগামী মাসে মুক্তি পাবে স্বাগত চৌধুরী পরিচালিত ‘নায়িকার ভূমিকায়’। বন্ধুত্বের গল্পে মধ্যমণি ইন্দ্রাণী দত্ত। দীর্ঘ বিরতির পর বছর দুয়েক আগে ‘বেলাশেষে’তে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার ব্রেক নিয়ে ছবিতে ফেরা। কেন এই বিরতি? নাচের শো-করতে যাওয়ার আগে ফুল মেকআপে বসেই মুখ খুললেন নায়িকা।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৫তে ‘বেলাশেষে’। দু’বছর পর ২০১৭-য় ‘নায়িকার ভূমিকায়’। কোনটা কামব্যাক?
কামব্যাক বললে সেটা ‘বেলাশেষে’। ওই ছবিতে আমার চরিত্রটা খুব বড় কিছু ছিল না। কিন্তু, ছবিটা আমাকে যে মাইলেজ দিয়েছে বা শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতাদির সান্নিধ্যে আসাটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।

আর ‘নায়িকার ভূমিকায়’?
এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম লহনা। নারীকেন্দ্রিক গল্প। সাধারণ পরিবারের গৃহিণী। সংসারের সব দায়িত্বের পাশাপাশি নিজের আইডেনন্টিটি খোঁজে সে। ওর বান্ধবী খুব বড় অভিনেত্রী। কিন্তু ওর কথা বললেই সকলে খুব হিউমিলিয়েট করে। তার মধ্যেও বন্ধুর খোঁজ চালিয়ে যায় লহনা। এর পর ওর কাছে একটা অফার আসে। তখন ও বুঝতে পারে, যারা ওকে হিউমিলিয়েট করতেন তারাই আসলে ওর ওয়েল উইশার। তাদের বক্তব্য, বান্ধবীকে লাঠি করে ওকে বড় হতে হবে কেন? নিজের মতো করে বড় হোক।

ছবিটার ইউএসপি কী?
আসলে এমন অনেক মহিলা আছেন যারা হয়তো একটা বয়সের পর ক্রাইসিসে ভোগেন। ভাবেন, আমি কী পেলাম? সারা জীবন তো সংসারই করে গেলাম। লহনাকে দেখে অনেকে ইন্সপায়ার্ড হবেন। এটা একটা সাধারণ মেয়ের জার্নি। তাই বলব, সকলের দেখা উচিত, ভাল লাগবে। গল্পটাই অন্য রকম।

কিন্তু বেলাশেষের আগে ইন্দ্রাণী কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন?
ইন্দ্রাণী তো হারায়নি। কাজ করার জন্য তৈরি ছিলাম। কিন্তু আমার কাছে যে অফার আসছিল সেগুলো পছন্দ হচ্ছিল না।

আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’

শুধু এটাই কারণ?

দেখুন, গত ১৫ বছর আমি একটা ডান্স ট্রুপ চালাচ্ছি। দেশে-বিদেশে এটা খুব সাকসেসফুল। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে ‘বাজিরাও মস্তানি’ সব কিছুর সঙ্গেই নাচ করি। সেখানে আমিই নায়িকা। আমার গ্রুপের বাকিরা আমাকে সাপোর্ট করে। ফলে আমি এই নায়িকা ইমেজটা এত তাড়াতাড়ি ভাঙতে চাই না। হতেই পারে, এখন কারও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করার বয়স হয়েছে আমার। কিন্তু দর্শকরা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে একজন নায়িকা নাচ করছেন, এ ভাবে গ্রহণ করে চলেছেন। এই জায়গাটা আমি এত তাড়াতাড়ি হারাতে চাই না। অনেক চরিত্র এসেছে আমার কাছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এই নায়িকা চরিত্রটা অত ভাল নয়, বা এটা নায়িকা চরিত্রই নয়। সে জন্য অনেক অফার রিফিউজ করেছি।

ভাল অফার না পাওয়ার জন্য রাগ হয়?
না, রাগ বলব না। তবে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ক্ষোভ তো আছেই। অনেকটা সময় চলে গেছে আমার। যে সময়টা আমাকে কাজে লাগানো উচিত ছিল। সে সময় শুধু ‘সেদিন চৈত্রমাস’ নয়, ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’, ‘স্বপ্ন নিয়ে’, ‘মিত্তির বাড়ির ছোট বউ’— বেশ কিছু হিট ছবি ছিল আমার। ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করেনি। করতেই পারত। আমি মোটেই খারাপ অভিনেত্রী নই। নিজেকে যথেষ্ট মেনটেনও করে চলি।

আর অভিমান?
অভিমান হয়তো কারও কারও ওপর আছে। তবে কারও নাম করে বলতে চাই না। কোনও কোনও কাজ দেখে মনে হয়েছে এটা আসলে আমার কাজ ছিল। এই রোলটা আমাকে দেওয়া উচিত ছিল।

কারও নাম শেয়ার করতে চান না কেন?
আসলে যাদের ওপর অভিমান তারা সকলেই আমার খুব কাছের লোক। সে জন্যই বলব না। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে আমাকে যদি তোমার প্রয়োজন হয় তুমি ঠিক আমাকে বলবে। আমার তো তোমার কাছে কাজ চাইবার কোনও দরকার নেই।

প্রায় ১৫ বছর ফ্লোরে না থাকতে থাকতে মনখারাপ হত?
মনখারাপের পিছনে আমি সময় দিইনি। ছবি দেখতে গিয়ে আমার অনেক বার মনে হয়েছে, এটা আমার রোল, এটা আমি করতে পারতাম। কিন্তু আমার নাচ, তার প্রোডাকশন, কস্টিউম— সব কিছু নিয়ে আমি ব্যস্ত থেকেছি।

আরও পড়ুন, ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই’

অভিনয়কে ভুলে থাকার জন্য ব্যস্ততা?

একেবারেই নয়। আমি প্রচুর নাচের অফার পেয়েছি। আমার প্রোডাকশনের জন্য প্রচুর সময় দিতে হয় আমাকে। আর তা ছাড়া সংসারটাও খুব গুছিয়ে করি আমি। হতে পারে আমি পর্দায় আসিনি। কিন্তু মঞ্চে এসেছি বারংবার।

‘সেদিন চৈত্রমাস’-এর ইন্দ্রাণীকে যে দর্শক মিস করেন, তাদের কী বলবেন?
নাচের শো করতে গিয়ে এটা খুব ভাল বুঝতে পারি আমি। গ্রিনরুমে অনেকে দেখা করতে এসে বলেন, কেন আপনাকে দেখতে পাই না? আপনার পরের ছবিটা কী? সেটাতে আমার আনন্দও যেমন হয়, দুঃখও হয়। সবাইকে তো সব কথা বলা যায় না। আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। এখন ভাল কাজের অফার আসছে। করছি। অনেকটা সময় শুধু মাঝখানে চলে গেল।

‘বেলাশেষে’র কামব্যাকটার জন্য কাকে ক্রেডিট দেবেন?
দেখুন, শিবু যখন ‘বেলাশেষে’ আমাকে অফার করেছিল তখন আমি কোনও কাজ করছিলাম না। ও যে আমাকে ভেবেছিল, সেই মুহূর্তটা আমার কাছে খুব আনন্দের ছিল। গল্প শোনার পর আমার চরিত্রটা খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। অনেক দিন পর কাজ করতে গিয়ে সব কিছুই নতুন মনে হচ্ছিল যেন। শিবু আমার সব কিছু ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই ওর প্রতি কৃতজ্ঞতাটা আমার ভীষণ রয়েছে।

ছোটপর্দায় কাজ করার কথা কখনও ভাবেননি?
ছোটপর্দার অফারও এসেছে। কিন্তু ছোটপর্দা বলে করিনি, বড়পর্দা হলে করতাম, বিষয়টা তেমন নয়। আমার মনের মতো হয়নি বলে আমি রিফিউজ করেছিলাম।

এখন আর কোনও কাজ করছেন?
সঞ্জয় গুহর পরিচালনায় ‘সেদিন বসন্ত’-এ কাজ করছি এখন। এখানেও আমি নায়িকা। আর আমার ডান্সারেরই চরিত্র।

‘নায়িকার ভূমিকায়’ মেয়ের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
অবশ্যই খুব ভাল। জয় সরকারের সুরে আমার মেয়ে রাজনন্দিনী গান গেয়েছে এই ছবিতে। একটা ফাংশনে জয়দা ওর গান শুনেছিলেন, ভাল লেগেছিল। তবে আমি আশাও করিনি রাজনন্দিনী এত তাড়াতাড়ি সুযোগ পাবে।

মেয়ের পারফরম্যান্স নিয়ে কি টেনশনে আছেন?
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর টেনশন ওর আছে বোধহয়। আমার সেটা নেই। কারণ ওর গানটা শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে। জয়দা খুশি। সে জন্যই খুব একটা টেনশনড নই। ও কোথাও একটা কম্পিটিশনও ফিল করছে বোধহয়। এত বড় গায়ক-গায়িকাদের মাঝে গেয়েছে তো… আর ভাল কিছুর জন্য টেনশন হওয়াটা তো ভালই।

ছবি: অনির্বাণ সাহা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE