Advertisement
১১ নভেম্বর ২০২৪
WB Part Time Teacher Recruitment

সরকারকে আঁধারে রেখেই স্কুলে বেনিয়মের নিয়োগ, আংশিক শিক্ষক নিতে অনুমতি বাধ্যতামূলক

২০০৫ সালে স্কুলগুলি পরিচালনার জন্য ‘স্কুল অফ কন্ট্রোল অ্যাক্ট’ তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য উল্লেখ করা রয়েছে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে কিছু স্কুল নিজেরাই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সে ব্যাপারে শিক্ষা দফতরকেও অন্ধকারে রাখা হচ্ছে।

প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ১৬:১১
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে রয়েছে স্কুলগুলিতে। শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন স্কুলগুলি আংশিক শিক্ষক নিয়োগের উপরে নির্ভরশীল ছিল। এ বার আংশিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা দফতরের অনুমতি বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতিক জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা (ডিআই) তাঁদের অধীনে থাকা স্কুলগুলিকে সেই নির্দেশই পাঠিয়েছেন। আর এই নির্দেশের ফলে স্কুলগুলিতে শিক্ষক-ঘাটতি আরও চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ।

শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আইন রয়েছে, সেই আইনকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি মেটাতে নিয়োগ করা হচ্ছে। শিক্ষা দফতর বা ডিআই-দের অন্ধকারে রেখেই। সম্প্রতি বেশ কিছু এই ধরনের আংশিক শিক্ষক নিয়োগের ফলে আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে। তাই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ২০০৫-সালে স্কুলগুলি পরিচালনার জন্য ‘কন্ট্রোল অফ এক্সপেনডিচার অ্যাক্ট’ তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য উল্লেখ করা রয়েছে। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে কিছু স্কুল নিজেরাই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সে ব্যাপারে শিক্ষা দফতরকেও অন্ধকারে রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগের পরিবর্তে স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের দাবি আমরা করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই বিদ্যালয়গুলি নিজেদের খরচে আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই মুহূর্তে শিক্ষা দফতর যদি তার উপরেও বাধা-নিষেধ আরোপ করে, তাহলে বিদ্যালয় শিক্ষা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়বে। বেসরকারি শিক্ষা আরও বেশি উৎসাহিত হবে।”

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালন সমিতির অনুমোদন নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকা আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে এই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছে। পরে তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষা দফতর অন্ধকারে থাকায় এ নিয়ে কোন‌ও পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছে না।

‘কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠন অনেক স্কুলেই পার্ট টাইম শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল। কারণ দীর্ঘদিন নিয়োগ নেই, তার উপরে বদলিজনিত কারণে অনেক স্কুলেই উচ্চমাধ্যমিকের স্থায়ী বিষয় শিক্ষক নেই। ফলে ছাত্র স্বার্থে পার্ট টাইম শিক্ষকই একমাত্র ভরসা।”

শুধু আংশিক শিক্ষক নেওয়া নয়। বহু ক্ষেত্রে যে পারিশ্রমিক বা বেতন শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে, তা এত কম যে তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিতর্ক। অতিরিক্ত আংশিক শিক্ষক নিয়োগের ফলে স্কুলগুলিতে আর্থিক পরিস্থিতির উপরেও চাপ তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, সরকার আইনি বৈধতা উল্লেখ করছেন, কিন্তু স্কুলগুলিকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ২০২২ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রধান শিক্ষক ও সহ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছিল। দীর্ঘ দু’বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও নিয়োগের বিধি পর্যন্ত তৈরি হয়ে ওঠেনি বলে শিক্ষকমলের একাংশের বক্তব্য।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “বর্তমানে গ্রামবাংলায় স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত যা রয়েছে, তাতে স্কুল চালানো খুবই কষ্টকর। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে আংশিক শিক্ষক নিয়োগের পথে হাঁটছে স্কুলগুলি। গত দশ বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নেই। যার ফলেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।”

শিক্ষকের অভাবে বহু স্কুল বন্ধের মুখে। শিক্ষকের ঘাটতির মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় আংশিক শিক্ষকের উপর ভরসা করেই উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় স্কুলগুলিতে আংশিক শিক্ষকদের কম বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির জটিলতাকে বিচার করে শিক্ষকমলের একাংশের বক্তব্য, শিক্ষক নিয়োগ না হলে এই সমস্যা সমাধান করা মুশকিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Part Time Teacher Recruitment wb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE