—প্রতীকী চিত্র।
অধিকার বস্তুটি অতি বিষম। কারও অধিকার কায়েম করতে গেলে অন্য কারও অধিকার খর্বিত হচ্ছে, এমন ঘটনা দুর্লভ নয়। এই কারণেই সভ্য বিশ্বে আইন-আদালতের অভিভাবকত্বের দরকার হয়ে পড়ে। তেমনই এক সঙ্কট ঘনিয়ে উঠেছে এই মুহূর্তে, ভারতে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক বিষয়ে আইনি অবস্থানটি নিয়ে। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে ‘পবিত্র বন্ধন’ হিসাবে জোরদার করতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ এসেছে। সুপারিশটি জানিয়েছে দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট। প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগেই পরকীয়াকে ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় ঢোকানোর বিপক্ষে রায় দিয়েছিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত— সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই এই নব-আনীত সুপারিশ। বিরোধী নেতারা স্বভাবতই প্রবল বিরোধিতা করেছেন এই প্রস্তাবের। সঙ্গত ভাবেই এর মধ্যে তাঁরা ব্যক্তি-অধিকারের মধ্যে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দেখছেন। কোনও মতেই এমন অধিকারদলন মানা যায় না— এর মাধ্যমে সমাজকে রক্ষণশীলতার মোড়কে মুড়ে ফেলার বন্দোবস্ত হচ্ছে, এই তাঁদের যুক্তি।
যুক্তিটি ঠিক। তবে বিরোধীদের আরও খানিক সতর্ক হতে হবে। যদি কেউ বিবাহিত ব্যক্তির বিবাহ নামক চুক্তির অধিকারসীমাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তার মধ্যে একটি সূক্ষ্মতর যুক্তিও প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, দিল্লি হাই কোর্টে কিছু মাস আগেই পুরুষের পরকীয়া প্রসঙ্গে বিবাহিতা নারীর আইনি সুরক্ষার প্রশ্নটি উঠে আসায় দস্তুরমতো জটিল এক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবং হাই কোর্টের রায় ছিল বিবাহিতা স্ত্রীর পক্ষেই। রায়টির মূল কথা ছিল, বিবাহিতা নারী যদি তাঁর স্বামীর পরকীয়া প্রমাণ করতে পারেন, তাঁর অধিকার স্বামীর ব্যক্তি-অধিকারের থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে। হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, কেবল ব্যক্তি-অধিকারের নৈতিকতার কাচ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেই চলবে না, হিন্দু বিবাহ আইনে স্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক যে সব অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, তার মাধ্যমে এই ধরনের বিষয়ের সুবিচার প্রয়োজন। পরকীয়ার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া অবশ্যই সহজ নয়, কিন্তু প্রমাণ হাতে পেলে কী করণীয়, তা নিয়ে তবে আপাতত ভারতীয় বিচারবিভাগের বিভিন্ন অবস্থানের মধ্যে একটি ধোঁয়াশা ইতিমধ্যেই লক্ষণীয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ন্যায়সংহিতার নতুন প্রস্তাবটি বিচার্য। কোনও বিবাহিত সম্পর্কে স্ত্রী বা স্বামীর অধিকার কতখানি খর্ব হলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তার একটি পরিষ্কার নির্দেশরেখা দরকার। নতুবা এক পক্ষের অধিকার রক্ষার যুক্তিতে ব্যক্তি-নাগরিকের চলাচল ও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার এমন ভাবেই বিক্ষত হতে পারে, যা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির বিরোধী। প্রয়োজন— স্পষ্ট ও গভীর আলাপ-আলোচনার। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য সরকার পক্ষের শোনা দরকার। কিন্তু তেমন কোনও পরিবেশ বা অবকাশ ভারতের বর্তমান সংসদ অধিবেশনে আছে কি? না কি, ‘দণ্ডসংহিতা’ নামক সংশোধিত ফৌজদারি বিধি পাশ করানোর হুড়োহুড়িতে কথাবার্তা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি গুরুতর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিগুলি জলাঞ্জলি দেওয়াই এখন সাব্যস্ত হয়েছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy