E-Paper

‘জলবায়ু’হীনতায়

জুনের শুরুতে টরন্টোর বাতাসের গুণমান বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ বলে চিহ্নিত করেছিল আইকিউ-এয়ার প্রদত্ত পরিসংখ্যান। স্বাভাবিক ভাবেই কানাডায় আয়োজিত জি৭ সম্মেলনেও উঠে এসেছে দাবানলের প্রসঙ্গ।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ০৬:৪০
Share
Save

গত এক দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাবানলের সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি উদ্বেগে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে। এই বছরের গোড়াতেই যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায় অন্তত ১৪টি বিধ্বংসী দাবানলে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সদ্যসমাপ্ত জি৭ সম্মেলনের আয়োজক দেশ কানাডাও এখন পুড়ছে দাবানলে। উত্তর অন্টারিয়ো, তৃণভূমি অঞ্চল, এবং দেশের পূর্বভাগ জ্বলতে থাকায় টরন্টোর আকাশ ঢেকেছে ধোঁয়ায়। জুনের শুরুতে টরন্টোর বাতাসের গুণমান বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ বলে চিহ্নিত করেছিল আইকিউ-এয়ার প্রদত্ত পরিসংখ্যান। স্বাভাবিক ভাবেই কানাডায় আয়োজিত জি৭ সম্মেলনেও উঠে এসেছে দাবানলের প্রসঙ্গ। সম্মেলনের শেষ দিনে প্রকাশিত ‘ক্যানানস্কিস ওয়াইল্ডফায়ার চার্টার’-এ সদস্য দেশগুলি ঐকমত্যের ভিত্তিতে বলেছে, এই ক্রমবর্ধমান দাবানল বিপন্ন করছে জনজীবন, মানবস্বাস্থ্যে ফেলছে বিরূপ প্রভাব, ধ্বংস করছে ঘরবাড়ি, বাস্তুতন্ত্র, করদাতাদের উপর প্রতি বছর চাপছে কোটি কোটি টাকার আর্থিক বোঝা। প্রতিকার কোন পথে? সনদ জানাচ্ছে, দেশগুলির সম্মিলিত উদ্যোগ দিয়ে দাবানলের ঘটনা রোধ করা, লড়াই করা এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার কথা। কোন ক্ষেত্রগুলিকে এই কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, গবেষণা এবং স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কী ধরনের পদক্ষেপ করা হবে, তাও বলা হয়েছে।

গত জি৭ সম্মেলনগুলিতে দাবানলের প্রসঙ্গ বারকয়েক আলোচিত হলেও তা এত বিস্তারিত ছিল না। সুতরাং, এই বছরটি কিছু অন্য রকম। বিশেষত, কানাডার ক্ষেত্রে এই সনদ গুরুত্বপূর্ণ। বছরের অর্ধেকও পেরোয়নি, অথচ এরই মধ্যে সে দেশের ৩৭ লক্ষ হেক্টর জমি পুড়ে গিয়েছে দাবানলের গ্রাসে। এই ক্রমবর্ধমান বিপদ কমাতে সদস্য দেশগুলি সুস্থায়ী অরণ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রিত বন পোড়ানোর মতো দেশজ পদ্ধতির কথা বলছে। কিন্তু আশ্চর্য, যৌথ ঘোষণাপত্রের কোথাও ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ এক বারও উল্লিখিত হয়নি। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যে সাম্প্রতিক কালে দাবানলের মাত্রা, সংখ্যায় এমন বাড়বৃদ্ধি, অসময়ে তার আগমন— সে কথা অজানা নয়। পরিবেশবাদী সংগঠন ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, গ্রিনপিস কানাডা-র বিশেষজ্ঞরা তাই তুলোধোনা করেছেন এই সম্মেলনকে। জানিয়েছেন, সম-মনোভাবাপন্ন দেশগুলির জোটবদ্ধ হওয়ার মানে কী, যদি না তাঁরা সভ্যতার সঙ্কটের উল্লেখমাত্র না করে। সম্মেলনের অগ্রাধিকারের তালিকাতে জলবায়ু পরিবর্তন বা ধাপে ধাপে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের মতো বিষয়ের জায়গা না পাওয়ার মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ছায়া দেখছেন অনেকেই। ট্রাম্পের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর অগুনতি জলবায়ু-বিরোধী নীতির পাশাপাশি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে মুছে গিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন শব্দটি, গবেষণায় কমানো হয়েছে অনুদান। অনেকে আশা করেছিলেন, সম্মেলন ছেড়ে ট্রাম্পের দ্রুত প্রস্থানে কানাডা-সহ অন্য দেশগুলি এগিয়ে আসবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা এবং নেতৃত্বদানে, যাতে তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে সদিচ্ছাটি প্রকাশ পায়। তা হয়নি। বরং স্পষ্ট, সদস্য দেশগুলি এ বিষয়ে ট্রাম্পের উল্টো পথে এগোতে রাজি নয়। গত বছর আজ়ারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত সিওপি২৯’এ বোঝা গিয়েছিল, উন্নত বিশ্ব এই সঙ্কটের দায় গ্রহণ এবং প্রতিশ্রুতি পালনের পথ থেকে ক্রমেই সরে আসছে। সাম্প্রতিক জি৭ বৈঠক সেই ছবি আরও স্পষ্ট করল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Canada G7 Meet Atmosphere

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।