Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

খাবার দেন ইব্রাহিমভাই

আমরা অমরনাথ দেখে বৈষ্ণোদেবী যাচ্ছিলাম। বালতাল ক্যাম্প থেকে যাওয়ার কথা কাটরা। পথে পড়ে শ্রীনগর। তখন পদে পদে আটকানোর আশঙ্কা ছিল। ইব্রাহিমভাই নানা রাস্তা চেনেন। তিনিই আমাদের বাসটি সেই সব রাস্তা দিয়ে জোরে চালিয়ে অনেকটা সময় বাঁচিয়েছিলেন।

পুণ্যার্থী: অমরনাথের পথে দীপকবাবু। নিজস্ব চিত্র

পুণ্যার্থী: অমরনাথের পথে দীপকবাবু। নিজস্ব চিত্র

দীপক শীল
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

সেলিম মির্জার কথা শুনে মনে পড়ে গেল ইব্রাহিমভাইয়ের কথা।

আমরাও গিয়েছিলাম অমরনাথ। অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপরে জঙ্গিদের গুলি চালানোর মাত্র দু’দিন আগেই ওই একই রাস্তা দিয়ে এসেছি আমরা। তারপরে শুনলাম, জঙ্গিদের কবলে পড়ার পরে সেলিম মির্জাই কোনওমতে বাসটিকে নিয়ে জোরে চালিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন বলেই প্রাণহানি কম হয়েছে। তখনই মনে পড়ে গেল, আমাদের চালকও অনেকটা একই রকম ভাবে গাড়ি চালিয়েছিলেন।

আমরা অমরনাথ দেখে বৈষ্ণোদেবী যাচ্ছিলাম। বালতাল ক্যাম্প থেকে যাওয়ার কথা কাটরা। পথে পড়ে শ্রীনগর। তখন পদে পদে আটকানোর আশঙ্কা ছিল। ইব্রাহিমভাই নানা রাস্তা চেনেন। তিনিই আমাদের বাসটি সেই সব রাস্তা দিয়ে জোরে চালিয়ে অনেকটা সময় বাঁচিয়েছিলেন। তবে রাত দু’টো নাগাদ শ্রীনগরে পৌঁছে আমাদের দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গোটা রাস্তাতেই যে দিকে তাকিয়েছি জলপাই রঙের উর্দির কড়া পাহারা। পায়ে পায়ে খাকি রঙের উর্দিধারীও কম নেই। হাতে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। দেখে মনে হয়েছে নিরাপত্তা কত নিশ্ছিদ্র। শ্রীনগরে যখন পুলিশ ছাড়ল, তখন সকাল হয়ে গিয়েছে, বনধ-কার্ফুর মুখে পড়তে হল তীর্থযাত্রীদের। পরে শুনলাম সেনা এবং পুলিশের সমন্বয়ের অভাবেই রাতের বেলায় গাড়ি আটকানো ছিল। নিরাপত্তার দোহাই দিয়েই তীর্থ যাত্রীদের যে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়, তাও বুঝলাম অমরনাথে এসেই।

শ্রীনগরে পৌঁছে প্রথমে বালতাল ক্যাম্পে যেতে হয়। সেখানে সকলের ‘পাশ’ পরীক্ষা করা হয়। ব্যাপক তল্লাশি হয়। সে সব তল্লাশি সেরে বালতাল ক্যাম্পে পৌঁছে কিন্তু কয়েক জন তীর্থযাত্রীর মুখে যা শুনলাম, তাতে বুঝলাম পুরোটাই ‘বাবা অমরনাথ ভরসা’। কয়েকজন তীর্থযাত্রী জানালেন, তাঁদের সঙ্গীদের কয়েকজন ‘পাশ’ ছাড়াই ক্যাম্পে চলে এসেছেন। অমরনাথ যাত্রার মতো পদে পদে হামলা, অর্ন্তঘাতের আশঙ্কা যেখানে সেখানেও ‘ম্যানেজ’ করে নিলে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে ঢুকে যাওয়া জঙ্গিদের জলভাত। এর থেকে বড় ফস্কা গেরো আর কী হতে পারে?

ইব্রাহিমভাইকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি একদিন আমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েও খাইয়েছেন। আর একজন যিনি আমাদের গুহার নীচে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, পুজোর সামগ্রী জোগাড় করে দিয়েছিলেন। দু’জনেই মুসলিম। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের সাহায্য-সুবিধেয় তারা কতটা আন্তরিক তা অমরনাথে না এলে বুঝতাম না। এই সময়ে এটাও সকলের জানা প্রয়োজন।

প্রতিবেদক অমরনাথ যাত্রী

অন্য বিষয়গুলি:

Amarnath Yatra Terrorist Attack Devotee অমরনাথ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy