প্রথা: অনুষ্ঠানের ফাঁকেই ঐতিহ্য মেনে ঘুরল চরকা। নিজস্ব চিত্র
একটা পা জন্ম থেকে ছোট। তা বলে বরাবাজারের জিলিং গ্রামের তরুণী পার্বতী মাহালি বসে নেই। তিনি নিজে প্রতিবন্ধী হলেও এখন প্রতিবন্ধীদের ট্রেনিং স্কুলে তিনিই দিদিমণি। তিনিই অন্য মেয়েদের হাতে ধরে শেখাচ্ছেন কী ভাবে নকল গয়নায় পাথর বসাতে হয়। তাঁর কাছে কাজ শিখছেন বোরো থানার জাওড়া গ্রামের ক্ষীণদৃষ্টির লক্ষ্মী গড়াই, দুর্ঘটনায় পায়ের পাতা উল্টে যাওয়া বরাবাজারের লাকা গ্রামের গীতাঞ্জলী মাহাতো, লক্ষণপুর গ্রামের হাতের সমস্যা থাকা দীপিকা মাহাতোরা।
শুধু নকল গয়নাই নয়, খাম তৈরি থেকে মেশিনে মশলা গুঁড়িয়ে প্যাকেটজাত করা, খাতা তৈরির কাজও হাতে-হাতে শিখছেন ওঁদের মতো অনেক প্রতিবন্ধী মেয়ে। আর ওঁদের স্বাবলম্বী করার পথ দেখাচ্ছে মানবাজার থানার মাঝিহিড়া বুনিয়াদি আশ্রম।
ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে উজ্জ্বল মানভূম জেলায় সত্যাগ্রহীদের অন্যতম কেন্দ্র এই আশ্রমে গত কয়েক বছর ধরে এই কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। রবিবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সেই আশ্রমে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তেরা তাঁদের হাতের কাজের নমুনা পেশ করলেন। একই সঙ্গে দিনভর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলল।
মাঝিহিড়া আশ্রমের কার্যকরী সম্পাদক প্রসাদ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে থেকে কাজ শুরু করলেও ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী গড়তে পুরোদমে আশ্রমে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। জেলার তিনটি ব্লকের প্রতিবন্ধীদের এখানে বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীরা গোটারি, পোল্টি প্রভৃতি প্রকল্পও করছেন
প্রসাদবাবু জানান, বিভিন্ন বিষয়ে এ পর্যন্ত ৮৪ জন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। বর্তমানে ৩০ জন গয়নার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দৃষ্টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অপারেটিভ গড়া হয়েছে। কাঁচামালের জন্য এখান থেকে টাকা পাওয়া যায়। পরে লভ্যাংশ রেখে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে মানবাজার ১ ও ২ এবং বরাবাজার ব্লকের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই জীবিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছে। আগামী দিনে এর পরিধি বাড়ানো হবে।
এ দিন উদ্বোধনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হেমন্ত রজক বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্যে এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এই জেলায় বিরল।’’
ব্যাঙ্কিং সংস্থার পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের রুরাল সেলফ এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যাতে প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য আমি নিজেও কয়েকদিন এখানে থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’’
অনুষ্ঠানে মানবাজার মহকুমা অফিসের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমানি, বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি নিলাদ্রী সরকার, বামনি মাঝিহিড়া সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালি, মানভূম কলেজের অধ্যাপক প্রদীপ মণ্ডল, মানবাজারের সিআই (পুলিশ) সুবীর কর্মকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy