Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫

বদলাচ্ছে ছৌ, আসছে নয়া পালা

পুরুলিয়ার ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে এই শিল্পের সংস্কারের লক্ষ্যেই ছ’বছর আগে এই উৎসবের পথচলা শুরু। লোকশিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এসেছিল সেই কাজে।

আকর্ষণ: বামনিয়া গ্রামে ছৌ-ঝুমুর উৎসবে। ছবি: সুজিত মাহাতো

আকর্ষণ: বামনিয়া গ্রামে ছৌ-ঝুমুর উৎসবে। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

শীত পড়লেই বামনিয়া ময়দান যেন শুনতে পায় ধামসা-মাদলের বোল। মনে হয়, ছৌশিল্পীর পায়ের ধাক্কায় যেন ধুলো উড়ছে। কানে ভেসে ঝুমুলিয়ার গলা। বছরের পর বছর ধরে এই হাড় কাঁপানো রাতেই আলোর নীচে ঝালদা ২ ব্লকের এই মাঠেই জমে ওঠে ছৌনাচের আসর। আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে, সাত দিনের এই উৎসব।

পুরুলিয়ার ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে এই শিল্পের সংস্কারের লক্ষ্যেই ছ’বছর আগে এই উৎসবের পথচলা শুরু। লোকশিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এসেছিল সেই কাজে। সংস্থার তরফে উৎপল দাস বলছেন, ‘‘২০০৫ সালে জেলার ছৌ দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে গিয়ে দেখি তাঁদের সংখ্যা একেবারে তলানিতে। যে ক’টি দলের নাম রয়েছে, তারাই শুধু অনুষ্ঠানের বায়না পায়, বাকিদের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। ছৌ-ঝুমুর শিল্পীদের এক ছাতার তলায় এনে লোকশিল্পের এই ধারার সংস্কারের ভাবনার সেই সূত্রপাত।’’

শিল্পী বাঁচলে, তবেই শিল্প বাঁচবে— এই আপ্তবাক্যকে সামনে রেখে বছর ছয়েক ধরে তাঁরা শুরু করেছেন এই উৎসবের। উৎপলবাবু জানাচ্ছেন, এক একটি পালা করে শিল্পীরা একশো-দেড়শো টাকার বেশি পেতেন না। ফলে রক্তের টানে নাচলেও তাতে পেশাদারিত্বের ছাপ ছিল না। সে কারণে শিল্পীদের দক্ষতা বাড়াতে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছেন তাঁরা।

জেলার লোকসংস্কৃতি গবেষক সুনীল মাহাতো বলেন, ‘‘আগে দেখতাম জেলার বিভিন্ন জায়গার ছৌ ও ঝুমুর শিল্পীরা গুরুর কাছে শিক্ষা নিয়ে মঞ্চে নামতেন। গুটি কয়েক দল ছাড়া এখন সে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে ক’জন আর শেখে? অনেকে তো পেটের টানে ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছেন।’’ তাঁর আক্ষেপ, যাঁরা এখনও চর্চা করছেন, তাঁদের কারও কারও সেই নিষ্ঠা নেই। হয়তো পৌরাণিক পালা চলছে, তার মধ্যে অন্য প্রসঙ্গের ঝুমুর গান ঢুকিয়ে জোলো করে দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে জেলার অনামী দলগুলি কোনও বায়নাই পাচ্ছিল না।

এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন দলের শিল্পীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি কর্মশালা করেছে। সেখানে তাঁদের বোঝানো কী ধরনের রং ও পোশাক ব্যবহার করা উচিত তা বোঝানো হচ্ছে। পালার উপস্থাপনেও সংস্কার যে প্রয়োজন, তাও জানানো হচ্ছে।

উৎসবের উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন, ‘‘প্রথম দিকে, জেলায় ছৌ দলের সংখ্যা ছিল কমবেশি ১২৫। এখন সেই দলের সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। শিল্পীরা রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্প থেকে ভাতা, অনুষ্ঠানের ডাক পাচ্ছেন। রাজ্যের বাইরে থেকেও ডাক আসছে। বেড়েছে শিল্পীদের পারিশ্রমিকও। এই বদলের স্বপ্ন নিয়েই তাঁরা পথচলা শুরু করেছিলেন।

বান্দোয়ানের ছৌ শিল্পী শম্ভুনাথ কর্মকারও বলছেন, ‘‘এই উৎসব আমাদের জীবনধারা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। আমরা এখন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। বান্দোয়ানের আশপাড়ায় আমরা ছৌয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছি। যেখানে ছোটরা শিখছে।’’ আর এক শিল্পী বীণাধর কর্মকার জানান, এখন তাঁরা নতুন নতুন পালা করছেন। বাঘমুণ্ডির শিল্পী রথু কুইরী বলেন, ‘‘আমাদের দলের নাম ছিল না। কিন্তু এখন আমরাও বাইরের রাজ্যে নাচতে যাচ্ছি।’’

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘শিল্পীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গী এই বদলে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chhou-Jhumur Festival reform
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy